ফারাবীকে মনে পড়ে

খান মোহাম্মদ ফারাবী (২৮ জুলাই ১৯৫২—১৪ মে ১৯৭৪)। প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
খান মোহাম্মদ ফারাবী (২৮ জুলাই ১৯৫২—১৪ মে ১৯৭৪)। প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

আগামীকাল, ২৮ জুলাই, খান মোহাম্মদ ফারাবীর জন্মদিন। বেঁচে থাকলে এখন ওর ৬৫ বছর পূর্ণ হতো। মৃত্যুর সময় ফারাবীর বয়স হয়েছিল মাত্র ২১। আরও একজন ঠিক ওই ২১ বছর বয়সেই মারা গিয়েছিলেন, তাঁর নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য।

স্কুলের শেষ বছরে ফারাবীর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। তখন মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রি-টেস্ট শেষ হয়েছে। ওর নামের সঙ্গে আগেই পরিচিত ছিলাম, সেন্ট গ্রেগরির ছাত্র, ক্লাসের ফার্স্ট বয়। আমি সিদ্ধেশ্বরীর ছাত্র, আমিও ফার্স্ট বয়। আমার স্কুলের কাছেই এক ভাড়া বাড়িতে ওরা থাকত। সেখানে এক বিকেলে মুখোমুখি প্রথম সাক্ষাৎ। দেখা হওয়ামাত্রই বন্ধুত্ব, সে কথা বলব না। কিছুটা ঈর্ষা, কিছুটা ঔত্সুক্য নিয়ে আলাপ হয়েছিল। সামনে ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে একধরনের গোপন প্রতিযোগিতা হয়তো ছিল। সবাই ভেবেছিল, ফারাবী নির্ঘাত ফার্স্ট হবে। হয়নি, ও হয়েছিল সেকেন্ড। আমি বিস্তর চেষ্টা সত্ত্বেও প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকতে পারিনি।

বন্ধুত্ব হলো কলেজে উঠে। তত দিনে ফারাবীরা চৌধুরী পাড়ায় উঠে এসেছে। ওর পাশের বাড়িতে থাকত দাউদ, অর্থাৎ দাউদ হায়দার, আমাদের দুজনেরই বন্ধু। তিনজনই লেখালেখির চেষ্টা করি, সে চেষ্টার দৌড়ে দাউদ অবশ্য অনেক এগিয়ে। আরও এক জায়গায় আমাদের তিনজনের মিল—তিনজনই ছাত্র ইউনিয়ন করি। দাউদ কিঞ্চিৎ অলক্ষ্যে, আমরা দুজন সলক্ষ্যে। কলেজে ওঠার পর যুক্ত হলো আফসান—আফসান চৌধুরী, সে অবশ্য তখন রাজনীতিবিমুখ, কিন্তু কবিতার প্রতি গভীর আগ্রহী। সিলেট থেকে এসেছিল ওয়াসি—ওয়াসি আহমেদ, সে-ও অনায়াসে যুক্ত হলো আমাদের দলে।

কলেজে আমাদের একটি ‘কমন থ্রেড’ ছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বাংলার তরুণ অধ্যাপক। দারুণ জনপ্রিয়, শুধু তাঁর কথা শুনতেই আমরা সবাই ক্লাসে ভিড় করতাম। ক্লাসের বাইরে আমাদের আরেকটা সম্পর্ক ছিল—সায়ীদ স্যার আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে কলেজের নিয়মিত ঘণ্টার বাইরে সাহিত্য আসর বসাতেন। খুব বেশি নয়, ৮-১০ জনের একটি দল। অধিকাংশই কলা বিভাগের ছাত্র, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যুক্ত হয়েছিল হায়দার—হায়দার আলী খান। স্যার আমাদের বরাবর উৎসাহ দিতেন ‘বাক্সের বাইরে’ ভাবতে, নিজের মতো করে চিন্তা করতে। ক্লাসে তিনি একাই কথা বলতেন, কিন্তু ক্লাসের পর এই আসরে তিনি চাইতেন আমরা কথা বলি, তর্ক করি, নিজেদের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করি। তখন থেকেই আমরা ফারাবীকে চিনতে শুরু করি, পাঠ্যপুস্তকের বাইরে পঠনপাঠনে সে যে আমাদের সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে, তা বুঝতে আমাদের কারোরই খুব সময় লাগেনি।

