তাইওয়ানকে সাবমেরিন প্রযুক্তি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

তাইওয়ানের কাছে সাবমেরিন নির্মাণের প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সম্পর্কিত লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্সের ছবিটি প্রতীকী
তাইওয়ানের কাছে সাবমেরিন নির্মাণের প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সম্পর্কিত লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্সের ছবিটি প্রতীকী

তাইওয়ানের কাছে সাবমেরিন নির্মাণের প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সম্পর্কিত লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অনুমোদন এমন সময়ে এল, যখন চীন-আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। তাইওয়ানের কাছে সাবমেরিন প্রযুক্তি বিক্রির এই অনুমোদন বর্তমান দ্বন্দ্বকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার তাইওয়ানের সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (সিএনএ) প্রথম এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চেন চুং-চির বরাত দিয়ে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাইওয়ানের কাছে সাবমেরিন তৈরির প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।

বিষয়টিকে প্রতিরক্ষা খাতে আমেরিকা-তাইওয়ান সম্পর্কের ‘ধারাবাহিকতার অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা খাতে তাইওয়ানের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করছি। টানা সাতটি প্রশাসন তাইওয়ানের কাছে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করে আসছে। আমাদের এই নীতি তাইওয়ানের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে।’

এক বছর আগে ফ্লোরিডায় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রথম সাক্ষাতের সময়ই আটটি নতুন সাবমেরিন কেনার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল তাইওয়ান। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সম্পর্কিত অনুমোদন তারই ধারাবাহিকতার অংশ। এই অনুমোদনকে একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবেও দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক ধার্য করেছে আমেরিকা। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি পুষিয়ে তুলতেই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের। তবে এই উচ্চ শুল্ক আরোপকে বাণিজ্য যুদ্ধ হিসেবে মানতে রাজি নন ট্রাম্প। তাঁর ভাষায়, ‘চীনের সঙ্গে আমি কোনো বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করিনি। আগের প্রশাসনের বাজে সিদ্ধান্তের কারণে এই যুদ্ধ আমরা বহু আগেই হেরে বসে আছি।’

সর্বশেষ গতকাল শনিবার ট্রাম্প তাঁর টুইটার পোস্টে লেখেন, ‘গত ৪০ বছরে চীনের সঙ্গে আমেরিকা কখনোই বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয়নি। তাদের এই অন্যায্য বাণিজ্য বন্ধ করা উচিত। বাণিজ্য বাধা দূর করা উচিত। একই সঙ্গে দুই পক্ষ থেকে আরোপিত শুল্কহার সমান করা উচিত। প্রতি বছর (চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে) আমেরিকা ৫০০ বিলিয়ন ডলার হারায়। এটা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। এটা চলতে পারে না।’

এরই মধ্যে চীনা পণ্য আমদানিতে ৫ হাজার কোটি ডলারের শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত ৫ এপ্রিল এই শুল্কের পরিমাণ যাতে আরও ১০ হাজার কোটি ডলার বাড়ে সেই পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এই ঘোষণার পর অবধারিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী গাও ফেং বলেছেন, ‘এমন কিছু করা হলে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চীন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।’

এ বিষয়ে নিউজউইকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্য যুদ্ধ চলার সময় তাইওয়ানের কাছে প্রতিরক্ষা সহায়তা হিসেবে সাবমেরিন তৈরির প্রযুক্তি বিক্রির মার্কিন সিদ্ধান্তকে আগ্রাসী হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, তাইওয়ান প্রশ্নে চীন কোনো কিছু শুনতে রাজি নয়। তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করলেও চীন মনে করে এটি তাদেরই একটি দ্বীপ। এমনকি তাইওয়ানের সঙ্গে সরাসরি কেউ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রক্ষা করুক এটাও চীন চায় না।

অন্যদিকে শুরু থেকেই আমেরিকা তাইওয়ানকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এমনকি নির্বাচনের পর হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই ট্রাম্প সরাসরি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। এই আলাপচারিতায় চীন ওই সময় বেশ ক্ষিপ্ত হয়েছিল। এখন তাইওয়ানের কাছে সাবমেরিন তৈরির প্রযুক্তি বিক্রির এই মার্কিন সিদ্ধান্তের বিপরীতে চীনের প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা-ই দেখার বিষয়।