তমিজ উদ্দীন লোদীর দুটি কবিতা

নিউইয়র্কে গ্রীষ্ম

অভিবাসী রোদ নেমেছে অতলান্তিকের পারে। ন্যাড়া গাছগুলো আড়মোড়া ভেঙে সবুজের চাদর নামিয়েছে। কিছু রোদ আটকে আছে স্কাইস্ক্র্যাপারের ছাদে। হাইড্রান্ট খুলে গেছে। আর খাটো পোশাকের রমণীরা বেরিয়ে পড়েছে প্রশস্ত রাস্তায়।
সৈকত তেতে আছে। অস্থায়ী রেস্তোরাঁগুলো ইতিমধ্যেই ভিড়াক্রান্ত। কারা যেন এরই মধ্যে বিয়ারের বোতল ভেঙেছে। সৈকতে শুয়ে আছে বিবসনা নারী। খুব নির্বিকার দেখিয়ে যাচ্ছে দেহসম্পদ তার।
আর এদিকে অভিবাসী মানুষেরা দৌড়াচ্ছে জীবিকার খোঁজে। পুঁজিবাদী পুঁজ নামছে শ্রমে ও ঘামে। ভোর মাড়িয়ে নামছে একদল বোতল কুড়োনি। ম্যানহাটানের যান্ত্রিক উত্তুঙ্গের পাশে বাজছে টমটম, ঘোড়ার খঞ্জনি। অদূরে ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টির’ কাঁধে বসে আছে শিকারি সিগাল।
সাবওয়ে-জুড়ে স্প্যানিশ সুরের তান। গিটার ঝুলিয়ে কাঁধে ঝাঁকড়াচুলো যুবক কি রমণী। ছড়িয়ে পড়ে সুর প্রশস্ত প্ল্যাটফর্মে। বুঁদ হয়ে দোলে তারা। ঝরে পড়ে কয়েন ও ডলার। ঝরে পড়ে স্বপ্নের তুলো।
আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর লিবার্টির স্বাদ চেখে চেখে
নিউইয়র্ক, আমেরিকা দুঃখবোধ গুপ্ত করে রাখে।

যেন স্তব্ধতায় ঢেকে যাচ্ছে সব
যেন স্তব্ধতায় ঢেকে যাচ্ছে সব
উচ্ছ্বাসগুলো ডুবে আছে জলে।
উৎকণ্ঠায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সময়
ঢলে পড়ছে গোধূলিতে সূর্য—
ঢলে পড়ছে যন্ত্রণায় অসাড় দিনগুলো।
চারপাশে ঠোঁটে আঙুল রেখে দাঁড়িয়ে আছে এক বা একাধিক মৌন
দাঁড়িয়ে আছে নৈর্ব্যক্তিক কিংবা তন্ময় কিছু আয়ত চোখ
দাঁড়িয়ে আছে শ্রুতিযন্ত্র, কান
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মতো বিশাল শূন্যতার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে
শ্রুতি, দৃষ্টি ও মৌনতা।
আর অঝোর অ্যাসিড-বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে তামাভ্র মাটির রুক্ষতা।