মেয়েদের পছন্দ শারারা ঘারারা

এই শারারা ঘারারা পোশাকই এবার মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে
এই শারারা ঘারারা পোশাকই এবার মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে

ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, তত জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। ১০ রোজার পর থেকে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় ঈদের বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। দোকান মালিকদের কণ্ঠেও সন্তুষ্টি। বছরের এ সময়ের জন্য তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন বাকি এগারো মাস।
ঈদের কেনাকাটার জন্য নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইট্‌সের দিকে নজর সবার। অন্য এলাকা থেকে সবাই আসছেন সেখানে ঈদের কেনাকাটা করতে। এমনকি আমেরিকার অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকেও কেউ কেউ আসছেন এখানে। জ্যাকসন হাইট্‌স ছাড়াও কুইন্সের অন্যান্য এলাকা যেমন পারসন বুলেভার্ড, হিলসাইড এলাকায়ও বাংলাদেশি দোকানে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। পাশাপাশি ব্রঙ্কসের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা

পার্কচেস্টারশায়ার, ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডে বাঙালি দোকানগুলোতে অনেক রাত পর্যন্ত মানুষের সমাগম দেখা যায়। 

দোকানের বিক্রেতারা বলছেন, এবারের ঈদে মেয়েদর মূল আকর্ষণ ‘শারারা’ আর ‘ঘারারা’। এর বাইরে নানা ধরনের লং ড্রেস, লং কামিজের চাহিদাও প্রচুর।
জ্যাকসন হাইটসের থার্টি সেভেন অ্যাভিনিউয়ের ওপর সেভেন্টি থার্ড ও সেভেন্টি ফোর্থ স্ট্রিটে এমনিতে সারা বছর ভিড় লেগেই থাকে। ঈদ এলে তো কথাই নেই। সারাক্ষণ গাড়ির জট লেগেই থাকে। এই দুই রাস্তার দুই পাশে ডিটিএন আই, বাংলাদেশ প্লাজার বিভিন্ন দোকান, আইএসপি, অমিত, অমৃতা, পারফেকশন ব্রাইড, সাওয়ারিয়া, গুলশান ফ্যাশন, দেওয়ান ফ্যাশন, রাহুল, স্মৃতি ফ্যাশন, চিন্তনপুরীর মতো ফ্যাশন হাউসসহ নানা দোকানপাট গড়ে উঠেছে। দশ রোজার পর থেকেই এসব দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। জ্যাকসন হাইটসের দেওয়ান ফ্যাশনের কর্ণধার শারমিন এলিন জানালেন, ‘দশ রোজার পর থেকে নিয়মিত রাত এগারোটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছি। কারণ এটাই বিক্রির মৌসুম।’
শারমিন এলিনের কাছে জানা গেল, এবারের ঈদে সব মেয়ের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে শারারা আর ঘারারা। শারারার বৈশিষ্ট্য হলো কামিজ হাঁটু অবদি, ফ্রকের মতো আর সালোয়ার খুব ঢোলা, অনেকটা স্কার্টের মতো। আর ঘারারাতেও শর্ট কামিজ, তবে সালোয়ার হাঁটুর কাছে স্ট্রেট এসে নিচে কুচি দেওয়া। এ ধরনের পোশাক ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশ থেকেই আমদানি হচ্ছে। এর বাইরে লম্বা স্ট্রেট কামিজের সঙ্গে পেলাজোর ফ্যাশন এখনো আছে। তারপর ফ্রকের সঙ্গে স্কিন টাইট প্যান্ট। শর্ট কোটির লম্বা ড্রেসও আছে। কাতান ড্রেসও ভালো চলছে। জমকালো এসব পোশাকের দাম শুরু হয় সাধারণত ১২০-১৫০ ডলার থেকে। সর্বোচ্চ দাম ৩০০ ডলার পর্যন্ত হয়।
