জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বোধ হয় জানেন না, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টই ১৯৪২ সালে প্রথম ইউনাইটেড নেশন বা জাতিসংঘ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে মিত্র দেশগুলোকে নিয়ে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা। সেই লড়াইয়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন ২৬টি মিত্র দেশকে। এর পরের ইতিহাস সবার জানা।
হাডসন নদী দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে তারপর। লন্ডনসহ বিভিন্ন শহর ঘুরে মার্কিন রাষ্ট্রনেতাদের সমর্থনে নিউইয়র্কেই স্থায়ী আবাস গড়েছিল জাতিসংঘ। শুধু অফিস নয় জাতিসংঘের চলার জন্য আর্থিক সমর্থনের ব্যাপারেও আমেরিকা সবার চেয়ে এগিয়ে। এখন সেই আমেরিকার একজন রাষ্ট্রপ্রধান যখন এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তখন তার যৌক্তিকতা মেনে নেওয়া কঠিন হয়।
জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সময়ের পরিক্রমায় এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা বেড়েছে। ফলে তাদের ব্যর্থতার পাল্লাও ভারী হয়েছে। কিন্তু শুধু ব্যর্থতার পাল্লায় জাতিসংঘকে মাপা ভুল হবে। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যও অগ্রাহ্য করার মতো নয়। বহু দেশে সংঘাত বন্ধ করে শান্তি স্থাপনে জাতিসংঘের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর পাশাপাশি সবার জন্য আলোচনার একটা মঞ্চ হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান অনন্য।
এখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান যোগ দিয়ে তাঁদের কথা তুলে ধরেছেন। কারও কথা সবার পছন্দ হবে কিংবা প্রধান পৃষ্ঠপোষককে খুশি করতে (যেমনটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি) সবাইকে কথা বলতে হবে—এর কোনো যুক্তি নেই। এটাই গণতন্ত্রের মূল শিক্ষা। আর আমেরিকা তো সেই গণতন্ত্রেরই পূজারি। হঠাৎ করে এমন কী হলো যে আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধানকে এই নীতি থেকে সরে আসতে হবে? তাহলে কী তিনি দেশেও একই পথ অনুসরণ করতে চাচ্ছেন ভবিষ্যতে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে ‘বার্ষিক চড়ুইভাতি’ বলে উপহাস করেছিলেন। গতবার নিজের প্রথম ভাষণে উত্তর কোরিয়াকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, যা একেবারে নজিরবিহীন। বিশ্বের বিভিন্ন বিবদমান দেশ এই মঞ্চে বসে কখনো এভাবে কথা বলে না। সবার লক্ষ্যই থাকে সমঝোতা। কিন্তু ট্রাম্প সে পথে হাঁটেননি। তিনি অন্যদের চেয়ে আলাদা, এটা বোঝানোর উন্মাদনা ও অপরিপক্বতা সব সময় ট্রাম্পকে তাড়া করে ফেরে।
এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভাষণ দিতে এসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সবার হাসির পাত্র হলেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে নির্বাচনী ক্ষেত্র মনে করে তিনি ঘোষণা দিলেন, ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে তাঁর প্রশাসন যা অর্জন করেছে, আমেরিকার ইতিহাসে অন্য কারও পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। ট্রাম্প গাম্ভীর্যের সঙ্গে কথাগুলো বললেও চাটুকারের অভাবে কোনো হাততালি পাননি; বরং উপস্থিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অনেকেই সশব্দে হেসে ওঠেন, কেউ কেউ মুখ টিপে হাসেন। এতে বিব্রত হন ট্রাম্প। নিজেকে সামলে তিনি বলেন, আমি এই প্রতিক্রিয়া আশা করিনি।
তিনি কী আশা করেছিলেন বলা শক্ত, তবুও আশার কথা যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিব্রত অন্তত হয়েছেন।