অনুকরণীয় জাকারিয়া

কিশোর বয়সে হকারি করার মধ্য দিয়ে তাঁর ব্যবসায় হাতেখড়ি। কোমল পানীয়, চুইংগাম, পত্রিকা—কী বেচেননি তিনি! এই বেচতে বেচতে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আয়কর রিটার্ন জমা দেন তিনি। এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৮২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। ৮৭ বছরের এই তরুণকে পাঠকের সামনে আর বেশি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। বিশ্বের তিন নম্বর ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটকে চেনেন না এমন খুব কম লোকই আছেন।
বাফেটকে হঠাৎ করেই মনে করিয়ে দিলেন কানসাসের প্রবাসী বাঙালি জাকারিয়া। বাফেটের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য তাঁর মতো মার্কিন এই ধনকুবেরকে ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়তে হয়নি। নিজের দেশেই পরিশ্রম আর মেধার সর্বোত্তম প্রয়োগে ওয়ারেন বাফেট নিজেকে আজকের জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু জাকারিয়া ডিভি ভিসার কল্যাণে মাত্র ৩০০ ডলার পাথেয় করে আমেরিকায় এসেছিলেন। সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানেরা। অচেনা দেশে এসে হার না মেনে বরং লড়াইকে সঙ্গী করেন তিনি। আর এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে ভরসা ছিল ব্যবসা। তিনি সেই পথ বেছে নেন। জাকারিয়া এখন কানসাসের উচিটা শহরে বড় দোকানের মালিক। সব মেলে সেখানে।
জাকারিয়ার এই সাফল্যের আরেকটা দিক হলো, তিনি সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি। তাঁর সততা, পরিশ্রম উচিটায় বাংলাদেশের তথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এই পাশাপাশি অনেক বাংলাদেশি পণ্য আমেরিকার মধ্যাঞ্চলের মানুষদের কাছে পরিচিত করাচ্ছেন, যাঁরা কোনো দিন বাংলাদেশকে অন্যভাবে চেনার সুযোগ পাবেন না। এটাও একটা বিরাট প্রাপ্তি আমাদের সবার।
যেকোনো প্রবাসীর জন্য সহজ হলো, নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী একটি কাজ খুঁজে নেওয়া। তাহলে বিদেশের মাটিতে অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবেন। অধিকাংশই এই পথটা বেছে নেন। কিন্তু এর বাইরে কেউ কেউ থাকেন, যাঁরা অসম লড়াইতে নামার ব্যাপারে অকুতোভয়। তাঁরা পরের নিয়ন্ত্রণে চাকরি না করে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। অন্যদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। নিউইয়র্কসহ বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এ ধরনের উদাহরণ একাধিক।
নিউইয়র্কে ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা সমাজে নিজেদের সম্মান, শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছেন, পাশাপাশি প্রবাসী বাঙালিরা যাতে আরও এগোতে পারেন, তার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এই কাজের জন্য তাঁরা সবাই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তাঁদের সৃজনশীলতা বিদেশের মাটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সম্মানের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘...শীর্ণ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধরে/ দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া ক’রে।/ সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,/ রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ কর নি।’ কবিগুরু আজ থাকলে এই ‘গৃহ ছাড়া’র দলের সাফল্যে অবশ্যই উদ্বেলিত হতেন। আর কী লিখতেন তা-ও আমরা কিছুটা কল্পনা করতে পারি। সে কারণে বিদেশের মাটিতে জাকারিয়াদের সংখ্যা যত বাড়বে, তাতে বাংলাদেশের ছবিটি তত উজ্জ্বল হবে।