হার্ভার্ডে ভর্তিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এশীয় আমেরিকানরা!

ভর্তির ক্ষেত্রে এশীয় আমেরিকানদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। স্টুডেন্টস ফর ফেয়ার অ্যাডমিশনস (এসএফএফএ) নামের একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এ দাবি করেছে। এ অভিযোগে ১৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছে এসএফএফএ।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসএফএফএর তথ্যমতে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়। বিপরীতে এশীয় আমেরিকানদের কম যোগ্য মনে করে। এশীয় আমেরিকানদের ভর্তির ক্ষেত্রে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে বিশেষভাবে মূল্য দেওয়া হয়। আর এ ক্ষেত্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এশীয় শিক্ষার্থীদের নিম্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বলে মনে করে।

এসএফএফএর এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, বর্তমানে হার্ভার্ডে এশীয় আমেরিকান শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার বেড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, বর্তমানে হার্ভার্ডের মোট শিক্ষার্থীর ২২ দশমিক ২ শতাংশই এশীয়। বিপরীতে আফ্রিকান আমেরিকান শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আর হিস্পানিক কিংবা লাতিন শিক্ষার্থীর রয়েছেন ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। হার্ভার্ডে স্থানীয় আমেরিকান শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর আড়াই শতাংশ। তবে সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫০ শতাংশই শ্বেতাঙ্গ।

এ বিষয়ে করা মামলায় এসএফএফএ দাবি করেছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বর্ণের শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি ভারসাম্য আনার নীতি মেনে চলে। অথচ এটি হওয়া উচিত বর্ণনিরপেক্ষ। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে তারা ‘প্লাস ফ্যাক্টর’ অনুসরণ করে।

যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়াকে ‘প্লাস ফ্যাক্টর’ বলা হয়। এই নীতি অনুসরণের কারণে হার্ভার্ডে ভর্তিতে এশীয় আমেরিকানদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক শিক্ষার্থীরা বেশি সুবিধা পান বলে দাবি এসএফএফএর।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্যমতে, হার্ভার্ডে ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন এশীয় শিক্ষার্থীর ভর্তির সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। কিন্তু তিনি শ্বেতাঙ্গ হলে এই সম্ভাবনা বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়ায়। আর হিস্পানিক কিংবা আফ্রিকান হলে এই সম্ভাবনা বেড়ে যথাক্রমে ৭৫ ও ৯৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই যাবতীয় অভিযোগই অস্বীকার করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, এই গবেষণায় অনেক ত্রুটি রয়েছে। আর এ কারণেই এটি ভুল বার্তা দিচ্ছে। এ-সম্পর্কিত একটি বিবৃতিও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তাতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, হার্ভার্ড শুধু এশীয় আমেরিকানই নয়, কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করে না। গত এক দশকে হার্ভার্ডে এশীয় আমেরিকানদের ভর্তির হার বেড়ে ২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এসএফএফএ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই আইনি লড়াই নতুন নয়। ২০১৪ সালেও একই ধরনের অভিযোগে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এসএফএফএ। ২০১৬ সালে এ ধরনের আরেকটি মামলা করা হয়েছিল টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। সে সময় এক শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থী এই মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘প্লাস ফ্যাক্টর’-এর কারণে তিনি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আদালত সেই অভিযোগ নাকচ করে দেন। আদালতের ভাষ্য, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য ‘ইতিবাচক বৈষম্য’-এর প্রয়োজন রয়েছে।