আবারও কথা ঘোরালেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে একটা প্রবাদ রয়েছে, ‘বিপদে পড়লে নিজের কথা নিজেকেই হজম করতে হয়।’ পরপর তিন দিন ঠিক এই কাজটিই করতে হলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আবার পল্টি খেলেন ট্রাম্প। রুশ ও মার্কিন বিচার বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার এক প্রস্তাব নিয়ে কথা ঘোরাতে বাধ্য হলেন তিনি। প্রথমে সহযোগিতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। পরে প্রবল সমালোচনা ও সিনেটের প্রতিরোধের মুখে ওই দিনই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন তিনি।

গত সোমবার ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও পুতিন। ওই বৈঠকে পুতিন প্রস্তাব করেছিলেন, মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টার জন্য যে ১২ জন রুশ গোয়েন্দাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। তবে তার পরিবর্তে রুশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত একাধিক মার্কিন কর্মকর্তাকেও রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে।

বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই প্রস্তাবকে ‘খুবই চমৎকার’ বলে মন্তব্য করেন। পরে ফক্স টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারেও তিনি এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান। হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবটি ট্রাম্প প্রশাসনের বিবেচনাধীন। এ নিয়ে ট্রাম্প উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ট্রাম্পের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স জানান।

পুতিন যে মার্কিন কর্মকর্তাদের মস্কোয় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেন এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল। তাঁর ওপর পুতিনের ক্রোধ বেশ পুরোনো। বারাক ওবামার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত ধনী রুশ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি আইন পাসের ব্যাপারে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

মার্কিন কূটনীতিকদের রুশ গোয়েন্দা দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়ার মতো প্রস্তাবে ট্রাম্প রাজি হতে পারেন, তা মার্কিন মহলে একই সঙ্গে বিস্ময় ও ক্রোধের জন্ম দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে প্রস্তাবটিকে সরাসরি ‘অবাস্তব’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও প্রস্তাবটি বাতিল করে দেন। শুধু ডেমোক্র্যাট নয়, ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের ভেতরেও এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সিনেটে এই দুই দলের নেতারা প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে আরেকটি প্রস্তাব গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন, যা গতকাল বৃহস্পতিবার ৯৮-০ ভোটে গৃহীত হয়।

সিনেটে এই প্রস্তাব গ্রহণের ঠিক আগে এক ঘোষণায় হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন না। সারাহ স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রস্তাবটি আন্তরিকভাবেই করেছিলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে একমত নন। এতে আশা প্রকাশ করা হয়, প্রেসিডেন্ট পুতিন অভিযুক্ত ১২ জন রুশ নাগরিক যে নিরপরাধ, তা প্রমাণের জন্য তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে সম্মত হবেন।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক টুইটে মার্কিন পেশাদার কূটনীতিকদের রুশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি হোয়াইট হাউস কীভাবে বিবেচনা করেছে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এমন একটি প্রস্তাব বাতিল করতে আধ মিনিটের বেশি আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন পড়ে না।

আধ মিনিট নয়, প্রায় তিন দিন লাগল পুতিনের প্রস্তাবটি বাতিল করতে, সে কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস বড় ধরনের অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিপরিষদ অথবা উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন বোধ করেন না। কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতেও এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় না। হেলসিঙ্কিতে ট্রাম্প কি বিষয়ে আলোচনা করেছেন অথবা রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র বা প্রতিরক্ষা দপ্তরের কাছে কোনো পরিষ্কার ধারণা নেই। এক বিশ্লেষক বলেন, এখন ট্রাম্প নিজেই তাঁর চিফ অফ স্টাফ ও পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন।

হোয়াইট হাউস ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সংযোগহীনতা কতটা তীব্র, গতকাল তার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায়। এদিন এক টুইটে সারাহ স্যান্ডার্স জানান, হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এ বছরের হেমন্তে যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে পারেন। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সিআইএ বা জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানেরা আগে থেকে জানতেন না। কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের এসপেনে এক সম্মেলনে জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান ড্যানকোটস সঞ্চালকের কাছ থেকে প্রথমবারের মতো বিষয়টি জানতে পারেন। ঘটনা সত্যি কি না, তা নিশ্চিত করতে একটু ঝুঁকে পড়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী বললেন, আবার বলুন তো!’