কলেজে থাকতে সায়ীদ স্যারের পৌরহিত্যে যে অসাধারণ কলেজ ম্যাগাজিনটি বেরিয়েছিল, তাতে ফারাবী লিখেছিল তাঁর প্রথম বড় প্রবন্ধ—‘এক ও অনেক’। রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো লেখা—দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি ও সাহিত্য মিলিয়ে কঠোর যুক্তি-তর্কে লেখা দুর্দান্ত এক পলেমিক্যাল রচনা। সায়ীদ স্যার পরে বলেছিলেন, লেখাটি অনায়াসে কলেজে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। মনে পড়ছে, কলেজে বৃত্তির টাকা পাওয়ার পর ফারাবী আর আমি নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানে গিয়েছিলাম প্রথম নিজের পয়সায় পছন্দের বই কিনতে। আমি কিনেছিলাম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কাব্যসমগ্র, ফারাবী কিনেছিল বার্ট্রান্ড রাসেলের হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি। সেই গ্রন্থ পাঠের ফলেই এমন একটি প্রবন্ধ লেখা সম্ভব হয়েছিল—এ কথা বলা যাবে না, তবে অনুপ্রেরণা হয়তো এসেছিল। ফারাবীর লেখার সুর ছিল গভীরভাবে রাজনৈতিক, মানুষের যূথবদ্ধ চরিত্রের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে অখণ্ড মানব অস্তিত্বের প্রতি সচেতন সংহতির আহ্বান। রাসেল নিজেও তেমন সংহতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। এই পঠনপাঠন থেকেই কি না জানি না, কিন্তু এই অনতি তরুণ বয়সে প্রস্তুত সে লেখা থেকেই স্পষ্ট, ফারাবী মানুষের অবিভাজ্য নিয়তিতে নিঃসংশয় ছিল। মুক্তির লড়াইয়ে পৃথিবীর মানুষ নিজেদের অলক্ষ্যেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে, যদি এই জড়ানোটা সচেতনভাবে করা সম্ভব হয়, তাহলে মানবমুক্তি ত্বরান্বিত হয়, এই ছিল তার মোদ্দা কথা।

জাতীয়তাবাদ যে অন্তর্গতভাবে ক্ষতিকর, মানুষকে নিকটবর্তী করার বদলে তাকে খণ্ডিত করে, এই লেখায় সে কথাটি স্পষ্ট যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলা হয়েছিল। ফারাবীর সিদ্ধান্ত ছিল, জাতীয়তাবাদ ধ্বংসাত্মক। কারণ, মানব হিসেবে আমাদের পূর্ণতাকে সে খণ্ডিত করে।

একই ক্লাসের ছাত্র, সবাই কমবেশি মেধাবী—এমন একটি গোপন গৌরববোধ আমাদের মধ্যে হয়তো ছিল। ফলে লেখাটির গুরুত্ব আমরা বুঝিনি, অথবা বুঝতে চাইনি। তবে রাজনীতির ব্যাপারে আমাদের চেয়ে ওর চিন্তা-ভাবনা অনেক বেশি অগ্রসর—এ কথা সে লেখা পড়ে বুঝতে আমাদের কষ্ট হয়নি।

কলেজে থাকতেই আফসান ও আমি মিলে একটি প্রবন্ধ পত্রিকা প্রকাশ করি, নাম পূর্বপত্র। ফারাবী সে পত্রিকার অনিবার্য লেখক। বছর তিনেক টিকে ছিল, প্রায় সব সংখ্যাতেই ফারাবীর লেখা। শেষ লেখাটি সম্ভবত ছিল ‘প্রজ্ঞা ও সজ্ঞা’। শিল্পের কেন্দ্রে রয়েছে স্বতঃস্ফূর্ততা, কিন্তু সে চিন্তাহীন নয়, প্রবন্ধের এই কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্যের সরল অর্থ ছিল, লেখককে নিজের রচনার প্রতি অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে, শিল্প অথবা স্বতঃস্ফূর্ততার দোহাই দিয়ে পাশ কাটানো চলবে না। এটিও মূলত তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকেই লেখা। মনে আছে, এই সময় বাংলা একাডেমী পত্রিকায় আবদুল মান্নান সৈয়দের গল্পের চাঁছাছোলা একটি আলোচনা ছেপেছিল ফারাবী, তার কেন্দ্রে ছিল এই মোদ্দা বক্তব্য। সত্যের মতো বদমাশ লিখে মান্নান সৈয়দ তখন তরুণ পাঠকমহলে দারুণ জনপ্রিয়। সেই তাঁকেই নির্দয় ভাষায়, কঠোর যুক্তির আবরণে ফারাবী এমন ধরাশায়ী করেছিল যে সে রাতারাতি আমাদের চোখে রীতিমতো নায়ক হয়ে উঠেছিল।

