আমেরিকাজুড়ে দাবদাহ

জুনের শেষ থেকেই আমেরিকায় গরম বাড়তে শুরু করেছে। জুলাই শুরু হতে না হতেই এটি তাপপ্রবাহের রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। এ অবস্থায় আমেরিকাবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর। এবার আমেরিকার ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তাকে উত্তর আমেরিকা তাপপ্রবাহ নাম দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। এই তাপপ্রবাহে এরই মধ্যে কানাডায় বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। বেশির ভাগই মারা গেছেন হিট স্ট্রোকে। এমন উচ্চ তাপমাত্রায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। এর পাশাপাশি হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাও থাকে ব্যাপক ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় সবাইকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়া এবং নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে থাকতে নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে শীতল বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সবই করা হয়েছে সতর্কতার অংশ হিসেবে। কিন্তু এ তো সংকটে বাঁচার নিদান, সমাধান নয়।
আমেরিকায় কয়েক বছর ধরে শীতের পথ অনুসরণ করে আসছে উচ্চ তাপপ্রবাহ। পিঠোপিঠি ভাই যেন। দুইয়ের পাল্টাপাল্টি বিন্যাসে মানুষ জেরবার। একবার শীতে মরছে তো আরেকবার মরছে গরমে। কথা হচ্ছে এই তীব্র শীত ও উচ্চ তাপপ্রবাহের মধ্যে কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা। উত্তর হচ্ছে, ‘হ্যাঁ আছে’। এই সংযোগের মূল সূত্রটি চরমভাবাপন্নতায়। শুধু আমেরিকা নয়, সারা বিশ্বের আবহাওয়াই ক্রমে চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। আর এর মৌল কারণটি রয়েছে প্রকৃতিকে মানুষের ব্যবহারের পন্থায়। মানুষ প্রকৃতিতে বেঁচে থাকে। কিন্তু এই সত্যটিকে পাশ কাটিয়ে মানুষ বরাবর প্রকৃতিকে পদানত করার বিজয়গাথাই প্রচার করে আসছে। মিথস্ক্রিয়া ও অভিযোজনের সম্বন্ধটিকে আর মূল্য দিচ্ছে না মানুষ। এটা বিচ্ছিন্নতার জন্ম দিয়েছে। আর এই বিচ্ছিন্নতাই আজকের সংকটকে ঘনিয়ে তুলেছে। আজকে পৃথিবীর প্রকৃতি এই অনাচারের প্রতিশোধ নিচ্ছে বৈরিতা দিয়ে। অথচ কিছু মানুষ চোখ বুজে ভুলে থাকতে চাইছে এই বাস্তবতা। এই মানুষদের দলে রয়েছেন খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তিনি ও তাঁর প্রশাসন এক অর্থে আত্মাহুতির পথ বেছে নিয়েছে।
মানুষের অতি ব্যবহারের কারণেই যে আজকের এই অবস্থা, তা কিছু তথ্যের দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হবে। আমেরিকা ১৯৩৫ সালের পর বড় ধরনের উচ্চ তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৮০ সালে। এরপরের তাপপ্রবাহটি আসতে সময় লেগেছিল ১৫ বছর। কিন্তু তারপর নিয়মিত বিরতিতে তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা। আর গত এক দশকে এই নিয়ে নয়টি তাপপ্রবাহ দেখছে আমেরিকা। আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া একটি কঠোর সতর্কবার্তা দিতে চাইছে। বারবার করে। এই বার্তা আমাদের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের মাধ্যমে আমেরিকা যে ভুল করেছে, তা শুধরে নেওয়ার সময় এখনো রয়েছে।