স্বাস্থ্যসেবা নিলে নাগরিকত্ব নয়

অভিবাসীদের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিদ্বেষের যেন শেষ নেই। অবৈধ অভিবাসীদের নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে বৈধ অভিবাসীদের অবৈধ বানিয়ে বিতাড়নের নজির সৃষ্টি করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এখানেই থেমে নেই তারা। মেডিকেইড, মেডিকেয়ার, ওবামা কেয়ার নামের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতা ও ফুড স্টাম্প নামের খাদ্য সহায়তা নেওয়া গ্রিন কার্ডধারীদের নাগরিকত্ব না দিতে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই বিধি প্রণয়ন করা হচ্ছে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, এর ফলে প্রায় দুই কোটি অভিবাসী ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাহলে কী স্বল্প আয়ের অভিবাসীরা চিকিৎসা না পেয়ে, না খেয়ে মারা যাবে? কী অমানবিক! কী নিষ্ঠুর!
আমেরিকা অভিবাসীদের দেশ হিসেবে পরিচিত। অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি কোথায় নেই অভিবাসীদের অবদান। এ দেশের শ্রমশক্তির ছয় ভাগের এক ভাগই অভিবাসী। আমেরিকার পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর আমেরিকায় অভিবাসীদের সম্মিলিত আয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের বেশি। আর এ বাবদ কর দেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতেও অভিবাসীরা শক্ত অবস্থানে। ২০০০ সালের পর থেকে যে কজন আমেরিকান রসায়ন, পদার্থ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন, তাঁদের ৪০ শতাংশই অভিবাসী।
কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অভিবাসী নাগরিকদের। কারণ তিন শ্রেণির অভিবাসীর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য গত জুনে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। যাঁরা ফৌজদারি মামলা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তথ্য গোপন করেছেন; মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ার যাঁদের বিতাড়নের নির্দেশ ছিল, কিন্তু ভিন্ন পরিচয়ে আবেদন করেছেন ও যাঁরা মিথ্যা বলে বা প্রতারণা করে নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। এ অবস্থায়ই সম্প্রতি আত্মীয়তা সূত্রে আমেরিকার নাগরিক হয়েছেন মেলানিয়া ট্রাম্পের মা-বাবা। এ কেমন স্ববিরোধিতা!
নব্বইয়ের দশকেও অভিবাসীরা আসত বানের জলের মতো। কিন্তু তাতে ট্রাম্পের মতো বেসামাল হননি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তিনি ১৯৯৮ সালে বলেছিলেন, ‘অভিবাসী জনগোষ্ঠী দিয়ে আমেরিকা সব সময় সবল হয়েছে। অভিবাসীরা প্রমাণ করেছে, তারা সবচেয়ে দুঃসাহসী, উদ্ভাবনী, বিশ্রামহীন ও পরিশ্রমী।’ ২০১৬ সালে বারাক ওবামা সরকার ১২ লাখ অভিবাসীকে গ্রিনকার্ড দিয়েছিল। ওই বছর সাড়ে সাত লাখ লোক গ্রিনকার্ড থেকে নাগরিকত্ব পেয়েছিল। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেমালুম ভুলে গেছেন অভিবাসীদের অবদানের কথা। তিনি হাঁটছেন উল্টো পথে। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে গ্রিনকার্ড বা নাগরিকত্ব প্রাপ্তির হার ২০ শতাংশ কমে এসেছে।
এভাবে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে কী পরাশক্তি আমেরিকার মঙ্গল হবে। এর মাধ্যমে কি ট্রাম্প প্রশাসনের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ প্রতিশ্রুতি রক্ষা সম্ভব? দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায় ‘না’। বহুত্ববাদী, বহু সংস্কৃতির, বহু ধর্ম-বর্ণের আমেরিকার এই রূপ একেবারেই বেমানান। ট্রাম্প প্রশাসনকে অভিবাসীদের দমন-পীড়নের পথ পরিহার করতে হবে। এ ব্যাপারে আরও মানবিক হয়ে বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।