বাতাসে শীতের ঘ্রাণ!

কয়েক দিন আগে গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হয়েছে। সেই কাকডাকা ভোরে ওঠেই ছেলে-মেয়েরা ছুটতে শুরু করে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে। অফিস-আদালতের বড় বড় কর্তা থেকে শুরু করে সব পেশার মানুষ আবার পূর্ণ উদ্যমে ছুটতে শুরু করেছে। কারও ভাগ্যে গরমের ছুটি মিললেও অনেকের হয়তো না!
নিউইয়র্কে সামারটা (গ্রীষ্মকাল) ধরতে ধরতেই যেন হাত ফসকে পালায়। কেউ কেউ অল্প বিস্তর ধরলেও মন খারাপ করে বসে থাকে না। নিউইয়র্কের প্রকৃতিও বড়ই বিচিত্র! মুহূর্তেই পাল্টে যাওয়া আবহাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন এখানকার জীবন।
গাছের পাতাগুলো গজাতে গজাতে চলে যাওয়ার সময় চলে আসে। তবুত্ত ওরা কত সবুজ! জানে যাবে, তবুত্ত দুঃখ নেই। ফুলগুলোর ভালো করে ফোটাই হলো না, সমুদ্র সৈকতগুলো সহসাই জনশূন্য হয়ে যাবে! তবুও নিউইয়র্ক ছুটে চলে আপন গতিতে।
নিউইয়র্কের চারটি মৌসুম সম্পর্ক আমাদের সবারই জানা। গরমের শেষ হতে না হতেই আসে হেমন্ত (ফল), তারপরেই আসে হাড়কাঁপানো শীত। ফল মৌসুমে বৃষ্টি ঝরতে ঝরতে কখন যে শীত চলে আসে, কখন যে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো জমতে জমতে তুষার হয়ে ঝরে! সত্যিই এ এক প্রকৃতির লুকোচুরি খেলা যেন।
এই তো সেদিন নিউইয়র্কের ম্যাগনেটিক মানুষগুলো খোলস থেকে বেরিয়ে ছুটছিল, রৌদ্রোজ্জ্বল গরম হাওয়ায়! খোলামেলা শরীরে নিউইয়র্কের রমণীরা এসে মিশেছিল হাডসন রিভার আর ইষ্ট রিভারের ঢেউয়ের তালে তালে। হঠাৎই যেন ছন্দপতন!
নিউইয়র্কের দরজা-জানালার পাল্লাগুলো ইতিমধ্যেই বন্ধ হতে শুরু করেছে। এয়ারকন্ডিশনের কানেকশন হচ্ছে খোলা। বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে হঠাৎ করেই বিভিন্ন রকমের শীত বস্ত্রের ডিসপ্লে জানান দিয়ে যায়, কার যেন সময় হলো আসার!
কিন্তু তাতে কী। পৃথিবীর রাজধানী হিসেবে খ্যাত ম্যানহাটনের ম্যাগনেটিক মানুষ কোনো কিছুতেই দমে যাওয়ার নয়, কোনো কিছুতেই ঘরে বসে থাকার নয়। প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে সখ্য করে কীভাবে এখানকার জীবন হয় যাপিত, তা আমরা জানি।
পৃথিবীর রাজধানী কখনো ঘুমিয়ে পড়ে না, জেগে থাকে। অহর্নিশ জাগিয়ে রাখে রাজধানীর মানুষ।
সব মৌসুমে সমানতালে তাল মিলিয়ে মানুষ হাটে, কখনো বা দৌড়ায়।
আমিও আজ সকালে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটছি ম্যানহাটনে। মাথার ওপরে ঝমাঝম বৃষ্টি।
দমকা বাতাসে হিমেল হাওয়া। বৃষ্টি আর হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমিও ছুটছি ওদের সঙ্গে। হঠাৎ করেই নারী-পুরুষের শরীরে গরম কাপড়।
ভারী ভারী জ্যাকেট জড়িয়ে ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটে চলেছে মানুষ। মনের অজান্তেই ক্যামেরাটা ওঠে এল, সঙ্গে কয়েকটি ক্লিক!
বন্দী করলাম ভারী পোশাকে ছুটে চলা মানুষগুলোকে। কিন্তু থামানো গেল না ছুটে চলা।
গাছের পাতাগুলো মাথা দুলিয়ে বলে, এখনো তো আছি আগেরই মতো সবুজ!
বাগানের বিভিন্ন রকমের ফুলগুলো সুবাস বিলাতে বিলাতে বলে, যাইনি তো ঝরে এখনো, এখনো আছে সেই সুবাস!
এখানকার প্রকৃতি আর মানুষের এমনি জোরালো মনোনিবেশ, দারুণ মনোবল। সেই অবদমিত মনে বাতাসে ফুলের সুবাস নিতে নিতে ম্যানহাটনের ম্যাগনেটিক মানুষ ছুটে চলেছে ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। বাতাসে শীতের ঘ্রাণ!