একাত্তরের শুরুর কয়েক মাস ছাড়া বাকি সময় আমরা ঢাকায়। সে সময় ফারাবী, আফসান ও আমি হয় মুখোমুখি, নয়তো টেলিফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে কাটিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া হয়নি, যদিও তেমন সম্ভাবনা নিয়ে কথা চালাচালি হয়েছে। ফারাবী ও আমি দুজনেই ছোটখাটো, আমাদের দেখে পুলিশ বা সামরিক সদস্যদের কোনো সন্দেহ হবে না, অনুমান করি, সেই কারণেই আমাদের দুজনের ওপর ভার ছিল গোপন চিঠি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। চিঠির ভেতর অর্থ থাকত, সে কথা আমাদের জানা ছিল। একাত্তরে আমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা। সে সময় আমাদের একমাত্র ‘বিপ্লবী’ কাজ ছিল একটি পরীক্ষা দিয়ে বাকিটা সময় ঘরে বসে থাকা।

একাত্তরেরই কোনো এক দুপুরে ফারাবী আমাদের তাঁর নাটক আকাশের পরে আকাশ, পড়ে শুনিয়েছিল। সেটি এমন এক সময় যখন আমরা সদ্য কাফকা-কামু পড়া শুরু করেছি, পরাবাস্তবতা নিয়ে তর্ক করছি, ফ্রয়েড নিয়ে আগ্রহ জাগছে। ‘অ্যাবসার্ড’ নাটক নিয়ে মার্টিন এসলিনের একটি বইও এই সময়ই আমরা ভাগাভাগি করে পড়েছিলাম। বেকেটের ওয়েটিং ফর গডো এবং আয়োনেস্কোর রাইনোসোরাস—এই দুটো বই আমাদের দারুণ প্রভাবিত করেছিল। আকাশের পরে আকাশ যে এই পাঠাভিজ্ঞতাজাত, তাতে আমার সন্দেহ নেই। যে রাজনীতির প্রতি ফারাবী বিশ্বস্ত ছিল, তাতে এই ‘পরাবাস্তব’ নাটক তাঁর পক্ষে লেখা কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিল। বেরোনোর দরজা আছে, কিন্তু সে দরজা ঠেলে কীভাবে বেরোতে হয়, নাটকের কুশীলবেরা সে কথা জানে না, তারা শুধু জানে, এই দরজার বাইরে আছে আকাশ, আর তারপরও রয়েছে আকাশ। অর্থাৎ শূন্যতা। নাটকে বেকেটের গডোর প্রভাব স্পষ্ট, কিন্তু সেখানেও এমন একটি আশ্চর্য লাইন ছিল, ‘কুয়াশা ভাঙার অস্ত্র আমায় কে দেবে? কোথায় জানব আগুন জ্বালানো মন্ত্র,’ যা প্রমাণ করে, বিপ্লবের সম্ভাবনায় ফারাবীর আস্থা ছিল গভীর ও নিঃসংশয়। বেকেট কখনোই এমন কোনো বাক্যের কথা দুঃস্বপ্নেও লিখতে পারতেন না।

প্রায় তৎক্ষণাৎ সে নাটকের একটি আলোচনা—কিছুটা কঠোর ও আক্রমণাত্মক ভাষায়—লিখে ফারাবীকে আমি দিয়েছিলাম। মৃত্যুর তিন বছর পর গ্রীষ্মের ছুটিতে ওদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়িতে বেড়াতে এলে ফারাবীর মামা কায়েস আমাকে জানিয়েছিল, সেই লেখাটি ফারাবী তাঁর নাটকের খাতায় সযত্নে রেখে দিয়েছিল।

খান মোহাম্মদ ফারাবীর লেখা ছোটদের বই মামার বিয়ের বরযাত্রীর প্রচ্ছদ
খান মোহাম্মদ ফারাবীর লেখা ছোটদের বই মামার বিয়ের বরযাত্রীর প্রচ্ছদ



