রুশ আঁতাত পিছু ছাড়ছে না

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে ১২ জন রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা অভিযুক্ত হয়েছেন। ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের সঙ্গে রুশ আঁতাতের প্রশ্নে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার কর্তৃক আহূত জুরি প্যানেল এই অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করে, যা গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেন মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোজেনস্টাইন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন। ঠিক তার আগে তথ্যপ্রমাণসহ রুশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা এই বৈঠক বাতিলের দাবি তুলেছেন।

ম্যুলারের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের লক্ষ্যে রুশ গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কম্পিউটার থেকে তথ্য চুরি করা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনের একাধিক কর্মকর্তা এই চুরির বিষয়ে অবহিত ছিলেন। তথ্য চুরির লক্ষ্য ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলা। তবে সত্যি সত্যি তারা কতটুকু প্রভাব ফেলতে পেরেছিল, রোজেনস্টাইন তা বলতে অস্বীকার করেন। এটা নির্ণয় করা চলতি তদন্তের লক্ষ্য নয় বলেও জানান তিনি।

পেশাগত সংঘাতের কারণে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর রোজেনস্টাইন এই তদন্ত তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন। অভিযোগপত্রের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে হিলারি ক্লিনটনের কম্পিউটারে আড়ি পাতায় উৎসাহ দেন। তাঁর কম্পিউটার থেকে ৩০ হাজার ই-মেইল হারিয়ে গেছে বলে যে দাবি হিলারি করেছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প রুশ হ্যাকারদের সেই ই-মেইলগুলো খুঁজে বের করতে পরামর্শ দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পরপরই রুশ হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিক পার্টির কম্পিউটারব্যবস্থায় আক্রমণ করে। চুরি করা সেসব তথ্য পরে উইকিলিকসের মাধ্যমে বিলি করা হয়।

মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আগে উঠলেও এই প্রথম নামধামসহ রুশ গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আরজিনামা গঠিত হলো। ওয়াশিংটনে মধ্যদুপুরে রোজেনস্টাইন যখন রুশ সরকারের গোয়েন্দাদের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, প্রায় একই সময়েই লন্ডন সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রানি এলিজাবেথের সঙ্গে চায়ের আমন্ত্রণ রক্ষার জন্য উইন্ডসর ক্যাসেলের দিকে যাত্রা করেন। ম্যুলার এ রকম একটি অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছেন এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হবে, সে কথা ট্রাম্প আগে থেকেই জানতেন। রোজেনস্টাইন নিজে তাঁকে এক সপ্তাহ আগে সে কথা জানান।

মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরের অভিমত সত্ত্বেও ট্রাম্প বারবার বলে এসেছেন তিনি বা তাঁর ক্যাম্পেইন কোনো আঁতাতের সঙ্গে জড়িত নন। ম্যুলার যে তদন্ত করছেন তা এক চক্রান্ত, ট্রাম্পের ভাষায় ‘উইচ হান্ট’ ছাড়া আর কিছুই নয়। লন্ডনে ম্যুলারের প্রস্তুত অভিযোগপত্রের কথা উল্লেখের বদলে তিনি তদন্তের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি পুতিনকে একজন সবল নেতা হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প বলেন, পুতিন তাঁর শত্রু নয়, প্রতিযোগী।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে দেখা হলে তাঁকে হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করবেন। তবে পুতিন সে কথা স্বীকার করবেন বলে মনে করেন না ট্রাম্প।

রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে ম্যুলারের আরজিনামা প্রকাশ হওয়ার পর পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক বাতিলের দাবি তুলেছেন ডেমোক্রেটিক নেতারা। সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের কথা সুনিশ্চিতভাবে জানার পরও যদি ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে খোশগল্প করতে যান, তাহলে সেটি হবে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য প্রবল অপমান। মার্কিন কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ডেমোক্রেটিক সদস্যরা এক যৌথ চিঠিতে এই বৈঠক বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, ট্রাম্প যেভাবে বারবার পুতিনের ব্যাপারে প্রশংসাবাক্য উচ্চারণ করেছেন এবং রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তে তিনি নিজে যেভাবে জড়িত, তাতে এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই যে রুশ নেতার সঙ্গে বিশ্বস্ততার সঙ্গে আলোচনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে।

হোয়াইট হাউস থেকে অবশ্য ১২ জন রুশ গোয়েন্দার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠনের বিষয়টির ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডলফ জুলিয়ানি বলেছেন, এ ঘোষণা আসলে সব আমেরিকানের জন্য সুখবর। রাশিয়ানদের হাতেনাতে ধরা হয়েছে। কোনো মার্কিন এতে জড়িত নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পূর্ণ নির্দোষ। অতএব, ম্যুলার তদন্ত অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।