সোয়েককে বিশ্বমঞ্চে নিতে চান মণিকা

মণিকা হক
মণিকা হক

নিউইয়র্কে বাঙালি কমিউনিটিতে এক উজ্জ্বল মুখ মণিকা হক। ইভেন্ট প্রোডিউসার হিসেবে হেঁটেছেন অস্কারের লাল গালিচায়। নামকরা সব ফ্যাশন শোতে হয়েছেন র‍্যাম্প মডেল। তিন সন্তানের আদর্শ মা তিনি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর পরিচয়— তিনি সোয়েকের প্রেসিডেন্ট। সোয়েক মানে স্ট্রং উইমেন্স কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট (এসডব্লিউসিই)। কেবল নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েই নয়, পরিবেশ আন্দোলনেও সমানভাবে হাজির তিনি। নিজের কাজ দিয়ে ইতিমধ্যেই মণিকা হক দৃষ্টি কেড়েছেন নিউইয়র্কের মূলধারার। এখন তিনি তাঁর সংগঠনকে নিয়ে যেতে চান বিশ্বমঞ্চে।
মণিকা হক আমেরিকায় আসেন ২০০৪ সালে। এর আগে ছিলেন ইংল্যান্ডে। সেখানে লন্ডনের ব্রিমিংহাম কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন। তবে আমেরিকা আসার পর চার বছর বাংলাদেশে গিয়ে থেকেছিলেন। সময়টা ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল। উদ্দেশ্য ছিল সন্তানদের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো। নিউইয়র্কে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠা করেন সোয়েক। সময়টা ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর। সোয়েক কাজ করে নারীর ক্ষমতায়নসহ সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে। অপরাধ, পারিবারিক নির্যাতন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য ও শ্রেণি বিভাজন রোধও সোয়েকের কর্মসূচির আওতাধীন। সবুজ পৃথিবী তথা বনায়নের কর্মসূচি নিয়ে পরিবেশ আন্দোলনেও বড় ভূমিকা রেখেছে সোয়েক। জ্বালানির স্বল্প ও পুনর্ব্যবহার নিয়েও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার পক্ষে মনিজা রহমানের মুখোমুখি হন মণিকা হক। নাতিদীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁর কাজের নানা দিক।
প্রথম আলো: আপনার লেখাপড়া কোন বিষয়ে?
মণিকা হক: আমি সায়েন্সের স্টুডেন্ট ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো তখন, যখন ফাইনাল পরীক্ষায় ব্যাঙ কাটার ব্যাপার এল। ব্যাঙ কাটা ছিল আমার জন্য অসম্ভব। এ কারণে ব্যবহারিক পরীক্ষার আগে আমার বন্ধুকে বললাম দুটি ব্যাঙ নিয়ে আসতে। সেই বন্ধুই আমার হয়ে ব্যাং কেটেছিল। আর আশ্চর্যের ব্যাপার ব্যবহারিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর আসে আমারই। কিন্তু এভাবে তো বারবার হয় না। বিষয় পরিবর্তন করে পরে বিজনেস স্টাডিজ নিয়ে লেখাপড়া করি।
প্রথম আলো: সংগঠন করার অনুপ্রেরণা পেলেন কোথা থেকে?
মণিকা হক: ২০১৫ সালে যখন দেশ থেকে ফিরে আসি নিউইয়র্কে, তখন বাঙালি কমিউনিটিতে মিটিং, চা-এর আড্ডা, গালগপ্পে সবাই খুব ব্যস্ত। আমার আবার এগুলো পছন্দ নয়। আমার হাসবেন্ড ছিলেন একটি সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। একদিন তিনি আমাকে বললেন যে, তাঁর সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আমাকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে চান। আমি তাঁদের সংগঠনের একটি সভায় অংশ নিয়ে দেখতে চাইলাম। পরিকল্পনা মতো একটি সভায় গেলাম। গিয়ে যাদেরকে দেখলাম, মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেন? ওনারা অনেক বয়সী, যাদের বেশির ভাগ অল্পশিক্ষিত। সারাক্ষণ পরনিন্দা করেন, আর বড় পদ নিয়ে বসে থাকেন। নিজেদের ডেমোক্র্যাট মনে করলেও বাস্তবে কাজ করেন রিপাবলিকান নীতিতে। ওনারা মেয়েদের শুধু কালচারাল সেক্রেটারি হওয়ার যোগ্য মনে করেন।
প্রথম আলো: তারপর কিভাবে সোয়েকের কাজ আরম্ভ করলেন?
মণিকা হক: এই ব্যাপারে থার্টি সেভেন্থ ডিসট্রিক্ট অ্যাসেম্বলিম্যান লুইস সেপুলভাডার সঙ্গে দেখা করি। তখন উনি আমাকে বলেন, আমার যে যোগ্যতা সেটা প্রেসিডেন্ট হওয়ার; অন্য কিছুর নয়। এর পরেই ২০ জনের একটা মিটিং ডাকি। ভোট হয়; ১৯ জনের ভোটে আমি বিজয়ী হই। এভাবে সোয়েকের কাজ শুরু করি।
প্রথম আলো: এ পর্যন্ত সাফল্যের কথা বলুন—
মণিকা হক: সোয়েক প্রতিষ্ঠার পর কয়েকটি সফল অনুষ্ঠান করি, যা আমেরিকার নিউজ চ্যানেলগুলোয় বারবার দেখানো হয়। গত বছরের ২৩ এপ্রিল বৈশাখী মেলা করি, যেখানে সব মিলিয়ে দেড় হাজার মানুষ অংশ নেয়। এর পর সফলভাবে আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রোগ্রাম করি। নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলের ১২০০ সিটের মিলনায়তনে, গোল্ডেন প্যালেসসহ বিভিন্ন বড় মঞ্চে আরও আটটি ইভেন্ট আয়োজন করি আমরা।
প্রথম আলো: আপনাদের লক্ষ্য কী?
মণিকা হক: নারী যে কেবল বিনোদনের সামগ্রী নয়, সেটা সাধারণ মানুষকে বোঝানোই আমাদের লক্ষ্য। নারীর কাজ কিন্তু আবার দিনভর রান্নাঘর সামলানোও নয়। নারীরাও পুরুষদের মতো মানুষ; এই ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চাই।
প্রথম আলো: আপনাদের তহবিল আসে কোথা থেকে?
মণিকা হক: যেকোনো ইভেন্টের তহবিল আসে স্পনসরদের কাছ থেকে। আমাদের সংগঠনে আমেরিকার যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ সদস্য হতে পারে। আমাদের ২৭ জন নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন। আর যারা আর্থিক সমর্থন দেন, তাঁদেরকে আমরা ‘প্যাট্রন’ হিসেবে সম্মানিত করি। আমাদের সংগঠনে দেশি-বিদেশি যে কেউ যুক্ত হতে পারেন।
প্রথম আলো: সংগঠন নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা বলুন
মণিকা হক: আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বের মধ্যে সেরা সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই সোয়েককে। আইডল হতে চাই তাদের মতো, যারা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে নারীর প্রতিনিধিত্ব করছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মাদার টেরিজা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো মানুষের নাম। হতে চাই তাদের মতো, যাদের নামে এখন স্কুলে বাধ্যতামূলক একটা অধ্যায় রাখা হয়।