উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রিতে প্রতারণা

‘স্বেচ্ছায় চলেছি ছুটে; বস্তুত জোয়ারে/ততটাই ফিরে আসি, যতখানি এগোই ভাটাতে।’ এ এক অনিঃশেষ স্থবিরতার গল্প যেন। যদি জাহাজের কথা আসে, তবে তার যাত্রীদের বলতে হয় ভীষণ রকম ভাগ্য বিড়ম্বিত। যদি বলা হয় জাতির কথা, দেশের কথা, তবে এক ভয়াবহ পরিণতির পূর্বাভাস এটি। গতি যেমন জীবনের জন্য সত্য, তেমনি বিপরীতমুখী গতি ঝুঁকির কারণ।
ভবিষ্যৎকে গড়ে-পিটে নিতে, স্বচ্ছন্দ ও সচ্ছল জীবনের আশায় ভুঁই-ছাড়া মানুষদের কাছে পাল্টা গতি বড় ঝুঁকির কারণ। ভালো-মন্দের বিন্যাস সব সমাজেই থাকে। এ ক্ষেত্রে একজনের মন্দ কাজের ভার অন্যের ওপর না বর্তানোই উচিত। কিন্তু সব তো ‘উচিত’ বুঝে হয় না। বিশেষত প্রবাসে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে আসা মানুষের একটি সাধারণ সূত্রে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। এটা সব দেশে, সব কালেই হয়ে এসেছে। এ কারণে প্রবাসে এগিয়ে যাওয়ার সূত্রটি থাকে যূথবদ্ধতায়। এখানে একজনের পা হড়কে গেলে তার দায় ও ভার অন্যদের ওপরও চেপে বসার ঝুঁকি অনেক।
বাংলাদেশের বহু মানুষ আজ আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের অসাধারণত্ব ও সংকল্পের পথ ধরে বহু অর্জন জমা হয়েছে। এ অর্জন একদিনে আসেনি। বহু বছরের বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সততা ও নিষ্ঠার পথ ধরে একটু একটু করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অর্জন, যা বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি সবার আস্থা সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু জোয়ারের উল্টো পিঠেই থাকে ভাটার বাস্তবতা। এ সত্যকে মেনেই যেন কিছু বাংলাদেশি-আমেরিকান স্বার্থান্ধ হয়ে চোরা পথ বেছে নিচ্ছে। উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রিতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর প্রতারণার যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা আমাদের এমন ঝুঁকির কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
আমেরিকায় বহু বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। টিকিট বিক্রিতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর প্রতারণা শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর ফল হয়েছে দ্বিমূখী। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দ্বিতীয়ত দেশীয় ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে অন্যদের আস্থা চলে যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা।
প্রবাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুরো দেশের সুনামকেই ক্ষুণ্ন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্য বাংলাদেশিরা। এ ক্ষতি আকারে-প্রকারে বাড়ার আগেই এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে অন্তত দেশ ও জাতিগত সুনামটা অক্ষুণ্ন থাকবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে কমিউনিটিভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সম্মিলিত অর্জনকে আরও বড় কোনো অর্জনের পথে নিয়ে যেতে হলে এই বিপরীত ও নেতিবাচক গতিকে রুখতে হবে। কারণ এ ধরনের গতি শুধু স্থবিরতাই নয়, সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে দেওয়ার জন্যও যথেষ্ট।