প্রবাসীদের প্রত্যাশা

‘ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি/তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারিনে সেই দুই বিঘা জমি।’ জন্মভিটার টান এমনই। জীবনের নানাবিধ প্রয়োজনে কোনো মানুষ যত দূরেই যাক, তার মন পড়ে থাকে জন্মস্থানেই, যাকে সে একান্ত আপন বলে মনে করে। নিজ দেশ, জন্মভূমির চেয়ে মানুষের আপন আর কিছু নেই।
আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ব্যতিক্রমহীনভাবেই দেশ অন্তঃপ্রাণ। রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’র উপেনের মতোই বাংলাদেশের ভালো-মন্দে সঙ্গে তাঁদের ভালো-মন্দ মিশে আছে একাকার হয়ে। সেখানে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিই আমেরিকার মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান সে দেশের আইনপ্রণেতা বনে যাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যাবে তাঁদের হৃদয়ে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে এখন নিউইয়র্কে আছেন। নিজ দেশের সরকারপ্রধানকে কাছে পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিভিন্ন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা চেয়েছেন আমেরিকায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সেবা বাড়াতে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হোক। চেয়েছেন দেশে রেখে আসা সম্পদের নিরাপত্তা ও হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সহজ করা হোক। চেয়েছেন নিউইয়র্কে যেন নিজস্ব কনস্যুলেট ভবন স্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে দেশে বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও প্রবাসীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ’ সেবা চালুর দাবিও জানানো হয়েছে। এ সব দাবি সরাসরি বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত।
প্রবাসীরা সব সময়ই চান বাংলাদেশ ভালো থাকুক। এই ভালো থাকার জন্য তাঁরা সরাসরি অবদানও রাখতে চান। এ কারণে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সুশাসন, শিল্পের বিকাশ, অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন চান তাঁরা, তেমনি চান এই সার্বিক কর্মযজ্ঞে নিজেদের সম্পৃক্ততা। তাই দেশে বিনিয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। নিউইয়র্কপ্রবাসীরা সরাসরি ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছেন। এ দাবিও উঠে এসেছে দেশের প্রতি টান থেকেই, যাতে যোগাযোগটা সহজ হয়, সংযোগটা বেশি থাকে। প্রবাসী সন্তানদের দেশের প্রতি এই মমত্ববোধকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। দেশের স্বার্থেই প্রবাসীদের এ চাওয়াগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে যথাযথ সাড়া দেওয়া উচিত।