১১ মার্কিন নাগরিককে রাশিয়ার জিজ্ঞাসাবাদে পুতিনের প্রস্তাব ভেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

সারাহ স্যান্ডার্স
সারাহ স্যান্ডার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফলসহ বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে রাশিয়ার দেওয়া প্রস্তাব ভেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ক্রেমলিনের অভিযোগ, এঁরা রাশিয়ায় অপরাধ সংঘটিত করেছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধি ম্যাগি হাবারমান হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্সের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ গতকাল কয়েকজন আমেরিকান নাগরিকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি এ প্রস্তাব সমর্থন করেন?

এর জবাবে স্যান্ডার্স বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এরপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি।

গত সোমবার ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে পুতিনের দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয় রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ আমেরিকানদের জিজ্ঞাসাবাদ পর্যবেক্ষণ করবে। এর বদলে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলার ১২ জন রুশ নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সুযোগ পাবেন, যাঁদের যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে হস্তক্ষেপের দায়ে অভিযুক্ত করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সিবিএস নিউজের স্টিভেন পোর্টনয় আবারও প্রসঙ্গটি তোলেন। রাশিয়ান প্রস্তাবকে ট্রাম্প কেন আকর্ষণীয় ধারণা ও অবিশ্বাস্য প্রস্তাব বলে মন্তব্য করলেন, তা জানতে চান পোর্টনয়।

জবাবে স্যান্ডার্স বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন এটি আকর্ষণীয় ধারণা। তিনি কোনো কথা দেননি। এর মধ্যে কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না, তিনি এ নিয়ে তাঁর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ পুতিনের সমালোচক বিল ব্রাউদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। তাঁর আইনজীবী সের্গেই মাগনিটস্কি সন্দেহজনক নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ান হেফাজতে মৃত্যু হয়। রাশিয়া কংগ্রেসের সাবেক সহকারী কেইল পার্কারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। তিনি একগাদা নিষেধাজ্ঞা, যা ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট নামে পরিচিত, তার খসড়া করেছিলেন। এতে ব্রাউদারের প্রভাব ছিল।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, স্যান্ডার্স রাশিয়ার প্রস্তাব বিবেচনার কথা বললেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নওয়ার্ট গতকাল রাশিয়ার দেওয়া যুক্তির বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার এসব দাবিদাওয়া খুবই অযৌক্তিক। তারা ১১ মার্কিন নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। আমরা রাশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একমত নই। রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল নিশ্চয়ই জানেন যে এ বিষয়ে রাশিয়ার সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছে।’

গত সোমবার পুতিন বলেছেন, বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার তদন্তের অংশ হিসেবে রাশিয়ার ২৪ জন নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। এর বদলে যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়াকে একই ধরনের সহযোগিতা করবে বলে তিনি আশা করেন।

পুতিন বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা ব্রাউদারকে আনতে পারি। ব্যবসায়ী ব্রাউদার রাশিয়ার কাছ থেকে ১৫০ কোটি ডলার আয় করেছেন। কিন্তু কখনো কর দেননি। না রাশিয়ায়, না যুক্তরাষ্ট্রে। এই অর্থ এখনো রাশিয়াতেই আছে। যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

ব্রাউদারের জন্ম শিকাগোতে হলেও ২০ বছর আগে নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। এখন তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁর রাশিয়ান সহযোগীদের দ্বারা রাশিয়ায় বড় ধরনের এক কর ফাঁকির বিষয়টি ফাঁস হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এর বিচার চলছে। কিন্তু পুতিন অভিযোগ করেন, ব্রাউদারই এই কুকর্মটি করেছেন। তবে ব্রাউদার তা অস্বীকার করেছেন।

রাশিয়ার গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ব্রাউদার ও তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্তে ম্যাকফলের নাম এসেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন আইনে ম্যাগনিটস্কাই ধারা যুক্ত করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, তখন ম্যাকফল রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ব্রাউদার ও ম্যাকফল এই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

স্যান্ডার্সের এ মন্তব্যের পর ম্যাকফল টুইটারে লিখেছেন, ‘আশা করি, হোয়াইট হাউস রেকর্ড সংশোধন করবে এবং নিঃসন্দেহে পুতিনের কাছ থেকে পাওয়া হাস্যকর প্রস্তাবের নিন্দা জানাবে।’

এই সপ্তাহে ব্রাউদারও টুইটারে পুতিনের দাবি অস্বীকার করেন। পুতিন বলেছেন, ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারে তিনি অর্থ ঢেলেছেন।
রাশিয়ায় ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এ বছরের শুরুর দিকে ব্রাউদার স্পেনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু পরে স্পেনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ‘বৈধতা ছিল না’ উল্লেখ করে ব্রাউদারকে ছেড়ে দেয়।