স্বাধীনতার পর ফারাবী খুব গভীরভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কলেজে উঠেই ছাত্র ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। ভালো ছাত্র, ডাকসাইটে বিতার্কিক, সবার মুখে মুখে তাঁর নাম। ফলে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের নির্দেশে কলেজ ইউনিয়নের নির্বাচনে দাঁড়াতে হয়েছিল ফারাবীকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে ডাকসু নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল। কলেজে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে করিডরে দাঁড়িয়ে তাকে রক্তগরম বক্তৃতা করতে হয়েছে, আমরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সে বক্তৃতা শুনতাম। এই ছেলে একদিন বড় রাজনৈতিক নেতা হবে—এ বিষয়ে তখন থেকেই আমরা নিশ্চিত ছিলাম। অথবা বিখ্যাত লেখক হবে, দার্শনিক হবে, অর্থনীতিবিদ হবে, যা চায়, তা-ই হবে। প্রতারক মৃত্যু সে সম্ভাবনা হরণ করবে—এমন কথা তখন আমরা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি।

স্কুলে ও কলেজে থাকতে ফারাবী বিস্তর কবিতা লিখেছিল। অধিকাংশই সুকান্তের ধাঁচে, দেশ বদলের, পৃথিবী বদলের গল্প ছিল তাতে। অনুবাদ করার দুর্দান্ত ক্ষমতা ছিল, অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘যশোর রোড’ ঠিক সে রকম একটি অনুবাদ। একটি-দুটি প্রেমের কবিতাও লিখেছিল। দাউদ, আমাদের কবি বন্ধু, সে মুখ্যত প্রেমের কবিতাই লিখত। যখন-তখন প্রেমে পড়াও তাঁর পরিচিত অভ্যাস। দাউদের দাবি, ফারাবীকে সে এক ছিপছিপে জলপাইরঙা তরুণীর সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে। আমি দেখিনি, দাউদের কথা গপ্প বলে উড়িয়ে দিয়েছি। তবে প্রেমের ছোঁয়া আছে—এমন গোটাকয় কবিতা তাঁর রয়েছে, আমাদের পড়ে শুনিয়েছেও সে। কোনো গোপন প্রণয় সে কবিতার উৎস—এমন কথা মোটেই অযৌক্তিক নয়। তবে কোথায় তাঁর প্রকৃত আনুগত্য, প্রেমে না বিপ্লবে, কবিতায় সে কখনো গোপন রাখেনি। যেমন দেখি এই কঠোর-
কোমল বাক্যদ্বয়ে—
‘আমি তো তাদেরই জন্য/ সূর্যের দিকে চেয়ে থাকবার অভ্যাসে যারা বন্য।
আমি তো তোমারও জন্য/ কপাল-জ্বালানো যে মেয়ের টিপে রক্তের ছোপ ধন্য।’

১৯৭২-৭৩-এর প্রায় পুরোটা সময় ফারাবী ও আমি প্রতিদিন বিকেলে পল্টনের ছাত্র ইউনিয়নের অফিসে আসতাম। সে সময় গণসাহিত্য নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ হওয়া শুরু হয়েছে, আমরা দুজনেই সে পত্রিকার অঘোষিত পিয়ন। ফারাবীর একটি নতুন মোটরসাইকেল ছিল, বিকেল হলেই সে আমার বাসায় এসে হাজির। তাতে করে কতবার লেখা বা বিজ্ঞাপন আনতে গেছি, নওয়াবপুরের প্রেসে বসে বসে প্রুফ দেখেছি, কোনো কারণ ছাড়া গণসাহিত্য অফিসে মফিদুল ভাই (মফিদুল হক) বা হাসনাত ভাইয়ের (আবুল হাসনাত) সঙ্গে আড্ডা দিতে হাজিরা দিয়েছি।

১৯৭৩-এর সেপ্টেম্বর থেকে আমি দেশছাড়া। ফারাবীর ক্যানসার হয়েছে—এমন একটি খবর শুনেছিলাম, তার বেশি কিছু নয়। ফারাবীর মৃত্যুর পর ওয়াসি আমাকে একটি চিঠি লিখেছিল, তাতে ফারাবীর জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা ছিল। লন্ডনে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আয়োজন চলছে, ওয়াসি সে সময় একদিন হাসপাতালে দেখতে এসেছিল। মাথার চুল পড়ে গেছে, শালপ্রাংশু দেহ, কিন্তু বেঁচে থাকার কী অদম্য আগ্রহ। ওয়াসি জানিয়েছিল, নতুন কী এক চিকিৎসা বেরিয়েছে, ফারাবী কাগজে পড়েছে। ‘দেখবে, ভালো হয়ে যাব,’ সে বলেছিল।

ফারাবী আর ভালো হয়নি।