পর্নো অভিনেত্রীর কাছে ট্রাম্প ধরা!

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

পর্নো অভিনেত্রী স্টোর্মি ডানিয়েলস বলে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য অর্থও পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে মামলাও করেছেন। এবার বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর চাহিদা বেড়ে গেছে।

এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসউইম্যান ম্যাক্সিন ওয়াটার্স বলেছেন, রাশিয়া তদন্তে রবার্ট মুলার ধরতে না পারলেও স্টোর্মি ডানিয়েলসের কাছে ঠিকই ধরা খাবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ম্যাক্সিন ওয়াটার্স ৬০ জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের একজন। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ভোট দিয়েছিলেন।

স্টোর্মি ডানিয়েলসের প্রকৃত নাম স্টেপেনি ক্লিফোর্ড। ১০ মার্চ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আগের চেয়ে পেশাগত দিক থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। আগে মাসে একটা নাচের আয়োজনে অংশ নিতেন। এখন তাঁর প্রতি মাসে নাচের তিনটি শো করতে হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক।’

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে স্লোগান শুরু করেছেন, তার পাল্টা স্লোগান দিয়ে স্টোর্মি বলেছেন, ‘মেক আমেরিকা হর্নি এগেইন’—এই স্লোগান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চষে বেড়াচ্ছেন চলমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত পর্নো তারকা স্টোর্মি ডানিয়েলস। তাঁর নিজস্ব স্লোগান দিয়ে নির্মিত পর্নো ছবি নির্মাণ করে তিনি সাফল্য পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে বদলে দেওয়ার স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বদলে দিয়েছেনও অনেকখানি। মার্কিন সমাজের নানা দিকের বিভেদটাই তিনি উসকে দিয়েছেন। গত এক দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আন্দোলন ছিল যুদ্ধের বিরুদ্ধে। অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবই পালটে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম এখন ব্যস্ত পর্নো অভিনেত্রীকে নিয়ে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেফাঁস আর বেপরোয়া সব কথাবার্তা নিয়েও গণমাধ্যমে অস্থিরতা চলছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন মিডিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই। যেসব মিডিয়াকে তিনি ‘ফেক নিউজ’ বলে বিষোদ্‌গার করেন, এসব মিডিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে পড়ে আছে দিনরাত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্নো অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার প্রচার করছে। যুক্তরাষ্ট্রের লোকজনের দৃষ্টি কোন সময় যে কোন দিকে, তা বোঝা বড়ই কঠিন!

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে বা সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য নানা ডেটিং সাইট খুব জনপ্রিয়। ই-হারমোনি, ম্যাচ ডট কম, ব্লাক পিপল মিট, গে, লেসবিয়ান—নানা নামের এসব ওয়েবসাইটে লোকজন তার সঙ্গী খুঁজে নেয়। নেহাত বন্ধুত্ব থেকে শুরু করে জীবনসঙ্গী খোঁজার জন্য এসব ডেটিং সাইট জনপ্রিয়। অনেক সাইট যেমন ফ্রি আছে, তেমনি মাসিক ফি দিয়ে সদস্য হওয়ার সাইটগুলোর জনপ্রিয়তাও অনেক। এসবই নিছক তথ্য।

খবর হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর বিরক্ত উদারনৈতিকরা নিজেরা ঘোষণা দিয়ে ডেটিং সাইট খুলেছে। ট্রাম্প সমর্থক কেউ এ সাইটের সদস্য হতে পারবে না। রক্ষণশীলদের জন্য এই সাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকেরা ‘ট্রাম্প ডট ডেটিং’ নামে ওয়েবসাইট খুলেছেন। ‘ট্রাম্প ডট ডেটিং’ ওয়েবসাইটে উদারনৈতিকদের ঢালাওভাবে সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। এই সাইটে সদস্য হতে হলে সমলিঙ্গের নারী-পুরুষ খুঁজতে হবে। ‘স্ট্রেইট ম্যান’ অথবা ‘স্ট্রেইট উইম্যান’ ছাড়া ট্রাম্প ডট ডেটিং ওয়েবসাইটে সদস্য হওয়ার সুযোগ না থাকায় ক্ষুব্ধ উদারনৈতিকরা। এখানে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।

নাগরিক আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় যখন আমেরিকার উদারনৈতিকদের বগল বাজানোর সময়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই যেন সবকিছুতেই ভাটা পড়তে শুরু করল। লিঙ্গবৈষম্য আবার উসকে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গ পরিচয়ে বৈষম্যটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আর মেনে নেওয়া হয় না। গে, লেসবিয়ান বা উভলিঙ্গের লোকজন কোনো ওয়েবসাইটের সদস্য হতে পারবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না।

পাল্টা করতে গিয়েই সমলিঙ্গসহ সবার জন্য উন্মুক্ত ডেটিং ওয়েবসাইট এখন ‘নেভারট্রাম্প ডট ডেটিং’। আমেরিকান লিবারেল কাউন্সিল নামের নাগরিক সংগঠন এ ডেটিং সাইটের উদ্যোক্তা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা টেড ব্রাউন বলেছেন, দুর্নীতিবাজ এবং নৈতিকভাবে ধসে পড়া ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমমনাদের মিলনের স্থানটি হবে ‘নেভারট্রাম্প ডট ডেটিং’। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে এখনো রক্ষা করার সময় আছে। এ কাজটির করার লক্ষ্যে সর্বক্ষেত্রে সহিষ্ণুতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ করবে নেভারট্রাম্প ডট ডেটিং।’

নেভারট্রাম্প ডট ডেটিং ওয়েবসাইটের ঘোষণায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য সমমনা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। তাঁরা সহিষ্ণুতা এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াবেন। ঐক্যের মাধ্যমে ভালোবাসার ভবিষ্যৎ গড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই ওয়েবসাইটে। বলা হয়েছে, রক্ষণশীলরা আমাদের বাক্সবন্দী করার কঠিন চেষ্টা করতে পারে। এক জোড়া উদারনৈতিকের মাধ্যমেই ভালোবাসার আগামী দিন নির্মিত হবে—এমন প্রত্যাশা করা হয়েছে নেভারট্রাম্প ডট ডেটিং ওয়েবসাইট থেকে।