ট্যাক্সিচালকদের আত্মহত্যা 'মানসিক রোগ' থেকে

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নিউইয়র্কে ছয়জন ট্যাক্সিচালক আত্মহত্যা করেছেন। সর্বশেষ আবদুল সালেহ নামে ইয়েমনের এক নাগরিক এই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। একের পর এক এই আত্মহত্যার ঘটনায় ট্যাক্সিচালকের পেশাটিকেই এখন অনেকে ভয় পেতে শুরু করেছেন। এ অবস্থার জন্য নগর প্রশাসনের বিভিন্ন নিয়মকে দুষছে ট্যাক্সি চালকদের বিভিন্ন সংগঠন। যদিও নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র ট্যাক্সি চালকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার জন্য ‘মানসিক অসুস্থতা’কে দায়ী করেছেন।

সর্বশেষ আত্মহত্যা করা আবদুলের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে তিনি তাঁর ট্যাক্সির মাসিক ভাড়া পরিশোধ করতে পারছিলেন না। জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করাই তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। এ থেকে সৃষ্ট হতাশা ও ক্ষোভ থেকেই তিনি আত্মহত্যা করেন।

নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার অ্যালায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও এই বিষয়টিকেই কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ভৈরবী দেশাই আবদুল সালেহের আত্মহত্যাকে নগর প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া রীতির ফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, ‘নগর প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন রীতি-নীতির কারণেই এমন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এগুলো রীতিমতো হত্যাকাণ্ডের সমতুল্য। (এই প্রবণতা থামাতে হলে) বিদ্যমান নিয়মের কিছু একটা পরিবর্তন করতেই হবে।
যদিও নগরের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এই আত্মহত্যার পেছনে বড় কারণ হিসেবে ‘মানসিক সমস্যা’র কথা বলছেন। ১৯ জুন সিটি হলে মাদক আইন পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিশেষ এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ডি ব্লাজিও বলেন, ‘নগর কর্তৃপক্ষ খুবই দুঃখের সঙ্গে এই সব আত্মহত্যার খবরগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। অবশ্যই কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে কাজ করছে। তবে সবার আগে দরকার আত্মহত্যার প্রবণতা বন্ধ হওয়া।’
এক সাংবাদিক ট্যাক্সি চালকদের আত্মহত্যার পেছনে ‘অর্থনৈতিক দুর্দশা’কে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করলে মেয়র বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে, যখন কেউ অর্থনৈতিক দুর্দশায় থাকে, তখন সেটা তার মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। এর জন্য আমাদের মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। কেউ এমন বিষাদগ্রস্ত থাকলে কিংবা কারও মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা দেখলে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে। বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো কাউন্সেলিংসহ প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা করবে। এসব হাসপাতালে মানসিক সেবার জন্য আলাদা ইউনিট খোলা আছে।’
এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উবার ও লিফটের মতো অ্যাপভিত্তিক গাড়িসেবা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, ‘এটা মানছি যে, অনেক গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। এতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এটা রোধ করতে আমরা এখন কাজ করছি। আত্মহত্যার ঘটনা ও অ্যাপভিত্তিক গাড়িসেবা ও ভাড়া গাড়ির বিষয়ে পৃথক তদন্ত চলছে। ইউএস অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে একটি তদন্ত চলছে। এর প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই নগর প্রশাসন তার করণীয় ঠিক করবে।’
এদিকে ট্যাক্সি অ্যালায়েন্সের প্রধান ভৈরবী দেশাই বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক শহর থেকে উবার ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। বহু স্থানে রাস্তায় গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। আমরা নিউইয়র্কে এটা হতে দিইনি। বরং আমরা উবার-লিফটকে আমাদের সঙ্গেই রেখেছি। আমাদের রীতি-নীতির মধ্যেই রেখেছি। কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষের নীতিমালার অভাবেই আজ এত মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত। নির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে শুধু ট্যাক্সি চালকরই নয়, উবার-লিফটও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা উবার-লিফটকে উঠিয়ে ফেলতে বলছি না। কিন্তু আমরা চাই, এই শহরে আমাদের ভাইয়েরা যেন খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারে। তারা যেন অর্থনৈতিক কষ্টে গৃহহীন হয়ে না পড়ে। তারা যেন এমন অর্থনৈতিক বৈষম্যে না পড়ে, যাতে তাদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।’