যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কে চিড়

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এক মাসও হয়নি, যখন সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার কর্তৃত্ববাদী নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের ‘নয়া দিগন্ত’ উন্মোচিত হয়েছে।


ওয়াশিংটন থেকে সিএনএন জানায়, উত্তর কোরিয়া গত শনিবার উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ-সম্পর্কিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘দুর্বৃত্তসুলভ মনোভাব’ দেখানোর জন্য অভিযুক্ত করে। অভিযোগটি আলোচনা সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। পম্পেও আলোচনাটিকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

এই পরস্পরবিরোধী কথা থেকে স্পষ্ট হয়, দেশ দুটি অভিন্ন অবস্থানে নেই। এটি পিয়ংইয়ং থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ছাড় আদায়চেষ্টার ব্যাপারে প্রশ্ন জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি গত মাসে ট্রাম্প ও কিমের মধ্যকার চুক্তির প্রতি দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাকটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

সিএনএনের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক বিশ্লেষক জোসেফ ইউন বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি মৌলিক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো মনে করে, আমরা তাদের (উত্তর কোরিয়াকে) কোনো বড় পুরস্কার দেওয়ার আগে উত্তর কোরিয়া যথেষ্ট পরিমাণে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করবে। পক্ষান্তরে উত্তর কোরিয়া বিশ্বাস করে, উভয় পক্ষের একত্রে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন এবং উভয়কেই ছাড় দিতে হবে।’

ইউন উত্তর কোরিয়ার নীতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক কূটনীতিক।

উত্তর কোরিয়ার তিরস্কার—এবং তাঁর প্রচেষ্টার ফল হিসেবে উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন ছাড়াই পম্পেওর বৈঠক ত্যাগ—ইঙ্গিত দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং উত্তর কোরিয়াই সমঝোতার শর্ত ঠিক করে দিচ্ছে।

পম্পেওর সফর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানেন—এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরাসরি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন কয়েকটি বিষয়ে এই শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক স্বচ্ছ ধারণা লাভ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কোরীয় যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাসদস্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনা এবং একটি মিসাইল ইঞ্জিন টেস্ট সাইট ধ্বংস করার সুনির্দিষ্ট সময়। কিন্তু পম্পেও, যিনি এই একঘরে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস-প্রচেষ্টার ওপর নিজের রাজনৈতিক জীবনের ভবিষ্যৎ সঁপে দিয়েছেন, শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দেহাবশেষ বা মিসাইল সাইট নিয়ে বিশেষ কিছুই বলেননি। তিনি অবশ্য বলেন, ১২ জুলাই একটি বৈঠকের তারিখ স্থির করা হয়েছে, যেখানে ‘দেহাবশেষ প্রত্যর্পণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা হবে’ এবং ‘ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ধ্বংসের ক্রিয়াপদ্ধতি কেমন হবে’ আলোচনায় ‘কিছু অগ্রগতি’ সাধিত হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে পম্পেও কিছু বলেননি।

পম্পেওর সঙ্গে দেখা করেননি কিম, যা অবজ্ঞার প্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে তাঁর (পম্পেওর) মুখপাত্র বলেন, তা কখনোই প্রত্যাশিত ছিল না। এর পরিবর্তে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্র ও শনিবার দেশটির পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান কিম ইয়ং চোলের সঙ্গে মিলিত হন।

শনিবার সাংবাদিকদের জোর দিয়ে পম্পেও বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণই আমাদের লক্ষ্য’ এবং ‘কেউই সেখান থেকে সরে আসেননি’। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান কিম এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

কিন্তু একজন সাংবাদিকের যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের তারিখ স্থির করার ব্যাপারে এগিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমাদের আলোচনার খুঁটিনাটি বিষয় প্রকাশ করতে যাচ্ছি না।’

আলোচনার ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী ধারণা দেওয়া সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক দীর্ঘ বিবৃতির শেষে বলা হয়, ‘আমরা এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর আমাদের বিশ্বাস বজায় রেখেছি।’