জটিলতা বাড়াচ্ছে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি

চাপে পড়ে মাথা নোয়ালেও ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নতুন করে রাজনৈতিক ও আইনি জটিলতা তৈরি করবে বলে মনে করছেন সমালোচকেরা। ছবি: রয়টার্স
চাপে পড়ে মাথা নোয়ালেও ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নতুন করে রাজনৈতিক ও আইনি জটিলতা তৈরি করবে বলে মনে করছেন সমালোচকেরা। ছবি: রয়টার্স

চাপে পড়ে মাথা নোয়ালেও ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নতুন করে রাজনৈতিক ও আইনি জটিলতা বাড়াবে বলে মনে করছেন সমালোচকেরা। আজ বৃহস্পতিবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে আটক পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘরে-বাইরে প্রচণ্ড সমালোচনার পর অভিবাসী শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে হোয়াইট হাউস।

গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে ওই নির্বাহী আদেশে সই করার পর ট্রাম্প বলেন, এ সিদ্ধান্ত অনেক মানুষকে খুশি করবে।

তবে সিদ্ধান্তটি এক নতুন জটিলতার সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। কেননা ওই ঘোষণার পর হোয়াইট হাউসই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে। এর আগে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না বলেই জানিয়ে আসছিল হোয়াইট হাউস এবং অরাজকতার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করছিল। আশা করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি অভিবাসন বিলে ভোট দিয়ে কংগ্রেস এই সংকটের সমাধান করবে। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ বিষয় হলো, গত ৫ মে থেকে ৯ জুনের মধ্যে মোট ২ হাজার ২০৬ জন কারাবন্দী বাবা-মায়ের কাছ থেকে ২ হাজার ৩৪২ জন শিশুকে আলাদা করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে—এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই।

গতকাল সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, যাঁদের ইতিমধ্যে আলাদা করা হয়েছে, তাঁদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে নির্বাহী আদেশে কোনো নির্দেশনা নেই।

সিএনএনের প্রতিবেদক অ্যান্ডারসন কুপারকে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের সাবেক পরিচালক জন স্যান্ডওয়েগ বলেন, ‘আমি মনে করি বিষয়টি পরিবর্তন করতে হবে, তবে এর মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি আছে। যেভাবে এটার খসড়া করা হয়েছে, তাতে এটা বাস্তবায়ন করা যাবে না বলেই আমি মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এটা দেখে সত্যিই কষ্ট পাচ্ছিলাম যে তাদের এক করা হচ্ছে না। আমার ধারণা ছিল পুরো ব্যাপারটিই সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মাকে এক করার জন্য করা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে আগে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হলে প্রথমবার অনুপ্রবেশকারীদের আদালতের মুখোমুখি করে ছেড়ে দেওয়া হতো। চলতি বছরের এপ্রিলে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় নতুন ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি প্রকাশ করে। এতে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার এবং কারাগারে পাঠানোর কথা বলা হয়। তবে শিশুদের যেহেতু কারাগারে রাখার নিয়ম নেই, তাই তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার কথা বলা হয়। এরপর আলাদা করা শিশুদের কান্না, বাবা-মায়ের কষ্টের ছবি প্রকাশ হতে থাকে গণমাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা। নিজ দলের নেতাদের তোপের মুখেও পড়েন ট্রাম্প। এমনকি ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। মেলানিয়া এই ব্যবস্থাকে অনৈতিক বলে মনে করেন। আর এরপরই চাপের মুখে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের নতুন আদেশের ফলে অবৈধ অভিবাসী শিশুদের আলাদা না করে তাদের পরিবারের সঙ্গেই রাখা হবে। আর শিশুদের ২০ দিনের বেশি আটক না রাখার আদেশ সংশোধন করতে আদালতের কাছে আবেদন করা হবে।

গতকাল নির্বাহী আদেশে সইয়ের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আজ আমি এই নির্বাহী আদেশে সই করলাম। আমরা তাদের পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে রাখতে চাচ্ছি। তবে সীমান্তে কঠোর অবস্থা আগের মতোই থাকবে।’
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচকেরা বলেন, তিনি পরিবার আলাদা করার বদলে পুরো পরিবারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাজতে ভরার আদেশে সই করলেন। সমালোচকেরা বলছেন, যখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ বলছে অভিবাসীদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে রাখা হবে, তখন অন্য দেশগুলো কী মনে করবে। তারা তো এই সংকেতই পাচ্ছে যে অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তোমরা এমন ব্যবহার করতে পারো।