ট্রাম্প বনাম ম্যুলার: সাক্ষাৎ হবে কি হবে না

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আইনজীবী রবার্ট ম্যুলার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আইনজীবী রবার্ট ম্যুলার


ডেনমার্কের প্রিন্স হ্যামলেট জীবন-মৃত্যুর কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, টু বি অর নট টু বি। ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজপুত্র নন, তবে তার চেয়েও কিছু কম নন। এই মুহূর্তে তাঁর কাছে জীবন-মৃত্যুর মতোই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার তিনি দেবেন নাকি দেবেন না?

রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযান আঁতাত নিয়ে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি ম্যুলার ইতিমধ্যে ৪৯টি প্রশ্ন পাঠিয়েছেন মুখোমুখি সাক্ষাতে জবাবের জন্য। সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে বাধ্য করতে সমন জারি করা হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প নিজে চান সাক্ষাৎকার দিতে, মুখোমুখি দেখা হলে সব চক্রান্ত তিনি নস্যাৎ করে দেবেন, এমন আত্মবিশ্বাস তাঁর রয়েছে। কিন্তু তাঁর আইনজীবীরা ম্যুলারের সঙ্গে যেকোনো রকম সাক্ষাতের বিরোধী। তাঁদের ভয়, মুখ ফসকে এক কথা বলতে গিয়ে আরেক কথা বলে মিথ্যার গ্যাঁড়াকলে পড়ে যাবেন তিনি। এই নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতান্তরের কারণে তাঁর তিনজন আইনজীবী ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানিও সাক্ষাতের বিরোধী। তিনি অবশ্য বলেছেন, সাক্ষাৎকার যদি দিতেই হয় তো বড়জোর দুই-আড়াই ঘণ্টার জন্য।

গতকাল সোমবার ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা জানিয়েছে, সম্ভাব্য সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি হিসেবে ম্যুলারের পাঠানো প্রশ্ন নিয়ে মহড়া দেওয়া শুরু করেছেন ট্রাম্প। নিজের আইনজীবীদের সামনে যে দুই-আড়াই ঘণ্টা তিনি ব্যয় করেন, তার মধ্যে দুটির বেশি প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। এই হিসাবে ম্যুলারের সব প্রশ্নের জবাব দিতে তাঁর সপ্তাহ দেড়-দুই লেগে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সিএনএনের ভাষ্যকার ডেভিড গার্গেন। তাঁকে নিয়ে যে ভয়, মহড়াতে তাও সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তিনি অতিরিক্ত কথা বলেছেন, এক কথা থেকে অন্য কথায় চলে গেছেন, ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হওয়ার বদলে আইনজীবীরা ভীত হয়েছেন। তাঁরা সবাই একমত, ‘এই লোককে’ ম্যুলারের সামনে হাজির করা যাবে না।

কিন্তু সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করলে তা ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। ডেভিড গার্গেন মনে করেন, ট্রাম্পের দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আঁতাত নেই, সে কথা সত্য হলে ম্যুলারের মুখোমুখি হতে আপত্তি কিসের? এ বছরের নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এই প্রশ্ন নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা জল ঘোলা করতে পারেন।

ট্রাম্পের জন্য অন্য এক পথ প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার বদলে নিজের পঞ্চম সংশোধনী অধিকার প্রয়োগ করা। মার্কিন শাসনতন্ত্রের পঞ্চম সংশোধনী অনুসারে কোনো ব্যক্তিকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার অধিকার দেওয়া হয়েছে। জুলিয়ানি জানিয়েছেন, ট্রাম্প যে পঞ্চম সংশোধনী প্রয়োগ করবেন না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আইন বিশেষজ্ঞ জেফ্রি টুবিন মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে সেটি আরও ক্ষতিকর হবে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, সত্য গোপনের জন্য শুধু মাফিয়া সদস্যরাই পঞ্চম সংশোধনী ব্যবহার করে থাকে। এখন তিনি যদি নিজে সে পথ অনুসরণ করেন, তাহলে তাঁর ব্যাপারে সন্দেহ আরও বাড়বে।

রুডি জুলিয়ানি আরও একটি সম্ভাব্য আইনি কৌশলের কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, ম্যুলার যদি সাক্ষাৎকারের দাবি জানিয়ে সমন জারি করেন, ট্রাম্প আইনত তা অস্বীকার করতে পারেন। প্রেসিডেন্টের প্রধান দায়িত্ব দেশ পরিচালনা, এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছেড়ে ফৌজদারি মামলায় প্রশ্নোত্তরে হাজিরা দেওয়া তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। অধিকাংশ আইনজীবী অবশ্য জুলিয়ানির এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন।

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এর আগে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে রায়ে জানিয়েছিলেন, তাঁরা প্রেসিডেন্ট—এই যুক্তিতে সমন উপেক্ষা করার অধিকার তাঁদের নেই। কারণ, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ কারও নেই।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় আইনবিষয়ক ভাষ্যকার জেনিফার রুবিন সে কথা উল্লেখ করে মন্তব্য করেছেন, এরপরও যদি ট্রাম্প ঠিক সেই পথ অনুসরণ করেন, তাহলে ইতিহাসে তিনি পরিচিত হবেন আমেরিকার সবচেয়ে আইনের শাসনবিরোধী প্রেসিডেন্ট হিসেবে।