গ্রিনকার্ডের জন্য বিসর্জন!

আজ শনিবার। শায়লার কলেজ আর কাজ দুটোই বন্ধ। তাই শনিবার মানেই শায়লার জন্য স্বর্গীয় একটি দিন। ঘুম থেকে সাত সকালে উঠতে হবে না। ক্লাসে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই। হোমওয়ার্ক করার কোনো বালাই নেই। অনেক সুবিধা। শায়লা তার ঘরটাও বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে। ঘরে খুব কম আসবাবপত্র অথচ প্রতিটা আসবাবেই রুচির ছাপ স্পষ্ট। ঘরের এক পাশে ছোট একটা সিঙ্গেল খাট। খাটের পাশেই বড় একটা জানালা। সেই জানালা দিয়ে বাইরের গোটা দুনিয়া সে দেখতে পায়। আজ আকাশের রং অনেক ধূসর। শায়লা বিছানায় শুয়ে শুয়েই জানালা দিয়ে বাইরের বৃষ্টিমুখর আকাশটাকে দেখতে পেল।
এদিকে সেই সকাল থেকেই আকাশে গুড় গুড় শব্দ লেগেই আছে। জানালা খুললে দূরে শুধু ঝাপসা ঘরবাড়ি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। দূর থেকে চোখে পড়ে আই নাইন্টিফাইভ হাইওয়ে। সেই হাইওয়েতে চলমান গাড়ির হেডলাইটগুলো জোনাকি পোকার মতো থেকে থেকেই জ্বলে উঠছে। আবহাওয়া রিপোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, আজ সারা দিনই বৃষ্টি থাকবে। এখানে বৃষ্টি দিন মানেই ঘরে বন্দী দশা। তবে সারা দিন ঘরে বসে আলসেমিতে সময় কাটানোর মধ্যেও কত আনন্দ! তবে সবচেয়ে ভালো খবর হলো আজ ছুটির দিন। কাজেও যেতে হবে না, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসও নেই। অতএব বৃষ্টির দিন থাকুক আর নাই থাকুক, গোটা পৃথিবীটাই আজ তার। শায়লার নেটফ্লিক্স এবং হুলু দুটোতেই অ্যাকাউন্ট করা আছে। অবসর সময়ে সিনেমার দেখার মতো স্বর্গীয় আনন্দ আর কী হতে পারে? কিন্তু আজ এই বৃষ্টির দিনে কেন জানি সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করছে না।
আচ্ছা, ভুনা খিচুড়ি করলে কেমন হয়? আর সেই সঙ্গে যদি বন্ধুদের বাসায় ডেকে এনে স্রেফ বাঙালি আড্ডা দেওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। কত দিন রফিক, শেলি, আকতারকেও দেখি না। আর দেখি না প্রাণের মানুষ ফারুককে। কিন্তু তারা সবাইতো নিশ্চয়ই খুব ব্যস্ত! রফিক, শেলি, আকতার, ফারুক—তারা সবাই ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যেই থাকে। একেকজন একেক শহরে। সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তবে ফারুক থাকে সবচেয়ে বেশি দূরে। সে থাকে জ্যাকসনভিল। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জ্যাকসনভিল ইউনিভার্সিটি। শায়লা থাকে ওয়েস্ট পামবিচে। এখান থেকে জ্যাকসনভিলের দূরত্ব প্রায় তিন শ মাইল। ড্রাইভ করলে চার ঘণ্টার বেশি লাগে। এত সময় ড্রাইভ করে ফারুক আসবে বলে মনে হয় না। তবে ফারুক ভুনা খিচুড়ি খেতে বেশ পছন্দ করে। তা ছাড়া ওর সঙ্গে দেখাও হয় না কত দিন হয়ে গেল। প্রতিদিন ফোনে কথা বলে কি প্রাণ ভরে?
