মার্কিন মুলুকে চাকরির খোঁজ

নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কাজ করছেন এখন অনেক বাঙালি। ডিটেকটিভ জামিল সরোয়ার ইতিমধ্যে তঁার সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন।
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কাজ করছেন এখন অনেক বাঙালি। ডিটেকটিভ জামিল সরোয়ার ইতিমধ্যে তঁার সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন।

হা-ভাতের বাজারে চাও নাকি চাকরি
হবে নাতো পোড়াতে কাঠ খড় লাকড়ি
যদি পারো তেল দিতে রেখে ঠিক মাত্রা
শ গ্যালন তেল নিয়ে করো শুভ যাত্রা
মনে রেখো তেল যদি পড়ে ঠিক জাগাতে
নির্ঘাত চাকরিটা পারবেই বাগাতে...
পুরোপুরি না হলেও এই চিত্র বাংলাদেশের হলেও হতে পারে। শোনা কথা, সেখানে মামার জোর বা তেলের জোর না হলে চাকরি বাগানো কঠিন। শুধুই কি চাকরি, যেকোনো কাজেই পদে পদে বাধা । ‘হয় ঘুষ, নয় ঘুষি’—এই সূত্রেই যারা চতুর তারা কাজ হাসিল করে নেয়। মার্কিন মুল্লুকে চিত্রটি একেবারেই উল্টো। আপনার না আছে ঘুষ, না আছে ঘুষি। এখানে চাকরি পাওয়া সহজ, তবে এ জন্য ঠিক রাস্তায় হাঁটতে হবে। চলুন তাহলে চাকরির বাজার একটু খুঁজে দেখি।
চাকরি তিন রকম হতে পারে
০১. আপনার এমপ্লয়মেন্ট অথোরাইজেশন কার্ড থাকলে এখানে-সেখানে যখন হাতের কাছে যে কাজ পাওয়া, যায় তাই করা যায়।
০২. লিগ্যাল পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হলে নিউইয়র্ক নগরের প্রায় সব সরকারি কাজ করা যায়।
০৩. মার্কিন নাগরিক হলে নগর, অঙ্গরাজ্য, কেন্দ্র সব জায়গায় সরকারি কাজ করা যায়।
সনদপত্র মুল্যায়ন: আমি হলফ করে বলতে পারি, এখানে রাস্তা-ঘাটে এ দেশের যাদের দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই হাই স্কুলের গণ্ডি পার হয়নি। বিপরীতে বাঙালিদের মধ্যে বিএ, এমএ পাশ করা তরুণের সংখ্যা প্রচুর। এদের ঠিক রাস্তাটা একবার দেখিয়ে দিলে তারা হিমালয়ের চূড়ায় উঠে যাবে নিঃসন্দেহে। যারা বাংলাদেশ থেকে বিএ, এমএ পাশ করে এসেছেন, তারা সহজেই তাদের নম্বরপত্র ও সনদপত্রগুলো মূল্যায়ন করে নিতে পারেন। এখানে সনদপত্র মূল্যায়নের অনেক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান আছে। তবে আমাদের হাতের কাছে রয়েছে গ্লোব ল্যাঙ্গুয়েজ http://www.globelanguage.com. 305 Broadway #401, New York, NY-10007, ফোন: 212-227-1994 ফ্যাক্স: 212-693-1489।
বাংলাদেশ থেকে পাশ করা সনদ মূল্যায়ন করলে সাধারণত আমেরিকার সমমানের যে ডিগ্রি পাওয়া যায় তা হলো—বাংলাদেশি ডিগ্রি আমেরিকার সমমান এইচএসসি হাইস্কুল ডিপ্লোমা, বিএ পাশ অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি, বিএ অনার্স (৩ বছর) অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি, বিএ অনার্স (৪ বছর) ব্যাচেলর ডিগ্রি, ৩ বছর অনার্সসহ এমএ ব্যাচেলর ডিগ্রি, ৪ বছর অনার্সসহ এমএ মাস্টার্স ডিগ্রি।
সনদ মূল্যায়নের কাজ হয়ে গেলে এবার সরাসরি এখানকার সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়।
চাকরির খোঁজ: সাধারণত সাবওয়ে স্টেশনে যে ছোট্ট ক্যানডি শপ থাকে সেখানে বিভিন্ন পত্রিকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হলো ‘CHIEF’। এই পত্রিকায় কিছু কিছু চাকরির খবর পাওয়া যায়। তবে যারা চৌকস তারা এই লিংকে গিয়ে দেখতে পারেন চলতি মাসে কি কি চাকরির পদ খালি আছে http://DCAS।
এখানে নিউইয়র্ক নগরের সব চাকরির খবর পাওয়া যাবে। প্রতিটি পদের বিপরীতে কোন তারিখ থেকে কোন তারিখ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে, কীভাবে আবেদন করা যাবে, এসব তথ্যের পাশাপাশি পরীক্ষার সময়সূচি দেওয়া থাকে যা হাইলাইটেড অবস্থায় থাকে। এখানে ক্লিক করলে পুরো আবেদনের নিয়ম-কানুন চলে আসবে। কে আবেদন করতে পারবে, কি শিক্ষাগত যোগ্যতা, কি অভিজ্ঞতা, কত বেতন—সবকিছু দেওয়া আছে।
এ ছাড়া অঙ্গরাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির খবর জানতে http://www.usajob.gov এই ওয়েব সাইটে গিয়ে পছন্দ মতো চাকরি বেছে নেওয়া যায়।
নিয়োগ পরীক্ষা: উপযুক্ত পদে আবেদন করার পর বাড়িতে পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার বিভিন্ন গাইড বইও পাওয়া যায়। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খুবই সোজা, তবে বিচার বুদ্ধি খাঁটিয়ে জবাব দিতে হয়। এখানে কখনই ‘কম্বোডিয়ার মুদ্রার নাম কি’ বা ‘উগান্ডার রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের নাম কি’—এ ধরনের অবান্তর প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে না । একটি প্রশ্নের নমুনা দিই
নমুনা প্রশ্ন: একজন নাগরিক একটি বিশেষ সাহায্যের জন্য আপনার কাছে এল, কিন্তু তার প্রার্থিত সেবাটি আপনার কার্যালয়ের আওতায় পড়ে না। নাগরিকটি সেবা না পেয়ে খুবই রাগান্বিত হয়ে উঠল। এ অবস্থায় আপনার করণীয় কি হবে?
