চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ আমেরিকার

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করতে যাচ্ছে আমেরিকা। আজ ১৫ জুন শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। মেধাস্বত্ব চুরির অভিযোগ তুলে এ ঘোষণা দেন তিনি। আগামী ৬ জুলাই থেকে এই শুল্ক গ্রহণ শুরু হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এতে চীনের অন্তত ৫ হাজার ডলার মূল্যমানের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে চীনের পক্ষ থেকে এর ‘জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।

মার্কিন প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সম্পর্কিত গোপনীয় তথ্য চুরির অভিযোগে চীনের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আমেরিকা। শুরুতেই চীনের প্রায় ১ হাজার ১০২টি পণ্যকে লক্ষ্য বানানো হয়েছে। ‘মেড ইন চায়না’ লক্ষ্য অর্জনে চীনে তৈরি বিভিন্ন পণ্য, বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি, রোবোটিকস, অটোমোবাইল সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য এই তালিকায় রয়েছে। তবে মোবাইল ফোন ও টেলিভিশনের মতো মার্কিন ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় পণ্যগুলো এই তালিকায় নেই বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

১৫ জুন এ সম্পর্কিত ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, ‘দীর্ঘ দিন যাবৎ দুই দেশের মধ্যে চরম অন্যায্য বাণিজ্য চলে আসছে। এটি আর চলতে পারে না।’ এ সম্পর্কিত সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্কারোপের পর চীনের সঙ্গে এই বাণিজ্য দ্বৈরথ বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে চরম উত্তেজনার সূচনা করেছে। আমেরিকা ও চীন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই বাণিজ্য শক্তি। ফলে এই দুই দেশের বাণিজ্য যুদ্ধ সারা বিশ্বের আর্থিক বাজার ও বাণিজ্যের সমীকরণই বদলে দিতে পারে

ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই চীন এর ‘উচিত জবাব’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এরই মধ্যে দেশটি মার্কিন পণ্যে শুল্কারোপের পরিকল্পনা নিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না চীনও আমেরিকার ৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্কারোপ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অবধারিতভাবে রয়েছে মার্কিন গাড়ি, উড়োজাহাজ ও সয়াবিন।

এ ব্যাপারে এক বিবৃতিতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এই যুগে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করা বিশ্বের কারওরই কাম্য নয়। আমরা সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন এই পুরোনো ও বাতিল কৌশলকে প্রতিহত করতে এবং বিশ্বমানবতার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়।’

আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, গত এপ্রিল ও মে মাসেই চীনা পণ্যের একটি তালিকা করা হয়েছিল। সে সময় চীনের ৩৪ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের পরিকল্পনা করা হয়। শুরুতেই এ পণ্যগুলো নতুন শুল্কের আওতায় আসবে, যা ৬ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এ ছাড়া আরও ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যের একটি তালিকা করা হয়েছে, যা পর্যালোচনা ও এর ওপর গণশুনানির পর শুল্কের আওতায় আসবে।

এর বিপরীতে চীনও সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করতে যাচ্ছে। এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে বিষয়টি বলা হলেও দেশটি সুস্পষ্টভাবে কোন কোন পণ্যে এই পাল্টা শুল্ক বসতে যাচ্ছে তা পরিষ্কার করেনি। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঠিক একই মাত্রার পাল্টা ব্যবস্থা আমরা নেব। একই সঙ্গে দুই পক্ষের মধ্যে অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ে হওয়া বিগত সব সমঝোতা বাতিল করা হবে।’

এদিকে চীনের পক্ষ থেকে পাল্টা পদক্ষেপ নিলে শুল্কের পরিসর বাড়বে বলে আগেই জানিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। সে ক্ষেত্রে ১০ হাজার ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যকে শুল্কের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

চীনা পণ্যে শুল্কারোপের ঘোষণাটি ১৫ জুন এলেও তার বিষয়ে ১৪ জুনই সম্মতি জানান ট্রাম্প। ওই দিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মানচিন, বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজারের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ সম্মতি জানান। এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে, তা অবশ্য অনুমিতই ছিল। মেধাস্বত্ব চুরির অভিযোগ তুলে গত মার্চেই চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্কারোপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘মেধাস্বত্ব চুরি যাওয়ার এক ভয়াবহ সমস্যা রয়েছে আমাদের। (এর সমাধান) আমাদের আরও শক্তিশালী ও বিত্তশালী রাষ্ট্রে পরিণত করবে।’

কিন্তু গত মাসেই হঠাৎ করেই যেন আশার আলো দেখা দিতে থাকে। বাণিজ্য বিষয়ে দুই দফা বৈঠকের পর উভয় পক্ষের কণ্ঠেই নরম সুর শোনা যায় সে সময়। দুই দেশ যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ‘আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে চীন আমেরিকা থেকে কৃষি ও জ্বালানি পণ্য ক্রয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবে।’ আর অর্থমন্ত্রী স্টিভ মানচিন বাণিজ্য যুদ্ধকে ‘স্থগিত’ ঘোষণা করেন। কিন্তু এর ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় হোয়াইট হাউস আবারও শুল্কারোপের বিষয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তার কথা জানায়। একই সঙ্গে আমেরিকায় চীনা বিনিয়োগে সীমা আরোপের পরিকল্পনার কথাও জানায় মার্কিন প্রশাসন। সেই সময়ই জানানো হয়েছিল যে, ২৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় কোন কোন চীনা পণ্য আসবে তা ১৫ জুন চূড়ান্তভাবে জানানো হবে। এই হিসেবেই ১৫ জুন এই ঘোষণা আসে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ এরই মধ্যে মার্কিন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভোক্তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন এই বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাবটি পড়বে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর। এ বিষয়ে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট থমাস জে ডোনোহু নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘অন্যায্য বাণিজ্যের জন্য চীনের ওপর যে শাস্তিমূলক শুল্কারোপ করা হয়েছে, তার ভার সবচেয়ে বেশি করে পড়বে মার্কিন ভোক্তা, উৎপাদকদের ঘাড়ে। কারণ মার্কিন বহু কারখানা কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর নির্ভর করে। এটা সঠিক পদক্ষেপ নয়।’