আজকের বৃষ্টিটাও অনেকটা যেন পাগলাটে বুনো মহিষের মতো। ঘাড় তেঁড়ে সেই কখন থেকে গর্জন করে পড়ছে তো পড়ছেই। থামার কোনো লক্ষণ নেই। এমন বৃষ্টি মনটাকেও কেমন জানি পাগলাটে করে তোলে। শায়লারও হয়েছে সেই দশা। মনটা আজ পাগলাটে হাওয়ার মতো পাক খাচ্ছে বাইরের ঝড়ের মতোই। মুঠোফোন হাতে নিয়ে একজন একজন করে সব বন্ধুকে সে কল করল। সবাই এক বাক্যে রাজি। খাবার-দাবার আর সেই সঙ্গে বাঙালি আড্ডার লোভনীয় প্রস্তাব কে ফিরিয়ে দেবে বলুন? তারপর আবার সেই আড্ডার ভেন্যু যদি হয় আমেরিকার ফিরিঙিদের শহরে?
সমস্যা হলো ফারুককে নিয়ে। শায়লা কয়েকবার কল করেও তাকে খুঁজে পেল না। ইদানীং প্রায় সময়ই তার মুঠোফোন বন্ধ থাকে। কাজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপ থাকলে এমনটাই হয়। শায়লা নিজেই নিজের সঙ্গে যুক্তি দেয়। আহা! ফারুক যদি আসলে কতই না ভালো হতো! অন্তত একটা দিনের জন্য হলেও ফারুককে কাছে পাওয়া যেত। সেই জ্যাকসনভিলে সে একা একা থাকে। বেচারা কী খায়, কীভাবে জীবন চলে! সে আসতে না পারলে আজকের আনন্দ অর্ধেকটাই মাটি হয়ে যাবে। শায়লার এসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ করেই ফারুকের ফোন এল। শায়লা অনেকটা দৌড়ে ফোনটা রিসিভ করল। তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথাবার্তা হলো। শায়লার মনটাও খারাপ হয়ে গেল। ফারুক আসতে পারবে না। কারণ তার কাজের চাপ অনেক, সেই সঙ্গে পরীক্ষার চাপও। তবে সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ৩ অক্টোবর শায়লার জন্মদিনে সে আসছে। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাকে অনেক ভালোবাসার কথা জানিয়ে মুঠোফোন রাখল শায়লা। আহা! এত কষ্ট করে আজ সে রান্না-বাড়া করবে, শাড়ি পরবে, টিপ পরবে। অথচ আজ এই বিশেষ দিনে সে আসতেই পারবে না? আমেরিকার জীবনে অনেক বাস্তবতাকেও মানতে হয়। এ আর নতুন কী? শায়লা সেই বাস্তবতাকেই মেনে নেয়।
শায়লার সঙ্গে আপনাদের একটু পরিচয় করিয়ে দিই। পাম্প বিচ আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে সে পড়ছে। পড়াশোনা শেষ করতে আরও দু বছর বাকি। শায়লা আমেরিকায় এসেছে শিক্ষার্থী ভিসায়। বয়স ২৩। দেখতে–শুনতে বেশ আকর্ষণীয়। নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে খুব সজাগ। মনে প্রাণে সে রাবীন্দ্রিক ধাঁচের। সময় সুযোগ পেলেই শাড়ি পরে সে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। নিজে বাংলা ও ইংরেজিতে কবিতা লিখে। এরই মধ্যে দু–একটি কবিতা বাংলাদেশে ভালো কিছু সাহিত্য পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ক্লাবের সঙ্গেও সে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ করতে শেক্সপিয়ারের একটি নাটকের রিহার্সাল দিচ্ছে। ছাহার হলো নীলার বন্ধু এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে এসেছে তুরস্ক থেকে। ওয়েস্ট পাম্প বিচে লেক পার্ক শহরে একটি দুই বেডরুমের বাসা ওরা শেয়ার করে থাকে। ছাহারও খুব ভালো কবিতা লিখে। আবার গিটার বাজায়। শায়লার সঙ্গে ফারুকের পরিচয় প্রায় তিন বছর হতে চলল। তাদের পরিচয় হয়েছিল ওয়েস্ট পাম্প বিচে এক বাঙালি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায়। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থেকেই প্রেম। ফারুক আর শায়লা প্রায় সমবয়সী। দুজনেরই ইচ্ছা, পড়াশোনা শেষে তারা বাংলাদেশ চলে যাবে। শুরু হবে তখন নতুন এক ভালোবাসায় মাখা জীবন।
