সীমান্তে আটক শিশু পরিদর্শনে মেলানিয়া, জ্যাকেট নিয়ে সমালোচনা

শিশুদের আটককেন্দ্রে কর্মীদের দেওয়া তথ্য জেনে নিচ্ছেন মেলানিয়া ট্রাম্প। ওই সময়ে তাঁর পরনে জ্যাকেটটি ছিল না। ছবি: রয়টার্স
শিশুদের আটককেন্দ্রে কর্মীদের দেওয়া তথ্য জেনে নিচ্ছেন মেলানিয়া ট্রাম্প। ওই সময়ে তাঁর পরনে জ্যাকেটটি ছিল না। ছবি: রয়টার্স

গত কয়েক দিন ধরেই বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচনায় রয়েছে অভিবাসন-প্রত্যাশী মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা শিশুদের কান্না। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে গ্রেপ্তার হওয়া অবৈধ অভিবাসন-প্রত্যাশীদের কাছ থেকে তাঁদের সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করে খাঁচার মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। যদিও গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে আটক অভিবাসীদের সঙ্গে শিশুদের একসঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শুরু থেকেই এই শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার নীতির বিরোধিতা করেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। তবে একটি জ্যাকেট পরাকে কেন্দ্র করে এই ইস্যুতে সেই মেলানিয়াও বিতর্কের মুখে পড়লেন। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ওই শিশুদের আটককেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা শিশুদের পরিবারে ফিরিয়ে দিতে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন সেখানে।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, উড়োজাহাজে ওঠার সময় তাঁর জ্যাকেট পরা ছবিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর তা ভাইরাল হয়ে যায়। টেক্সাস থেকে ওয়াশিংটনে ডিসিতে ফেরার পথে তাঁর গায়ে জ্যাকেটটি দেখা যায়। তবে শিশুদের আটককেন্দ্রে তিনি বাদামি রঙের পোশাক পরা ছিলেন। ওই সময়ে পরনে জ্যাকেটটি ছিল না।
শিশুদের আটককেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি মেলানিয়া।

টেক্সাস থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার পথে উড়োজাহাজে ওঠার সময়ের ছবিতে দেখা যায়, মেলানিয়ার পরনে ছিল জলপাই রঙের জ্যাকেট। তবে জ্যাকেটের রং নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই। কারও কারও আপত্তি জ্যাকেটের পেছনের গ্রাফিতি নিয়ে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার, ডু ইউ?’ (আমি আসলেই পাত্তা দিই না, আপনি?)। ঠিক এমন একটি জায়গায় এমন গ্রাফিতির জ্যাকেট পরার জন্য বেছে নেওয়ায় মেলানিয়ার সমালোচনায় মেতেছেন অনেকে।

‘আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার, ডু ইউ?’ জলপাই রঙের এই জ্যাকেট পরা নিয়ে সমালোচনার শিকার হন মেলানিয়া ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
‘আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার, ডু ইউ?’ জলপাই রঙের এই জ্যাকেট পরা নিয়ে সমালোচনার শিকার হন মেলানিয়া ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

তবে মোলানিয়ার মুখপাত্র স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘জ্যাকেটে এই লেখার পেছনে কোনো লুক্কায়িত বার্তা নেই।’ 
নারীদের পোশাকের প্রতিষ্ঠান জারার এই জ্যাকেটের দাম ৩৯ ডলার (৩ হাজার ২০০ টাকার বেশি)। মেলানিয়ার জ্যাকেটটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এই ধরনের স্থানে গিয়ে এমন জ্যাকেট পরা একেবারেই বেখাপ্পা আচরণ। আবার অনেকের মতে, এতে লুক্কায়িত কোনো বার্তা নেই।

তবে এই অবস্থায় স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্প। আজ শুক্রবার ভোরে টুইটারে স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমি আসলেই পাত্তা দিই না, আপনি? মেলানিয়ার জ্যাকেটের পেছনের এই লেখাটি ভুয়া সংবাদমাধ্যমগুলোর উদ্দেশে। মেলানিয়া বুঝে গেছেন তারা কতটা অসৎ এবং সত্যিই তিনি এসব আর পাত্তা দেন না!’

ডেনিজকান গ্রিমস নামের একজন টুইট করেছেন এই বলে, ‘সোজা একটি কথা ভাবুন, মেলানিয়া হঠাৎ করে ৩০ ডলারের এই জ্যাকেট পরেননি। এই যাত্রায় তাঁর চারপাশে দামি অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের পোশাক ছিল। তিনি ইচ্ছা করেই এটি পরেছিলেন।’

ওয়াশিংটনে বিবিসি ওয়ার্ল্ডের সংবাদ উপস্থাপক ক্যাটি কের মতে, জায়গা বুঝে পোশাক নির্বাচন করা উচিত ছিল মেলানিয়ার। মেক্সিকো সীমান্তে শিশুদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর বিষয়টি এই জ্যাকেটের কারণে ম্লান হয়ে গেছে। তিনি টেক্সাস উড়ে গেছেন কষ্ট করে, শিশুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, শিশুদের হৃদয়বিদারক গল্প শুনছেন—এ সবকিছুই তাঁর পোশাক বিবেচনায় উদাসীনতার কারণে চাপা পড়ে গেছে। কিছু না ভেবেই তিনি যদি এই জ্যাকেট পরে থাকেন তবে বলতে হবে, কোনো কিছু অনুধাবনে তাঁর সমস্যা রয়েছে।


মেলানিয়া ট্রাম্পের পোশাকের ব্যাপারে এমন সংবাদ পরিবেশনে তাঁর মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম মার্কিন গণমাধ্যমকে একচোট নেন। টুইটারে তিনি বলেন, ‘টেক্সাসে ওই শিশুদের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রভাব অসাধারণ। তিনি কী পরেছেন তার চেয়ে শিশুদের সাহায্য করার জন্য তাঁর (মেলানিয়া ট্রাম্প) তৎপরতার ওপর যদি গণমাধ্যম তাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করত, তাহলে আমরা শিশুদের পক্ষে রুচিসম্মত কিছু পেতাম’।


অবৈধ অভিবাসন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই ট্রাম্প ২০১৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে অভিবাসন-বিরোধিতা এখনো প্রবল। তবে গত কয়েক দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনবরত ক্রন্দনরত শিশুদের ছবি প্রচারের ফলে দেশে-বিদেশে সব মহল থেকেই তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন।
গত বুধবার এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে গ্রেপ্তার অবৈধ অভিবাসন-প্রত্যাশীদের কাছ থেকে তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিচ্ছিন্ন করার নীতি সাময়িকভাবে রদের সিদ্ধান্ত নেন। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে এখন সীমান্ত এলাকায় আটক অভিবাসীদের সঙ্গে তাঁদের শিশুদেরও রাখা হবে। আদেশে ট্রাম্প এসব বহিরাগত লোকজনের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করারও নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে আটক শিশুদের ২০ দিনের মধ্যে মুক্ত করার জন্য বিদ্যমান আইনের বিরুদ্ধে আপিল করতেও তিনি বিচার বিভাগকে নির্দেশ দেন।