সেভেন্টি ফোর স্ট্রিটের ওপর অবস্থিত রোকসানা বুটিকসের মালিক রোকসানা আহমেদ জানান, এবারের ঈদে খাটো ও লম্বা দুই ধরনের পোশাকেরই চাহিদা রয়েছে। শারারা শর্ট ড্রেস যেমন চলছে, তেমনি চাহিদা আছে লম্বা পোশাকেরও। লং কামিজ ও স্কার্টেরও ব্যাপক চাহিদা। ড্রেসের ওপর জ্যাকেট ধরনের একটা পোশাক আছে, যেটা এবার খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ধরনের পোশাকে যেকোনো বড় পার্টিতে দারুণ লাগবে। নানা ধরনের স্টোন ও কারচুপি কাজের পোশাকের চাহিদা বেশি। রোকসানা বুটিকস ঈদ উপলক্ষে বর্তমানে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে কিছুদিনের মধ্যে তাঁদের দোকান রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
সেভেন্টি ফোর স্ট্রিটে অবস্থিত আরেকটি নামি ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান বিবা’র মালিক ভারতীয় সোনিয়া কর। তিনিও শারারা ও ঘারারা পোশাকের ব্যাপক চাহিদার কথা জানালেন। লং গাউনেরও রয়েছে চাহিদা। পাটিওয়ালা সালোয়ার, কাতান ওড়না, প্লেন ড্রেসের সঙ্গে হেভি ওড়না বেশ চলছে বলে জানান তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের পাঞ্জাবিও পাওয়া যায়। শাড়ির মধ্যে ঐতিহ্যবাহী কাতান কিংবা কাতান জর্জেট চলছে। সোনিয়া করের মতে, ঈদে শাড়ির চেয়ে ড্রেসটাই বেশি কেনে মেয়েরা।
শুধু যে দোকানেই ঈদের পসরা সাজানো হয়েছে তাই নয়। পোশাকের বিভিন্ন মেলা এবং প্রদর্শনীও হচ্ছে। রমজান শুরুর কিছুদিন আগে জ্যাকসন হাইট্‌সে হয়ে গেল জমজমাট ঈদ মেলা। সেখানেও প্রচুর পোশাক বিক্রি হয়েছে। আগামী ২ জুন বাংলাদেশ প্লাজার নিচে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সকাল দশটা রাত এগারোটা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। বাসাবাড়িতেও অনেকে পরিচিতজনের কাছে বিক্রি করছেন। যাদের একজন উডসাইডে বসবাসরত চমক ইসলাম। চমক জানালেন, তার বাসায় তিনি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, জুয়েলারির একটা বড় কালেকশন রেখেছেন। আত্মীয়-পরিচিতজন অনেকে তাঁর কাছ থেকে কিনছেন। যেহেতু দোকানের ভাড়া দিতে হয় না, তাই তার খরচ কম। এ জন্য দোকানের চেয়ে অনেক কম দামে তিনি পোশাকের দাম নির্ধারণ করেন।
বাংলাদেশিদের বসতি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্যামাইকায় রেওয়াজ, রুনিজ ফ্যাশনের মতো বিশাল সব আউটলেট গড়ে উঠেছে। ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারশায়ারেও রয়েছে প্রতিদিন ফ্যাশন ও টাঙ্গাইল শাড়ি হাউসের মতো প্রতিষ্ঠান। আগে যেখানে এসব দোকানে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পণ্যের সমাহার ছিল, এখন সেটা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের পোশাক। ব্রঙ্কসের স্টার্লিং অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শাখা স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসে চাকরি করছেন শেলু চৌধুরী। দুই মেয়ের মা তিনি। বড় মেয়ে ইলেভেন গ্রেডে ও ছোট মেয়ে সিক্সথ গ্রেডে পড়ে। বড় মেয়ে লম্বা পোশাক পরতে চায় না। ঈদের দিনও সে মেসির কোনো ব্রান্ডের লম্বা টপস টাইলস দিয়ে পরে। তবে ছোট মেয়ে আর মা দুজনেই ঐতিহ্যবাহী পোশাকের ভক্ত। শেলু চৌধুরীর নিজের ও ছোট মেয়ের জন্য এবারের হাল ফ্যাশনের পোশাক শারারা কিংবা ঘারারা কেনার ইচ্ছা আছে।