রেস্টুরেন্টের রেস্ট রুম ব্যবস্থাপনা

জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি, ভারতীয় ও ল্যাটিন মালিকানাধীন রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন। নাশতা, দুপুরের খাবার ও চা কফি ইত্যাদি খান তাঁরা। কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে খাওয়ার জন্য ২০-৬০ মিনিট সময় রেস্টুরেন্টে অবস্থান করতে হয়।
খেতে আসা ভোক্তারা স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে রেস্ট রুম বা প্রসাধন কক্ষ ব্যবহার করেন। কিন্তু একবার ওই রেস্ট রুমগুলো কেউ ব্যবহার করলে দ্বিতীয়বার আর যাবেন না। কারণ রেস্ট রুমের আকার এত ছোট যে এগুলোতে একজন লোক ঠিকমতো বসা বা দাঁড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না, বেসিনের দিকে তাকালে সেখানে হাত ধুতে ঘৃণার উদ্রেক হয়। সাবান ব্যবহার করতে গেলে দেখা যায়, ময়লাযুক্ত একটি হাত ধোয়া সাবানের কৌটা রাখা আছে, প্রয়োজনীয় টয়লেট পেপার নেই। মেঝে পানিতে সয়লাব, একেবারে নোংরা, দিনে শুধু সকাল বেলা একবার পরিষ্কার করা হয়। কারণ রেস্টুরেন্টের কর্মীরা টয়লেট পরিষ্কার করতে অসম্মানিত বোধ করেন, তাই তারা ওই কাজ করেন না। মালিকেরা ভিন্ন মানুষ দ্বারা পরিষ্কারের কাজ করান।
আপনারা জানেন, বাঙালিরা সাধারণত হাত দিয়ে খেতে পছন্দ করেন। খাওয়ার পর এবং খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার বেসিনগুলোর দিকে যদি তাকান, তখন আর ওই রেস্টুরেন্টে যেতে ইচ্ছে করবে না। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থাকায় ওই সব রেস্টুরেন্টে আবার রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। তা ছাড়া যারা পরিবেশন করেন, তারাও রেস্ট রুম ব্যবহার করার পর হাতে সেনিটাইজার ব্যবহার করেন কি-না সন্দেহ হয়। সব রেস্টুরেন্টে খোলা চামচ ব্যবহার করা হয়, যা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কেউ খাদ্যদ্রব্য পরিবেশনের সময় গ্লাভস ব্যবহার করেন না। প্রায়ই বাসি খাবার বিক্রি করা হয়। তা ছাড়া যারা কাজ করেন অধিকাংশের ওই ‘ফুড প্রোটেকশন’-এর ওপর কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তা ছাড়া কর্তৃপক্ষ ঘণ্টায় ৫-৬ ডলার বেতনে কর্মচারীদের নিয়োগ দেন, সেই কর্মচারী কীভাবে সন্তোষজনকভাবে কাজ করবে।
রেস্টুরেন্ট মালিকদের উচিত তাদের কর্মীদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব সৃষ্টি এবং প্রত্যেককে কাস্টমার সার্ভিস ও ফুড প্রোটেকশনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা। যারা ইংরেজি বলতে
পারেন না তাদের ইংরেজিতে কথা বলা (স্পোকেন ইংলিশ) শেখানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
ব্যবসা করতে হলে ১০০ ভাগ স্বাস্থ্যসম্মত করে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত ও বিতরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। একবার ঘুরে দেখে আসেন ম্যাকডোনাল্ড, ডানকিন ডোনাট, স্টারবাকস, বার্গার কিং, উইন্ডিস ইত্যাদি রেস্টুরেন্টগুলোর রেস্ট রুম এবং খাদ্যদ্রব্য বিতরণ ব্যবস্থা কীভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে করা হয়।
গ্রাহকদেরকে যখন টেবিলে খাবার দেওয়া হয়, তখন স্টিলের বা প্লাস্টিকের যে চামচ দেওয়া হয়, সেগুলো টিস্যু পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়, কোনো সময় তা খোলাভাবে পরিবেশন করা যাবে না। যেসব পুরুষ ও নারীকর্মী কাজ করেন তাদের কোনো রকম টাট্টু শরীরের কোনো দর্শনীয় স্থানে লাগিয়ে কাজ করতে দেওয়া যাবে না। প্রত্যেক রেস্টুরেন্টে ফার্স্ট
এইড বক্স রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন কর্মী রাখতে হবে। মহিলা কর্মীদের অলংকার, আংটি ইত্যাদি পরে খাদ্যদ্রব্য পরিবেশন করা নিষেধ।
রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার উপরিউক্ত বিষয়গুলো প্রত্যেকদিন সকাল বেলা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং সেই মোতাবেক পরামর্শ দিয়ে সবাইকে রেস্টুরেন্টের নীতিমালা মেনে চলতে উৎসাহ দিলে উত্তরোত্তর ব্যবসার উন্নতি হবে এবং সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের ইনভেস্টিগেশনে ‘এ’ গ্রেড পেতে অসুবিধা হবে না।