নির্বাচনী মাঠে নিউইয়র্কের ২ বাংলাদেশি

মঈন চৌধুরী ও মিজান চৌধুরী
মঈন চৌধুরী ও মিজান চৌধুরী

আমেরিকার মূলধারার নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন নিউইয়র্কের দুই বাংলাদেশি অভিবাসী। কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট ৫ থেকে কংগ্রেস প্রতিনিধি হিসেবে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন

পেতে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন জ্যামাইকার হিলসাইডে বাংলাদেশিদের পরিচিত মুখ মিজান চৌধুরী। আর এরই মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ হিসেবে মনোনীত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী নাম লেখাচ্ছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর পদে লড়াইয়ের খাতায়। এ উপলক্ষে দুজনই জনমত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। কংগ্রেস ও নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য উভয় ক্ষেত্রে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ডেমোক্র্যাট মনোনয়ন পেতে তাঁদেরকে প্রাথমিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারাতে হবে, যা এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির পক্ষে সম্ভব হয়নি।

নিউইয়র্ক থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুজন বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ২০১৭ সালে। কিন্তু তাঁদের কেউই প্রাথমিক নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে পারেননি। ওজনপার্ক ও রকওয়ে এলাকা থেকে সিটি কাউন্সিলর হতে চাওয়া হেলাল শেখ দুই শতাধিক ভোটের অভাবে ওই নির্বাচনে হেরে যান। অন্যদিকে, জ্যামাইকা থেকে তৈয়েবুর রহমান নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও নিজের পাশে খুব বেশি মানুষকে হাজির করতে পারেননি তিনি। সাফল্য না এলেও মূলধারার রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্বের ঘোষণার মাধ্যমে এই দুই নেতা অনেক বাংলাদেশিকে আশাবাদী করে তুলেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আরও বড় পরিসরের নির্বাচনে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে মাঠে নেমেছেন মিজান চৌধুরী ও অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী।
মিজান চৌধুরী বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলা শহরের বাসিন্দা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২৩ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালে আমেরিকায় আসেন তিনি। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে যুক্ত মিজান চৌধুরী অনেক ফরচুন কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছেন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে মিজান চৌধুরী বলেন, ‘আমি কুইন্স কাউন্টির ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সক্রিয় কর্মী। এলানয়ের রুজভেল্ট ডেমোক্রেটিক ক্লাব, কমিউনিটি বোর্ড-১৩, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিনের সাউথ এশিয়ান অ্যাডভাইজরি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবেও কাজ করছে। এ ছাড়া অনেক স্থানীয় ও রাজ্য পর্যায়ের নির্বাচিতদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে কাজ করছি আমি। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও নিউইয়র্ক নগরের বর্তমান মেয়র বিল ডি ব্লাজিওর নির্বাচনী প্রচার দলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম আমি। একজন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে এবং কুইন্স চেম্বার্স অব কমার্সের সক্রিয় সদস্য হিসেবে আমি মনে করি এই সবকিছু আমার নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতার কথাই বলে।’
মিজান চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারের মূল স্লোগান হিসেবে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। ডিস্ট্রিক্ট ৫-এর কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে তিনি কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রযুক্তি খাতে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই এলাকায় প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করে কর্মসংস্থান বাড়াতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৫-এর কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মেক একজন আফ্রিকান আমেরিকান।
অন্যদিকে দুর্ঘটনায় আইনি সহায়তা দিয়ে অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশিদের কাছে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। ডেমোক্র্যাট দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের আস্থাভাজন বলে অনেকেই চেনেন মঈন চৌধুরীকে। এখন তিনি বাংলাদেশিদের কাছে পরিচিতি কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলির নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে তৎপরতার জন্য। মূলধারার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কাজ করা মঈন চৌধুরী এখন যেতে চান নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে স্টেট সিনেটর পদে প্রার্থী হতে চান তিনি।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি কুইন্স কাউন্টি থেকে নির্বাচনের অনুমোদন পেয়ে যাব।’
নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ১৩-এর বর্তমান স্টেট সিনেটর হোসে পেরেলটা ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে সরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এ কারণে এই আসনে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে মঈন চৌধুরী বলেন, ‘আমি এখনো সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যাট দলের সর্বসম্মত সমর্থন আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। নিউইয়র্ক যেহেতু ডেমোক্র্যাট এলাকা, এখানে দল যাকে সমর্থন করবে, তারই জয় সুনিশ্চিত। এ কারণে দলীয় সমর্থনের চেষ্টায় আছি আমি। এর পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে আমার প্রার্থিতা ঘোষণা করবে। এখন পর্যন্ত তিনজন প্রার্থী আছেন এই আসনে। এর মধ্যে পার্টির সমর্থন যার দিকে যাবে, সে হয়তো প্রাইমারি জয় করবে।’
অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না নিউইয়র্কের রাজনীতির মূলধারায় এই দুই বাংলাদেশি কতখানি জায়গা তৈরি করতে পারবেন। তবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাম লেখানোয় তারা যে এগিয়ে এসেছেন, তাতেই নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অভিবাসী সম্প্রদায়ে আশার সঞ্চার হয়েছে।