সেদিন শায়লার বাসায় ফারুক ছাড়া সব বন্ধুরাই এসেছিল। এ নিয়ে শায়লার মন খারাপ থাকলেও বিষয়টিকে সহজভাবেই মেনে নিয়েছে। জীবনের অনেক শখ আহ্লাদ আর ভালো লাগাকে বৃহত্তর স্বার্থে জলাঞ্জলি দিতে হয় বৈকি! ফারুকের একটা বিষয় শায়লার খুব ভালো লাগে। সেটি হলো তার সততা। সে সর্বত্রই সেটি মেনে চলে। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে সৎ থাকা সহজ না। কিন্তু ফারুক তা পারে। সে টাকা পয়সার বিষয়ে সৎ, কমিটমেন্টের বিষয়ে সৎ, এমনকি সম্পর্কের বিষয়েও সৎ। তা ছাড়া খুব অ্যাডভেঞ্চারাস ধরনের, যেন কোনো রূপকথার গল্পের নায়ক। সেই গল্পের নায়কেরা যেমন সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে, ফারুকও যেন ঠিক তাই। এই যেমন ধরুন, ওয়েস্ট পাম্প বিচ শহরে রাত বারোটার সময় আপনার শুঁটকি ভর্তা খেতে ইচ্ছে করছে। কোনো সমস্যা নেই। শুধু কষ্ট করে কথাটা ফারুককে বলতে হবে। বাস! সে গুগল সার্চ করে বাঙালি রেস্তোরাঁ হোক বা তার কোনো বাঙালি বন্ধু হোক বা যেভাবেই হোক আপনার জিভের ডগায় শুঁটকি ভর্তা আনবেই আনবে। মনে পড়ে, লেখক পল হাল্ডের কথা। পল হাল্ড বিখ্যাত শিশুতোষ অভিযাত্রিক উপন্যাস’ টিনটিন’ পড়ে এতই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, নিজেই ঘর থেকে বড় কোনো অভিযানের নেশায় ঘর থেকে বের হয়ে পরেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। সেই অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করেই পল তার সারা জাগানো গ্রন্থ Around the world in 44 days লিখে ফেলেছিলেন। শায়লার মনে হলো, ফারুক যেন পল হাল্ডের উল্টো চরিত্র। তাকে দেখলে যেকোনো লেখক–সাহিত্যিক অথবা কোনো চিত্রনির্মাতা এই চরিত্রটিকে লুফে নিতে পারত। এসব বিষয়ে সে বেশ পরীক্ষিত।
আজ ৩ অক্টোবর, শায়লার জন্মদিন। সে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠল। জন্মদিনে কত কাজ! সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বাংলাদেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা, ঘরটাকে যতটুকু সম্ভব গোছগাছ করা ইত্যাদি অনেক কাজ। ফুলদানিতে গত রাতেই কিছু তাজা ফুল রেখে দিয়েছিল। শায়লা ঘড়ির দিকে তাকায়। আজ কত আনন্দের দিন! অনেক দিন পর ফারুক আসবে। গতকালও ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঠিক বারোটা এক মিনিটে টেক্সট মেসেজ দিয়ে সে তাকে সবার আগে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ‘শুভ জন্মদিন প্রিয়। অনেক অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য।’ দুবছর ধরে ফারুক ঠিক একই ভাষায় শায়লাকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আসছে। শায়লা এটাও জানে, জন্মদিনের দিন সে কী কী কাণ্ড ঘটাবে। সবকিছু যেন নাটকের স্ক্রিপ্টের মতো। কোনো ঘটনার পর কোনো ঘটনা ঘটবে শায়লা তা জানে। যেমন শায়লা জানে, ওর জন্য সে অসাধারণ সুন্দর একটা শাড়ি কিনে আনবে, ঠিক দুপুর বারোটার সময় বাসার কলিং বেল বেজে উঠবে। