নির্মম অভিবাসন নীতি থেকে সরে আসবেন ট্রাম্প?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছাড় না দেওয়া আরেকটি নীতির মধ্যে রয়েছে অভিবাসন নিয়ে কট্টর অবস্থান। হোয়াইট হাউসের এই ‘কোনো ছাড় না দেওয়া’র অবস্থানে অনিবন্ধিত মা-বাবা থেকে শিশুর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এখন সমালোচনার মুখে পড়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে যে বিতর্কিত এই নীতি রাজনৈতিকভাবে কতটা টেকসই হবে? বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসন নয়, ডেমোক্র্যাটদের ব্যর্থতা বলে ট্রাম্প যে দাবি করেছেন, এর কি কোনো রাজনৈতিক মূল্য ট্রাম্পকে দিতে হবে?

পরিবার থেকে শিশুকে বিচ্ছিন্ন করার নির্মম এই পদ্ধতির নৈতিক দিক বিবেচনার জোর দাবি উঠেছে।

শুধু ডেমোক্র্যাট নয়, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশসহ কয়েকজন খ্যাতিমান রিপাবলিকানও এর সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া ধর্মীয় নেতা ও ট্রাম্পের রক্ষণশীল প্রভাবশালী ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাও এর সমালোচনায় মুখর।

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত অভিবাসন নীতির ঘোর বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা। এ অবস্থায় ডেমোক্র্যাটদের টলাতে জনতার ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে ট্রাম্প সুবিধা হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছেন। ১৭ জুন টুইটারে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘সীমান্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের উচিত রিপাবলিকানদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। তোমরা নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার জন্য অপেক্ষা কোরো না। কারণ, তোমরা হারতে যাচ্ছ।’

সমালোচকদের যুক্তি, মা-বাবা থেকে শিশুকে বিচ্ছিন্ন করা নির্মম ও আমেরিকার রীতিবিরোধী। মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে বিষয়টি ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার আহ্বান জানান তাঁরা।

মা-বাবা থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করা নির্মম ও মার্কিন রীতিবিরোধী বলে সমালোচকদের যুক্তি। ছবি: রয়টার্স
মা-বাবা থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করা নির্মম ও মার্কিন রীতিবিরোধী বলে সমালোচকদের যুক্তি। ছবি: রয়টার্স

এ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ। তিনি সীমান্ত সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই সমর্থন করেন। তবে তিনি বলেন, ‘কোনো সহনশীলতা না দেখানোর নীতি নিষ্ঠুর ও অনৈতিক। এটা আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারের উচিত না শিশুদের বাক্সবন্দী করা অথবা তাদের এল পাসোর বাইরে মরুভূমিতে নিয়ে তাঁবুতে রাখার পরিকল্পনা করা। দুঃখজনক হলেও এই চিত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের জাপান-আমেরিকান বন্দিশালার কথা মনে করিয়ে দেয়। যেটি এখন আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম লজ্জার উপাখ্যান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’

বর্তমান ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি স্বামী ট্রাম্পের অবস্থানের—কেবল কংগ্রেসই শিশুর বিচ্ছিন্নকরণ থামাতে পারে—বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেননি। তাঁর যোগাযোগ পরিচালক স্টেফানি গ্রিশাম ১৭ জুন সিএনএনকে বলেন, ‘মিসেস ট্রাম্প মা-বাবা থেকে শিশুদের আলাদা দেখতে চান না এবং তিনি আশা করেন, শেষমেশ উভয় পক্ষ ঐক্যবদ্ধভাবে অভিবাসন সংস্কার বিষয়ে একটা সাফল্য অর্জন করবে।’

কার্ডিনাল টিমোথি ডোল্যান ও ফ্রাঙ্কলিন গ্রাহামসহ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ধর্মীয় নেতারাও গত সপ্তাহে এ অভিবাসন নীতির সমালোচনা করেছেন। বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষোভ বাড়া সত্ত্বেও এটি অস্পষ্ট যে ট্রাম্প তাঁর অবস্থান বদল করবেন কি না। কারণ, সেটা তাঁর জন্য ঝুঁকিও বয়ে আনবে। প্রেসিডেন্টের এটা ভাবা বিস্ময়কর হবে না যে গণমাধ্যমের ক্রমবর্ধমান চাপ ও উদারপন্থীদের সমালোচনার মুখে তিনি অবস্থান বদল করলেও তা ভালো ফল নাও আনতে পারে।

এ পরিস্থিতে অভিবাসন বিতর্কে সিএনএনের ১৯ জুন ট্রাম্প ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করার কথা।

এদিকে প্রতিনিধি পরিষদ ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) কর্মসূচির সুবিধাভোগী (কাগজপত্র ছাড়াই অভিবাসী হিসেবে যেসব শিশু আমেরিকায় এসেছে), ট্রাম্পের সীমানাদেয়াল ও অভিবাসন আইনের সংস্কার বিষয়ে একটি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।

ট্রাম্পের কৌঁসুলি কেলিয়েন কোনওয়ে এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কেউই এ নীতি পছন্দ করেন না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ট্রাম্প এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটিকে একটা সুবিধা হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন।

তবে ট্রাম্পের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন এবিসি টেলিভিশনকে বলেন, সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে অনড় থাকবেন। তিনি আরও সতর্ক করেন, ডাকা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধানসংবলিত যেকোনো বিল কেবল অগ্রহণযোগ্য নয়, তা ট্রাম্পের ভিত্তিতে নাড়া দিতে পারে। এ কারণে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ৫০টি আসন হারাতে পারে। ব্যানন বলেন, ট্রাম্পের উচিত তাঁর অভ্যন্তরের ডাক শোনা।

সরকারের উচিত না শিশুদের বাক্সবন্দী করা বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ। ছবি: রয়টার্স
সরকারের উচিত না শিশুদের বাক্সবন্দী করা বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ। ছবি: রয়টার্স

প্রতিনিধি পরিষদে এ সপ্তাহে পরিবার থেকে শিশুর বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে একটি বিলের ওপর ভোটাভুটি হতে পারে। এই বিল আদালতের আগের আদেশ পাল্টে দেবে এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হেফাজতে থাকা শিশুরা অনির্দিষ্টকাল মা-বাবার সঙ্গে থাকতে পারবে। তবে এটা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সীমান্ত পেরিয়ে আসা মা-বাবাকে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি করার ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান পদ্ধতি বাতিল করতে পারবে না। ট্রাম্প প্রশাসন এ পদ্ধতি অব্যাহত রাখলে মা-বাবা থেকে শিশুকে আলাদাই থাকতে হবে।

আইনপ্রণেতারা অনুমান করতে পারছেন না যে ট্রাম্প এ-সংক্রান্ত বিলে সই করবেন কি না। ১৫ জুন ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, সে রকম কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। কিন্তু তার নয় ঘণ্টা পরই হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ বিষয়ে রিপাবলিকানদের দুটি বিলে ট্রাম্প সমর্থন দিয়েছেন।

তিনটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, অভিবাসন বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করতে ১৯ জুন ক্যাপিটলে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা।

ট্রাম্পের জোরালো সমর্থন থাকলে পরিষদের রক্ষণশীল ফ্রিডম ককাসের সমর্থন পাওয়া সহজ হবে। হাউস ফ্রিডম ককাসের চেয়ারম্যান মার্ক মিডোস ১৫ জুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিবাসন বিষয়ে রিপাবলিকান সম্মেলনে দিন শেষে তাঁর (ট্রিম্প) কণ্ঠই অন্য যে-কারও কণ্ঠের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাই আপনাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।’