নাগরিকত্ব নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের নতুন ফন্দি

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

গ্রিনকার্ডধারীদের আমেরিকার নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অহেতুক বিলম্ব করার অভিযোগ উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতির কারণে গ্রিনকার্ডধারীরা আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে নাগরিকত্ব পাচ্ছেন না। তল্লাশি আর প্রশাসনিক মারপ্যাঁচের মাধ্যমে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করাই এমন ধীর গতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন গ্রুপ। আবেদন করার পর নাগরিকত্বের পরীক্ষায় বসতে অভিবাসীদের ২০ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
আমেরিকায় এই মুহূর্তে ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ নাগরিকত্ব পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনার কারণে তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ ঝুলে আছে। ২০১৫ সালের তুলনায় এই অপেক্ষমাণ তালিকা ৮৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ওবামার শেষ সময়ে এই ঝুলে থাকা নাগরিকত্বের আবেদন ছিল মাত্র ৩ লাখ ৮৮ হাজারের কিছু বেশি।
ঝুলিয়ে রাখা নাগরিকত্বের আবেদনের মধ্যে বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্য আবার ডেমোক্রেটিক দল সমর্থিত।

এমনকি আলাবামা, হাওয়াই, নেভাডা, নিউ মেক্সিকো, ইউটা ও পেনসিলভানিয়ায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষের নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আর ঝুলিয়ে রাখা অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসি, ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ড, আলাবামা, কলোরাডো, ইলিনয়, আইওয়া, কানসাস, লুইজিয়ানা, মেইন, ম্যারিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, মিনেসোটা, মিশিগান, নিউইয়র্ক, রোড আইল্যান্ড, ইউটা, টেনেসি, টেক্সাস, ওয়াশিংটন, উইসকনসিন অন্যতম।
নিউজার্সি ডট কম নামের একটি স্থানীয় অনলাইন দাবি করেছে, কেবল নিউজার্সিতে ৩০ হাজার অভিবাসীর নাগরিকত্বের আবেদন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ন্যাশনাল পার্টনারশিপ ফর নিউ আমেরিকানস নামের একটি গ্রুপ দাবি করেছে, অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন দ্বিতীয় দেয়াল নির্মাণ করে রেখেছেন। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট জসুয়া হট এনবিসিনিউজের কাছে অভিযোগ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প রেকর্ড পরিমাণ নাগরিকত্বের আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছেন এবং এ ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে যেন এসব নতুন নাগরিক ভোট দিতে না পারেন, তাঁর প্রশাসন সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে।
২০১৭ সালে ৯ লাখ ২৫ হাজার মানুষ তাদের স্থায়ী বসবাসের সময়সীমা পার করে স্থায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করে রেখেছে। অনেকেই নাগরিকত্বের পরীক্ষা দেওয়ার আশায় ২০ মাসের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখনো পরীক্ষার ডাক পাচ্ছেন না। পরীক্ষার জন্য সবাই ৭৩০ মার্কিন ডলার করে পরিশোধও করেছেন।
অভিবাসন দপ্তরের মুখপাত্র মিশেল বারস অবশ্য দাবি করেছেন, এই বর্ধিত আবেদনের সংখ্যা নিয়ে কিছুটা মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যার পেছনে উন্মুক্ত সীমান্ত আন্দোলনের কর্মীরা জড়িত। তিনি বলেন, ‘বিষয়টা এমন নয় যে, নাগরিকত্বের আবেদনের হার বেড়েছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ আবেদন পড়ে, গড় গড়পড়তায় এখনো সেই পরিমাণ আবেদন পড়ছে। তবে গণহারে অভিবাসনে পক্ষে যারা ওকালতি করে, তারাই বিষয়টি সামনে এনে একটা বিভ্রান্তিকর আওয়াজ তুলতে চাইছে।
অভিবাসন দপ্তর ইউএসসিআইএস তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দাবি করছে, প্রতি বছর তারা ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখের বেশি নাগরিকত্বের আবেদন নিষ্পত্তি করেন। ২০১৭ সালে ৭ লাখ ১৬ হাজার নাগরিকত্বের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
অভিবাসন অধিকার গ্রুপের কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, সরকারি দপ্তর নাগরিকত্ব ঝুলিয়ে রাখার এই বাস্তবতা অস্বীকার করে লাখ লাখ অভিবাসী মানুষের মনে বেশ আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। কেননা, তারা আগামী নির্বাচনে তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। একই সঙ্গে এই আবেদনকারীদের অনেকেই বিতাড়নের খপ্পরে পড়েন কিনা, সেই অভিযোগও তুলেছেন তারা।
কোয়ালিশন ফর হিউম্যান ইমিগ্রান্টস রাইটস নামক একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এনজেলিকা সালাস আইন প্রণেতাদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স অভিযোগ করছিলেন, বাস্তবতা হলো, একজন অভিবাসীকে ২০২০ সালের নভেম্বরে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হলে তাকে আগামী ৬০-৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। যে হারে নাগরিকত্বের আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে, তাতে কেউ সে সময়ে ভোট দেওয়ার সমর্থ অর্জন নাও করতে পারে।