স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ডা. রকিব

ডা. রকিব
ডা. রকিব

অধ্যাপক ডা. এম এ রকিব নিয়তির অমোঘ নিয়মেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু তাঁর হাতে গড়া তাঁর প্রাণের সংগঠন দুটি লাখ লাখ রোগীর জীবনে এনে দিয়েছে স্বস্তির পরশ। সুদীর্ঘ সময় তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওই মহান ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করতে করতে প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেলাম যে সুদূর আমেরিকায় এসেও ভুলতে পারছি না। প্রতিদিনই ফোন করে খবর নিই কেমন চলছে প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড।
আমার জীবনের বিরাট একটা অংশ কাটিয়েছি ডা. রকিবের সঙ্গে। একসঙ্গে কাজ করতে করতে একসময় তিনি আমার বন্ধু, আমার গাইড, আমার অভিভাবক হয়ে গেলেন। তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর জীবনের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিক হাসপাতালেই কাটাতেন। এবং তাঁর প্রাণপ্রিয় সংগঠন দুটির উন্নয়নের কথাই ভাবতেন। আরও ভাবতেন সিলেটের মানুষের উন্নয়নের কথা।
ডা. রকিব সিলেটের ডায়াবেটিক ও হার্টের রোগীদের যন্ত্রণা ঘোচাতেই গড়েছেন সিলেট ডায়াবেটিক সমিতি (১৯৮৪) এবং সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশন সমিতি (১৯৮২)। সিলেট ডায়াবেটিক সমিতির যাত্রা শুরু হয় সারদা স্মৃতি ভবনে। ১৯৮৫ সালের ১০ জানুয়ারি সিলেট পৌরসভায় ডা. ইব্রাহিমকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই সংবর্ধনা সভার মধ্য দিয়েই সিলেট ডায়াবেটিক সমিতি এবং ডায়াবেটিক ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয়।
সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থল পুরান লেন জিন্দাবাজরে গড়ে উঠেছে ছয়তলা ভবন। ডায়াবেটিক হাসপাতালে এখন শুধু ডায়াবেটিক রোগীর চিকিৎসা হয় না, এখন চক্ষু, দন্ত, গাইনি, কিডনিসহ অনেক কিছুর চিকিৎসা হয়। হার্টের রোগীদের জন্য আইসিইউ চালুর চেষ্টা চলছে। এখন ডায়াবেটিক হাসপাতাল শুধু ডায়াবেটিক হাসপাতাল নয়, এটা রূপান্তরিত হয়েছে একটা জেনারেল হাসপাতালে।
অধ্যাপক এম এ রকিবের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১ নভেম্বর সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর পিতার নাম আলমাছ আলী তালুকদার। শৈশব থেকেই তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জের সরকারি জুবেলী হাইস্কুল থেকে ১৯৫১ সালে মেট্রিকে মেধাতালিকায় ষষ্ঠ স্থান লাভ করেন।
এরপর সিলেট এমসি কলেজ থেকে মেধাতালিকায় বৃত্তিসহ আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৯ সালে এমবিবিএস পাস করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর চিকিৎসাশাস্ত্রে একের পর এক উচ্চ ডিগ্রি নেন।
ডা. রকিব অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুনামগঞ্জের ডায়াবেটিক রোগীদের কল্যাণে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে সুনামগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
প্রায়ই আমাকে সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতালের কাজে ডা. রকিবের চেম্বারে যেতে হতো। আমাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে উনি রোগী দেখতেন। তখন আমি দেখেছি অনেক গরিব রোগীকে তিনি ফি ছাড়াই ব্যবস্থাপত্র দিতেন এবং তাঁর টেবিলে থাকা স্যাম্পলের ওষুধ দিয়ে তাঁদের সাহায্য করতেন।
ডা. রকিকের স্ত্রী অধ্যাপিকা হাসনা রকিব ওসমানী মেডিকেল কলেজের আরএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর ছেলে তানবীর বিন রকিব একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বাংলাদেশ ও আমেরিকাভিত্তিক ব্যবসা করেন। ডায়াবেটিক হাসপাতালের উন্নয়নের জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা লায়লা রকিব একজন চিকিৎসক হিসেবে আমেরিকার হিউস্টনে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।
ডা. রকিব আজ আর নেই কিন্তু তাঁর স্থাপিত দুটি প্রতিষ্ঠান সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতাল এবং সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল বেঁচে থাকবে অনন্তকাল ধরে। প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণকারী রোগীরা কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ করবে এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীদের।

লেখক: সাবেক পৌর মেয়র
বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাসরত।