শিক্ষার্থীদের ১০ লাখ ডলার অনুদান দিলেন শিক্ষক

নিউ জার্সির স্কুলশিক্ষিকা জেনিভিভ ভিয়া কাভা পড়াতে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন তাঁর শিক্ষার্থীদের। কিন্তু সেই ভালোবাসা কত বেশি ছিল, সেটা বোঝা গেল তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পর।

মৃত্যুর পর জেনিভিভ ভিয়া কাভার উইলের এক মিলিয়ন ডলার পেয়েছে ডুমন্টের পাবলিক স্কুলগুলো। সিএনএন জানায়, এ টাকা জমাতে তিনি কৃপণতা করতে কুণ্ঠিত হননি। নিজের জন্য মূল্যছাড়ের জিনিসপত্র কিনতেন সব সময়। এমনকি নিজের জন্য শ্রবণযন্ত্র জরুরি হয়ে পড়লেও তিনি তা না কিনে টাকা জমানোতেই মনোযোগী ছিলেন। ভালোবাসা ও দানশীলতার এমন নজির এ যুগে খুব বেশি নেই।

৪৫ বছর ধরে এ শিক্ষিকা নিউ জার্সির ডুমন্টের পাবলিক স্কুল ডিস্ট্রিক্টে শিক্ষণ প্রতিবন্ধিতা আছে—এমন শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। ১৯৯০ সালে অবসর নেওয়ার পর তিনি স্কুল ডিস্ট্রিক্টে (ডুমন্ট পাবলিক স্কুলসের অধীনে পাঁচটি স্কুল রয়েছে) নিয়মিত আসতেন। শ্রেণিকক্ষগুলোতে যেতেন এবং সুপারিনটেনডেন্টদের অফিসে ঢুঁ মারতেন।

২০১১ সালে মারা যান জেনিভিভ ভিয়া কাভা। এ বছরের এপ্রিলে ডুমন্টের পাবলিক স্কুলগুলো ভিয়া কাভার উইল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে এক মিলিয়ন ডলারের চেক পায়।

সাবেক এ শিক্ষিকার পরিবার বা সন্তানাদি নেই। কিন্তু সঞ্চয়ের অভ্যাস ছিল তাঁর। এ বিরাট অঙ্কের টাকা তিনি স্কুলের তহবিলে দেওয়ার জন্য উইল করে যান। এ টাকা থেকে শিক্ষণ প্রতিবন্ধিতা আছে—এমন শিক্ষার্থীদের যারা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করতে চায়, তাদের বৃত্তি দেওয়া হবে।

ভিয়া কাভার এ উপহারকে ‘আশীর্বাদ’ বলছেন স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট ইমানুয়েল ট্রিজ্জানো। এর আগে ভিয়া কাভা তাঁকে বলেছিলেন শিক্ষার্থীদের পড়াতে তিনি কতটা ভালোবাসেন তিনি আর তাদের জন্য কতটা করতে চান।

ট্রিজ্জানো বলেন, ‘একদিন ভিয়া কাভা আমাকে বলেন তিনি একটি বড় অঙ্কের টাকা জমাচ্ছেন এবং টাকাটা তিনি শিক্ষার্থীদের দান করবেন বলে মনস্থির করেছেন।’ এ কথায় ট্রিজ্জানো খুশি হলেও বিষয়টিকে তিনি অত গুরুত্ব দেননি।

আগামী বছর থেকে এক বা একাধিক শিক্ষার্থীকে এ বৃত্তি দেওয়া হবে। টাকার অঙ্কটা নির্ভর করবে এক মিলিয়ন ডলার থেকে কত সুদ আসবে তার ওপর। একজন শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার বৃত্তি দেওয়া হবে।

স্কুল ডিস্ট্রিক্টের কর্মপরিচালক কেভিন কারটোট্টো জানান, উইল করা টাকার পরিমাণ শুনে তিনি চমকে গিয়েছেন। তিনি বলেন, এটাই তাঁর আমলে সবচেয়ে বড় অনুদান।

ভিয়া কাভার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং তাঁর উইলের বাস্তবায়নকারী রিচার্ড জাবলোনস্কি বলেন, ভিয়া কাভার পরিবার মন্দার পরিস্থিতিতে কঠিন সময় পার করেছে। ফলে, তিনি তখনই কৃপণতা ও সঞ্চয় করতে শিখেছেন।

জাবলোনস্কি বলেন, ‘তিনি আমার দোকানে আসতেন এবং ৭০ শতাংশ মূল্যছাড়ের জিনিস ছাড়া কিছু কিনতেন না। এমনকি শ্রবণযন্ত্রটি তাঁর জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়লেও তিনি সেটি কেনেননি।’ জাবলোনস্কি আরও বলেন, ভিয়া কাভা নিজের কাজকে কতটা ভালোবাসতেন, সেটাই সারাক্ষণ বলতেন। তিনি বলেন, এখন ভিয়া কাভার নাম সারা জীবনের জন্য থেকে যাবে।

ডুমন্টের পাবলিক স্কুলগুলো বহুদিন ধরেই ভিয়া কাভার ভালোবাসা পেয়ে আসছে। কিন্তু শুধু স্কুলগুলোই তার দাক্ষিণ্য পায়নি। ভিয়া কাভার আইনজীবী এপ্রিল স্যাভয় বলেন, আরও পাঁচটি সংগঠনের প্রত্যেককে তিনি এক লাখ ডলার করে দিয়ে গেছেন।

এপ্রিল স্যাভয় বলেন ‘যেহেতু তাঁর নিজের কোনো পরিবার ছিল না এবং তেমন কোনো নিকটাত্মীয়ও ছিল না, সে কারণেই তিনি এ রকম দানে আগ্রহী হতে পেরেছিলেন।’