ট্রাম্প-জমানায় সীমান্তে অভিবাসী আটক কমেছে!

আমেরিকার গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবিরের প্রচারণা আর ‘অভিবাসী হটাও’ স্লোগান যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকায় সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। দায়িত্ব নিয়েই ট্রাম্প প্রশাসনের তোড়জোড়ের মধ্যে ছিল সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা ও অনিবন্ধিত অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে বিতাড়নের পদক্ষেপ গ্রহণ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের চেষ্টাও করে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের গৃহীত পদক্ষেপে অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিপক্ষে দাঁড়ায় বিরোধী দলসহ শীর্ষ গণমাধ্যমগুলো। যদিও আমেরিকার কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের (সিবিপি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে সর্বনিম্ন আটকের ঘটনা ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য মেক্সিকোসহ অন্যান্য অনেক দেশের অনিবন্ধিত অভিবাসীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যে সব সময় কড়া ভাষা ব্যবহার করছেন। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য, পরিসংখ্যান বলছে— প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে প্রতি বছর যে পরিমাণ অবৈধ অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে, ট্রাম্পের দুই বছরের শাসনামলে এই সংখ্যা তার থেকে অনেক কম।
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে বা বন্দরগুলো দিয়ে অবৈধ উপায়ে আমেরিকায় প্রবেশের চেষ্টা করে যত লোক আটক হয়, সে সংখ্যা ট্রাম্পের শাসনামলে নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। তবে অনুমান করা হচ্ছে, সীমান্তে ঢোকার চেষ্টায় আটকের ঘটনা আগের মতোই আছে। এই সংখ্যা কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো, অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় ঢোকার প্রবণতা আগের চেয়ে কমে গেছে।
আমেরিকার বর্ডার পেট্রলের (ইউএসবিপি) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে সীমান্তে মোট আটক ব্যক্তির সংখ্যা ১৯৭১ সালের পর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। আমেরিকার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণ, আমেরিকার অভ্যন্তরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আগের চেয়ে এখন আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
শপথ নেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। ওই আদেশ মোতাবেক সীমান্ত পাহারায় আরও বেশি জনবল নিয়োগ করা, সীমান্তে অবৈধ প্রবেশকারীকে ‘প্রথমে ধর, তারপর ছেড়ে দাও’ নীতি পরিহার করা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা প্রয়োগ করার নীতি গ্রহণ করা হয়। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশের সংখ্যা সর্বোচ্চ কমে আসে নির্বাচনে জয়লাভ থেকে ট্রাম্পের শপথ নেওয়া পর্যন্ত এই কয়মাসে। ইদানীং আবার সীমান্তে আটকের ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে।
তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের বিতাড়নে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আগ্রাসী নীতি’। ট্রাম্প ঘোষিত নতুন অভিবাসী নীতির ফলে যেসব অভিবাসী ইতিমধ্যেই আমেরিকায় বসবাস করছিলেন, তাদের অনেককেই অনিবন্ধিত অভিবাসী তকমায় শিগগিরই আমেরিকা ছাড়তে হচ্ছে। এর প্রভাব সীমান্তে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রেও পড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আমেরিকার সরকারি তথ্য বলছে, ওবামার ২০১৬ অর্থবছর থেকে ট্রাম্পের ২০১৭ অর্থবছরে ১৪ হাজার ১৩৬ জন অবৈধ অভিবাসী কম প্রত্যাহার হয়েছে। এই কমার হার ১৪ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলছে, অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাহারের মোট সংখ্যা ওবামা থেকে ট্রাম্পের শাসনামলে অনেক কম। ২০১২ অর্থবছরে আইসিইর মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাহার হয়েছিল ৪ লাখ ৯ হাজার ৮৪৯। ২০১৭ সালের প্রত্যাহারের থেকে যা দুই গুণ বেশি। সীমান্ত অনুপ্রবেশ ও অভ্যন্তরীণ অবৈধ অভিবাসী মিলিয়ে ওবামার প্রথম চার বছরে আইসিই কর্তৃক মোট প্রত্যাহারের হার প্রতিবছর গড়ে ৪ লাখ ছিল। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত শুধু অভ্যন্তরীণ অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাহারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। ২০১৭ অর্থবছরে ট্রাম্প জমানায় তা মাত্র ৮১ হাজার ৬০৩। খোলা চোখে দেখা যাচ্ছে, ওবামা আমল থেকে ট্রাম্প আমলে প্রত্যাহার বেশি তো নয়ই, বরং অনেক কম।
সিবিপির তথ্য অনুযায়ী, ওবামার সময় থেকেই অভ্যন্তরীণ অভিবাসী প্রত্যাহারের হার ক্রমাগত কমেছে। এই কমার হার ট্রাম্প আমলেও না বেড়ে বরং অব্যাহত রয়েছে। ওবামার শেষ সময়ের দিকে সীমান্তে আটকের ঘটনাও কমতে শুরু করে। এবং সেই ধারাতেই ট্রাম্প জমানায় এই সংখ্যা কমছে।
ফলে, গণমাধ্যমে অভিবাসীদের তাড়ানো হচ্ছে বলে যে খবর বের হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন সেই গণমাধ্যমগুলোকে ভুল প্রমাণ করতে পরিসংখ্যান হাজির করছে। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন দেখিয়েছে, অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাহার আমেরিকার ইতিহাসে একটি স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় নীতির অন্তর্ভুক্ত।