বন্ধ হয়ে যাবে দরজা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে একের পর এক (অ)জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন। অন্যের জন্য সে দেশে আসার পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আমেরিকার সাধারণ মানুষ হয়তো বুঝে-না বুঝে হাততালি দিচ্ছেন। আর তাতেই আরও উদ্বাহু হয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আজকের আমেরিকা ধীরে ধীরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ট্রাম্পের পূর্বসুরীরা। সেখানে আমেরিকার সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুর অধিকার ইত্যাদি শব্দগুলো একাকার হয়ে গেছে।
এখন ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ও কঠিন করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অথচ এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে বেশি বিদেশি আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়ে আসছেন। ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’-এর সুযোগটি বেশি লোক নিলেও বিষয়টি জলের মতো সরল নয়। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট যুক্তি ও প্রমাণ দিতে হয় আবেদনকারীকে। নিরুপায় হলেই একমাত্র কেউ নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় চাইতে পারে। আর যদি বিশ্ব পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে ১৯৪১ সালে সারা বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশ ছিল মাত্র ১২টি। আর ২০০০ সাল নাগাদ এর বিস্তৃতি এতটাই ঘটে যে, সে সময় পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র আটটি দেশ ছিল, যেখানে কখনো কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু এখন এই পালে যেন উল্টো হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। না এমন নয় যে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর বড় অংশ নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করে একনায়কতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রমাণ করে, বিশ্ব স্থিতিশীল হওয়ার পরিবর্তে আরও কত অস্থির হয়ে উঠছে। আর সে কারণেই বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে বেছে নিতে চাইছে। এর মধ্যে কিছু ব্যত্যয় থাকলেও এটা নিশ্চিত যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আবেদনকারী নিয়ম মেনেই আশ্রয় চেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ‘স্বপ্নের’ (কল্পিত) আমেরিকা গড়ে তুলছেন, যেখানে কারও আশ্রয় নেই। কিন্তু দুর্বল, নিরাপত্তাহীন, নিরাশ্রয়কে আশ্রয় দেওয়াই তো আমেরিকার সংবিধান ও অভিবাসন আইনের অন্যতম মূল ভিত্তি। দেশটির আজকের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বা শাসকদের অভিবাসনের ইতিহাস উল্লেখ না করেই সবাইকে বাদ দিয়ে নিজে মহান হওয়ার যে স্বপ্ন দেশটির শাসক দেখাচ্ছেন, তা আসলে কতটা যৌক্তিক— সে প্রশ্ন তোলাই যায়। বড় হওয়ার একমাত্র পন্থা নিঃস্বার্থ হওয়া। আর সেই পথটিই ট্রাম্প বন্ধ করে দিয়েছেন।
ট্রাম্প জমানার সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্মের এক-তৃতীয়াংশের কম মনে করে গণতন্ত্র অপরিহার্য। বিপদ আসলে এখানে। জনমোহিনী মুখোশ পরে গণতন্ত্রের হাত ধরে দেশটি একনায়কের খপ্পরে পড়তে চলেছে। দেশটি যেহেতু আমেরিকা, সে জন্য বিপদটাও দেশকালের সীমা ছাড়িয়ে যায়। স্বাধীনতার ২৫০ বছরে এই আমেরিকাকে কেউ দেখতে চায় না।