থামছেই না ট্যাক্সিক্যাব চালকদের আত্মহত্যা

নিউইয়র্কে আরও একজন ক্যাবচালক আত্মহত্যা করেছেন। আবু সালেহ (৫৯) নামের এই ক্যাবচালককে ১৫ জুন তাঁর ব্রুকলিনের অ্যাপার্টমেন্টে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ইয়েমেন থেকে আসা এই অভিবাসী গত ৩০ বছর নগরীতে ক্যাব চালিয়ে আসছিলেন।
পেশাগত সংকট আর অর্থনৈতিক টানাপোড়েন গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ছয়জন ক্যাবচালক আত্মহত্যা করেছেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে নগরীর ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশনের প্রধানকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে কংগ্রেসম্যান অ্যাড্রিয়ানো এসপায়লেট। পেশাগত সংকটে পড়া ক্যাবচালকদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য হটলাইন খোলা হয়েছে। আত্মহত্যা থেকে রক্ষার জন্য জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ লাইফলাইনে ফোন দেওয়ার জন্যও ক্যাবচালকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

উবার, লিফটসহ অ্যাপসভিত্তিক ক্যাব সড়কে নামার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্ক নগরীতে ক্যাবচালকদের দুর্দশা নেমে আসে। ক্যাবচালকেরা আগে দিনে ১০ ঘণ্টার শিফটে কাজ করে ৫০০ ডলার আয় করতে পারতেন। তাঁদের আয় দ্রুত কমতে থাকে উবার বা লিফট সড়কপথে দখল নেওয়ার পর। এখন ক্যাব পেশাদার চালকেরা দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করেও লিজের অর্থ ওঠাতে পারেন না। নিউইয়র্কে হলুদ ক্যাবে দুই ধরনের চালক আছেন। এক দল ক্যাব চালনার জন্য মেডালিয়ন ভাড়া গ্রহণ করেন। এ দল মন্দা ব্যবসার কারণে লিজের অর্থ ওঠাতে পারেন না। অন্য দল জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে মিলিয়ন ডলার দিয়ে মেডালিয়ন কিনেছিলেন। এখন মেডালিয়নের মূল্য নেমে এসেছে দুই লাখ ডলারের নিচে। এদের মেডালিয়নের বিপরীতে পাঁচ-ছয় লাখ ডলারের ব্যাংকঋণ রয়েছে। ক্যাবচালকেরা ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছেন না। অনেকেই ব্যাংকঋণের বোঝা সামাল দিতে গিয়ে বাড়িঘর খুইয়েছেন।
একের পর এক ক্যাবচালকদের আত্মহত্যায় টানা আন্দোলনে নেমেছে ট্যাক্সি ওয়ার্কার অ্যালায়েন্স। সংগঠনের পরিচালক ভৈরবী দেশাই বলেছেন, অবিলম্বে নিউইয়র্কের ক্যাবচালকদের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে নগর কর্তৃপক্ষ নজর না দিলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। ট্যাক্সি অ্যালায়েন্স দাবি জানাচ্ছে, নগরীতে ক্যাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হোক। ভাড়ায় সমতা আনা হোক। নগরের নিজস্ব আইকন হলুদ ট্যাক্সি বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হোক। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া ব্যাংক বা ঋণ দাতাদের অর্থ আদায়ে কড়াকড়ি না করে কিস্তি সহজ এবং সুদ মওকুফ করা হোক।
নগরীর ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশন থেকে ১৬ জুন দেওয়া এক বার্তায় আবু সালেহের মৃত্যুকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করা হয়েছে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে আছেন, এমন ক্যাবচালকদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য ৭১৮-৩৯১-৫৫৩৯ ফোন নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। নিজে বা পরিচিত কেউ আত্মহত্যাসংক্রান্ত দুর্ভাবনায় ভুগলে, জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ লাইফলাইনের ১-৮০০-২৭৩-৮২৫৫ নম্বরে ফোন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একের পর এক ট্যাক্সিচালকের আত্মহত্যার পর নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষকে। নিউইয়র্ক টাইমস গত ১ মে লিখেছে, নিউইয়র্কে উবার ও লিফটের লাইসেন্স প্রদান সীমিত করার কথা ভাবছেন মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। এর মধ্যেই নগরীর ১৪ হাজার হলুদ ট্যাক্সি মেডালিয়ন আপাতত আর বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হলুদ ট্যাক্সিচালকদের সংকট কাটানোর জন্য উপায় খুঁজছেন মেয়র ও অন্য আইনপ্রণেতারা।
পেশাগত সংকটে ক্যাবচালক আবু সালেহের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিউইয়র্কে এ পেশাজীবীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। শনিবার সকালেই হাজারো ক্যাবচালক ভিড় করেন আবু সালেহ যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন, তার আশপাশে। অনেককেই কাঁদতে দেখা গেছে। আবু সালেহের সাবেক এক সহকর্মী ইসরাত চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আবু সালেহ আয় আর ব্যয় সামাল দিতে পারছিলেন না। ইয়েমেন থেকে আসা সালেহকে দেশে পরিবারের জন্য অর্থ পাঠাতে হতো। তাঁর আরেক সহকর্মী বলেছেন, এই তীব্র চাপে সম্প্রতি আবু সালেহ নেশা করতে শুরু করেন।
১৬ জুন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান অ্যাড্রিয়ানো এসপায়লেট এক বিবৃতিতে নগরীর ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশনের প্রধান মিরা জোশিকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে ক্যাবচালকেরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। কংগ্রেসম্যান এসপায়লেট বলেন, মিরা জোশি অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন। কারণ, তিনি নগরীর ট্যাক্সি ক্যাব ও চালক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছেন। অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করে এবং বাস্তবতার বাইরে ট্যাক্সি মেডালিয়নের মূল্য নির্ধারণ করে পরিস্থিতিকে নাজুক করা হয়েছে।