ক) আপনি তাঁকে ধমক দিয়ে বলবেন, এটি আপনার কার্যালয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পূর্ণ নয়
খ) পুলিশ ডেকে তাঁকে বার করে দেবেন
গ) আপনি অন্য কাজে মন দেবেন
ঘ) কোথায় গেলে তিনি সেবাটি পেতে পারেন, বিনয়ের সঙ্গে তার হদিস জানাবেন।
সঠিক উত্তর (ঘ), এ রকম কুইজ টাইপ প্রশ্ন থাকবে। ৭০ পেলেই পাশ।
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো। বাংলাদেশে যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা আছে, এখানেও ভেটারেন পয়েন্ট আছে। কোনো পরীক্ষায় সাধারণ নাগরিক ও একজন ভেটারেন সমান নম্বর পেলেও ভেটারেন অতিরিক্ত দশ পয়েন্ট বেশি পাবেন। এটি চাকরিতে যোগদানের সময় এবং সব পদোন্নতির পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
চাকরিতে যোগদানের বয়স: সোজা কথায় বলতে গেলে পুলিশ, আর্মি, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীসহ সমগোত্রীয় কিছু বিশেষ চাকরি ছাড়া অন্য সব চাকরিতে যোগদানের ও অবসরের কোনো সময়সীমা নেই। কারও বয়স যদি আশিও হয়, আর তিনি যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তবে তিনি চাকরিতে যোগ দিয়ে যত দিন শরীরে কুলায় ততদিন চাকরি করে যেতে পারবেন। ইইও বা ইকুয়েল এমপ্লয়মেন্ট অপরচিউনিটি ইইওর অর্থ হলো—কে কালো কে সাদা, কে মুসলিম কে খ্রিষ্টান, কে স্বাভাবিক কে প্রতিবন্ধী, কে সুশ্রী কে কুশ্রী, কে ছেলে কে মেয়ে, কে জোয়ান কে বুড়ো - এসবের কোনো বাছ-বিচার নেই। যোগ্যতা একটাই, তা হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। সবার সমান সুযোগ। কোনো ছুতায় কাউকে অবজ্ঞা করা যাবে না।
শেষ কথা: এক সময় বিভিন্ন সরকারি পদে বাংলাদেশি কর্মকর্তার সংখ্যা খুব নগণ্য ছিল। কিন্তু একটু হাতে ধরে পথ দেখানোর পর আমাদের বাঙালি ভাই-বোনেরা প্রায় সব সরকারি দপ্তরে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। এমন কোনো সরকারি দপ্তর প্রায় দেখাই যাবে না, যেখানে কোনো না কোনো বাঙালি কাজ করছেন।
নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ, অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল কর্মকর্তাদের একটি সংগঠন আছে ‘নিউইয়র্ক সিটি বাংলাদেশি সিভিল সার্ভিস সোসাইটি’। এর কাজই হলো কখন, কোথায় কোনো চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হলে তা জনে জনে জানানো, তাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশে উৎসাহিত করা, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো ও তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করা—যাতে সহজেই তারা চাকরি পেতে পারে। আর এতে কিন্তু তাদেরও বিরাট স্বার্থ রয়েছে। স্বার্থটি হলো—বেশি বেশি বাংলাদেশি যদি সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়ে, তাহলে তারা আর এ দেশে সংখ্যালঘু থাকবে না, একদিন নিশ্চয়ই বাঙালিই সব জায়গায় নেতৃত্ব দেবে। স্বার্থটা কি খারাপ?