ট্রাম্পের তালগাছ নেই!

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্পের টাওয়ার আছে, তালগাছ নেই! স্টান্টবাজিতে তালগোল পাকিয়ে তালগাছ কবজা করতে ব্যর্থ ট্রাম্প, ন্যায়নীতি ও মানবতার বিচার মানতেও নারাজ। জার্মানির আদি বংশোদ্ভূত ট্রাম্প ফ্যাসিবাদী হিটলারের নীতি অনুসরণ করে হাঁটছেন কি না, অনেকেই সে সন্দেহ পোষণ করেন। ডিগবাজির খেলায় আকাশ ছুঁইছুঁই করা ট্রাম্পের টাওয়ারগুলো লজ্জায় মাথা নত করতে পারে না।
শিকাগো শহরে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ারের স্থাপত্যশৈলী দেখে বিশ্ব পরিব্রাজকেরা যতটা মুগ্ধ হন, তার চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথাবার্তায়। হতাশায় হাবুডুবু খান তাঁর নিজ দেশের জনগণও। বিশ্বনগরী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্কে আসা সৌন্দর্যপিপাসু লাখ লাখ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা ম্যানহাটনের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এম্পায়ার টাওয়ারের দিকে মুগ্ধতায় আঙুল তোলেন। দিন-রাতের সৌন্দর্যময় দৃশ্য উপভোগে অভিভূত হন। নিউইয়র্কে আকাশস্পর্শী ট্রাম্পের একাধিক টাওয়ারের দিকে অনেকেই তাকান। গগনস্পর্শী অট্টালিকার দিকে কেউ আঙুল না তুললেও ট্রাম্পের নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত রাষ্ট্রনীতি ও বিশ্বরাজনীতির কূটকৌশলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠাতে ভুল করেন না।
এম্পায়ার টাওয়ারের দিকে লাখ লাখ মানুষ আঙুল তুলে বলেন, ওই দেখা যায় এম্পায়ার টাওয়ার। আমাদের গ্রামবাংলার পথে-প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের দিকে অনেক মানুষ আঙুল তুলে তাকান। কারণ, অনেক দূর থেকেও অতি সহজে তালগাছ চেনা যায়। বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদিতুঙ্গ একজন কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের সাড়া জাগানো ‘কানা বগীর ছা’ শিশুতোষ কবিতার প্রথম লাইন ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ’। মনের আনন্দে অনেকেই কবিতাটি আবৃত্তি করেন। অনেকেই আনমনের মুগ্ধতায় কাছের বা দূরের তালগাছের দিকে আঙুল তুলে বলে ওঠেন—‘ঐ দেখা যায় তালগাছ’। শৈশবে অনেকেই যেখানেই তালগাছ দেখেছেন, সেখানে নিজের অজান্তেই কবিতার ভাষায় বলে ওঠেন, ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ’। নিউইয়র্কের এম্পায়ার ভবনের উঁচু টাওয়ারশৃঙ্গ দেখে অনেকে বলেন, ঐ দেখা যায় এম্পায়ার ভবনশৃঙ্গ। ঐ তো নিউইয়র্কের ম্যানহাটন। এক পায়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে উঁকি মারা অট্টালিকাশৃঙ্গ, দূর থেকে দেখে কেউ বলে না তালগাছের মতো আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে তালগাছকে জীবন্ত করে কবিতায় লিখেছেন, ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে।/ মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়/ একেবারে উড়ে যায়/ কোথা পাবে পাখা সে?’
বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কের লোকালয়ে গগনস্পর্শী অট্টালিকা থাকলেও আকাশে উঁকি মারা তালগাছ নেই। বালু, পাথর আর সিমেন্টের তৈরি নিষ্প্রাণ অট্টালিকার পাতা নেই। পাখাও নেই। স্বপ্ন দেখবে কীভাবে? এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশচুম্বী নিঃস্পন্দন অট্টালিকার মনে কি সাধ জাগে ট্রাম্পের তালগাছ হয়ে নগরের আকাশে উঁকি মারতে! ট্রাম্পের তালগাছ নেই। মনে হয়তো অনেক ব্যথা-বেদনা! তাই হয়তো তিনি ন্যায়-অন্যায় ও মানবতা বুঝতে জানেন না। হৃদয়হীন ট্রাম্প টাওয়ারের মাথায় পাখা নেই। আকাশ ছুঁইছুঁই করা অট্টালিকার স্বপ্ন নেই গগনে উড়াল দেওয়ার। এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ স্বপ্ন দেখে গোল গোল পাতায় ভর করে আকাশে ওড়ার। নিউইয়র্কের প্রাণ শহর ম্যানহাটনের উঁচু উঁচু আকাশস্পর্শী ভবন দেখে, তালগাছে বাবুই পাখির বাসার কারিগরি শিল্পের মতো কেউ কি মুগ্ধ হন!
অনেকে মনে করেন, অর্ধেক পৃথিবীর দখল ও শাসনের উন্মাদনায় উন্মত্ত ফ্যাসিবাদী স্বভাবচরিত্রের হিটলারের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বভাবচরিত্রের অদ্ভুত মিল আছে। ফ্যাসিবাদী হিটলার যেমন জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করতেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছিল তাঁর ইহুদিদের সম্পর্কে, তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার ছড়াতেন সব সময়, তেমনি জার্মানির আদি বংশোদ্ভূত ডোনাল্ড ট্রাম্প কি হিটলারের ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী দর্শন অনুসরণ করছেন? তিনি তো বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতির পররাষ্ট্রনীতি বজায় না রেখে উগ্র নীতি নিয়ে চলছেন। উত্তপ্ত আগুনে ঘি ঢালতে তো তিনি আর বাদ যাননি! সামগ্রিক বিশ্ব পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে যে আতঙ্ক অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার কতটুকু অনুধাবন করছেন মিস্টার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প? বিচার মানি তালগাছ আমার স্বভাবচরিত্র নিয়ে গোটা বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানবতাবাদী নিরীহ সাধারণ মানুষের শান্তিতে বেঁচে থাকার অধিকার নির্বাসনে পাঠানোর দিকেই তাঁর ঝোঁক! প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকারী জার্মানি গোটা ইউরোপসহ অর্ধেক বিশ্বের ওপর আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধের ময়দানে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র বাহিনীর কাছে হিটলার পরাজিত হন। পৃথিবীর যুদ্ধবাজ জার্মান হিটলারের দেশ থেকে ১৩৩ বছর আগে আসা পূর্বপুরুষের উত্তরসূরি ট্রাম্পের মধ্যে কি দুনিয়া শাসনের উন্মাদনার লক্ষণ বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে না!

লেখক: সাংবাদিক ও সমাজ অনুশীলনক, নিউইয়র্ক।