রাজপরিবারে মার্কিন কন্যা

রাজপরিবারের বিয়ে বলে কথা। তা-ও ছোট রাজপুত্র। ফলে ঢাকঢোলটা একটু জোরেই বেজে ছিল। সেই ঢাকের শব্দে বিশ্ববাসী এই রাজকীয় বিয়ের প্রমোদ টিভি, অনলাইন, পত্রিকার মাধ্যমে উপভোগ করেছেন। উপভোগ করার মতোই। তবে এই বিয়ের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে।
৩৩ বছর বয়সী ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স হ্যারি ও ৩৬ বছর বয়সী মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের বিয়ের আখ্যান প্রমাণ করছে সর্বত্র পরিবর্তন আসছে। রাজপরিবারও তার বাইরে নয়। কথায় বলে সেই রামও নেই সেই অযোধ্যাও নেই। ব্রিটিশ রাজপরিবারকে এখন টিকে থাকতে হলে জনসমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এই খেলায় একসময় পুরো রাজচ্ছত্র উল্টে যেতে বসেছিল প্রয়াত রাজকুমারী প্রিন্সেস ডায়ানার কাছে। রাজপরিবার ছাড়ার পরও সাধারণ ব্রিটিশদের হৃদয়ের রানি ছিলেন ডায়ানা। এর প্রভাব নাক উঁচু ব্রিটিশ রাজপরিবার টের পেয়েছিল ডায়ানার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পর।
প্রয়াত শাশুড়ির সঙ্গে এই জায়গায় মিল আছে মার্কিন কন্যা মেগানের। প্রথাগত পথে হাঁটাতে দুজনই অপারগ। ডায়ানাকে কোনো মতে সহ্য করেছিল রাজপরিবার, কিন্তু মেগানের এই অপারগতা কতটা মানবে, সেটাই প্রশ্ন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা মূলত সে দেশের অভিজাত পরিবারের মধ্য থেকে বধূদের বেছে নিতেন। তবে ব্যতিক্রম একেবারে নেই তা নয়। সে জন্য সমস্যাও হয়েছে। কিন্তু রাজপরিবারের পুত্রবধূ হিসেবে মেগানই প্রথম সংযোজন, যাঁর বাবা শ্বেতাঙ্গ, মা অশ্বেতাঙ্গ। ফলে গাত্রবর্ণের কৌলীন্য ছিল না মেগানের। এ নিয়ে শিশুকাল থেকে তিনি প্রশ্নের সম্মুখীন। সেই প্রশ্ন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য হওয়ার পর উবে যাবে এমনটা ভাবার কারণ নেই।
মেগান মার্কেল আরও অনেক দিক দিয়ে অগ্রগণ্য। অন্য বধূদের মতো তিনি স্বামীর একান্ত বাধ্য থাকার শপথ নেননি। নিয়ম ভেঙে স্বামীর হাতে বিয়ের আংটি পরিয়েছেন। তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং অনাচারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠও বটে। কর্মস্থলে নারীর যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে তিনি অনেক দিন থেকে সোচ্চার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্য সমালোচক। স্বাধীনচেতা। তাই রাজপরিবারের খোলসে তিনি তাঁর সব সত্তা ঢেকে রাখবেন এমনটা ভাবার কারণ নেই। আর তা কাঙ্ক্ষিতও নয়।
মেগানের বিয়ের অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হয়েছে মার্কিন নাগরিক আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের ভালোবাসার শাশ্বত বাণী। সেই বাণী এবার ছড়িয়ে পড়ুক রাজপরিবারের কন্দরে কন্দরে।