চাকরি বাড়লেও বাড়েনি আয়

‘পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি।’ তবু মানুষ জীবিকার টানে পছন্দ হোক না হোক, চাকরি করে। এই চাকরি নিয়ে ক্ষুব্ধও হয় কবি জীবনানন্দের মতো। কর্মক্ষেত্র পছন্দ হলে, মেলে না কর্ম-সময়; দুই-ই মিলল তো আয় নিয়ে থেকে গেল অসন্তোষ। অবশ্য অধিকাংশ সময় চাকরি-সম্পর্কিত ক্ষোভের কেন্দ্রে থাকে বেতন। যে জীবিকার জন্য এই চাকরি, তার বেতন চাহিদার চেয়ে কম হলে ক্ষোভ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার চাকরি না হলেও চলে না।
চাকরির বাজারের উত্থান-পতনের সঙ্গে সরাসরি যোগ ব্যক্তির এবং সেই সূত্রে রাষ্ট্রের। কারণ, অর্থনীতিকে সচল রাখতে নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং এর মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার দায়িত্বটা রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা এই দায়িত্বটা ভালোভাবেই পালন করছে বলে মনে হয়। আমেরিকার চাকরির বাজারের বিভিন্ন সূচক মোটা দাগে সে কথাই বলছে। বিশেষত বেকারত্বের হার বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, তা বেশ সন্তোষজনক। আমেরিকায় বেকারত্বের হার এখন মাত্র ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নতুন নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও সংকট রয়ে গেছে। আর তা হলো, বেতন ও দক্ষ কর্মী।
গত দশকের শেষ দিকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে গিয়ে খুচরা পণ্য সরবরাহ, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থায়ী কাজের বাজার সম্প্রসারণের দিকে নজর দেয় প্রশাসন। উৎপাদন খাতের বর্ধিত কর্মবাজারকে অস্বীকার না করেই বলা যায়, ঘণ্টাভিত্তিক চাকরির বাজারের সম্প্রসারণের মাধ্যমেই আমেরিকা বেকারত্বের হার এতটা কমাতে পেরেছে। কিন্তু এ সূত্রেই আরেকটি বড় সংকট দেখা দিয়েছে। বেকারত্বের হার কমায় বাজারে দক্ষ কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে। ঠিক বিপরীতভাবে দক্ষতাভিত্তিক কাজের ক্ষেত্র সেই অনুপাতে না বাড়ায় ভালো বেতনের চাকরি পাচ্ছেন না চাকরিপ্রার্থীরা। অথচ বেকারত্বের হার কমলে, চাহিদার বিপরীতে শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার কারণে শ্রমের মূল্য বাড়ার কথা। কিন্তু তেমনটি হয়নি। ফলে শ্রমবাজার ও মজুরির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
এদিকে বর্তমান প্রশাসন অভিবাসীদের কাজের ক্ষেত্র সংকোচন করছে। এই নীতির কারণে দক্ষ-অদক্ষ—দুই ক্ষেত্রেই কর্মীর সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীর সংকটে ভুগছে ভয়াবহভাবে। কারণ, এইচওয়ান ভিসার মাধ্যমে এই খাতে কর্মী নিয়োগ কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এই অবস্থায় অভিবাসীদের চাকরির ক্ষেত্র সংকোচনের নীতি থেকে প্রশাসন ফিরে এলে আশু সংকট মোকাবিলা সম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, ‘অভিবাসীরা আমেরিকানদের কর্মসংস্থান সংকুচিত করছে’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই তত্ত্ব একেবারেই ঠিক নয়; বরং আমেরিকার অর্থনীতির স্বার্থেই অভিবাসীবান্ধব নীতি প্রয়োজন। ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি অনুধাবন করে এ ব্যাপারে যত দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, ততই মঙ্গল।