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই তিন ডজনের একটি গোলাপ তোড়ার ডেলিভারি আসবে। সেই ফুলের তোড়ার সঙ্গে থাকবে সুন্দর জন্মদিনের একটি কার্ড। সেই কার্ড আবার খোলা যাবে না। মানা আছে। কারণ নায়কের উপস্থিতিতে সেটি খুলতে হবে। তার পরপরই বাসায় একটি সারপ্রাইজ কেক চলে আসবে। এবং এর পরপরই ঘটবে নায়কের আগমন। হঠাৎ করেই শায়লার মুঠোফোন বেজে উঠবে। অন্য প্রান্ত থেকে নায়ক তার নায়িকাকে বলবে, ‘সরি শায়লা, আমি আজ আসতে পারছি না। কাজ থেকে ছুটি পাইিই।’ নায়িকা তখন রাগ করে বলবে, ‘ঠিক আছে আসতে হবে না তোমার। আমিও আমার জন্মদিনে আজ না খেয়ে থাকব।’ সঙ্গে সঙ্গেই নায়ক বলবে, ‘আরে ঠিক আছে আছে। দরজাটা খোলতো। আমি তোমার বাসার বাইরেই দাঁড়িয়ে আছি।’ শায়লার জন্মদিনে ফারুকের সব কাণ্ড এখন তার মুখস্থ।
ঘড়ির কাটা দুপুর বারোটা। সঙ্গেই সঙ্গেই শায়লার বাড়ির কলিং বেলের শব্দ। লরি ফ্লোরেন্স নামের এক ফুলের দোকান থেকে তিন ডজন সাদা রংয়ের গোলাপের তোড়া নিয়ে এক স্প্যানিশ তরুণ এল। ফুলগুলোর সঙ্গে এল সুন্দর জন্মদিনের একটি কার্ড। না, সেই কার্ডে কি লেখা আছে তাও জানা যাবে না। এটাও স্ক্রিপ্টে লেখা আছে। শায়লা গোলাপগুলো সুন্দর করে ফুলদানিতে সাজাল আর কার্ডটা সুন্দর করে টেবিলে কায়দা করে ফুলদানিতে হেলান দিয়ে রাখল। স্ক্রিপ্টের দ্বিতীয় পর্বে আর কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে জন্মদিনের কেক। ঠিক সময় মতো সেই কেকও চলে এল। এবার নাটকের চূড়ান্ত পর্ব। শায়লার মুঠোফোনে কল আসবে। কিন্তু কল আসছে না কেন? শায়লার যেন আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। এসব ভাবতে ভাবতেই শায়লার মুঠোফোন বেজে উঠল। সে এক দৌড়ে গিয়ে মুঠোফোন নিল। ওপাশ থেকে যথারীতি ফারুকের কণ্ঠ। ‘শুভ জন্মদিন। তুমি কেমন আছ? আমি আজ খুব ব্যস্ত, একটা কাজে আটকা পরে গেছি। আসতে পারছি না। আমাকেÿক্ষমা করে দিয়ো।’
শায়লা জানে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী এবার তাকে কোনো সংলাপ ছুড়তে হবে। শায়লা তাই করল, ‘ঠিক আছে। তুমি যদি না আস, আমি আজ সারা দিন না খেয়ে থাকব।’ মুঠোফোনের ওপার থেকে ফারুক আবার খুব গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘সরি শায়লা, আমি সত্যি সত্যি তোমার জন্মদিনে আসতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তুমি অনেক ভালো থেকো।’
শায়লা এবার কিছুই বুঝতে পারছে না। কারণ এসব বিষয় তার স্ক্রিপ্টে নতুন যোগ হয়েছে। তাই বোঝার কথাও নয়। কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতেই ওপাশ থেকে ফোনটা ফারুক কেটে দিল। শায়লা এবার হাসল, এই কথা! এবার সরাসরি নিশ্চয়ই কলিং বেলে টিপ দেবে! শায়লা তার শাড়িটা ঠিক করতে করতে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু কোথায় সেই কলিং বেলের শব্দ! একটা বাজে দুটো বাজে তিনটা বাজে। শায়লা ঠিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। এদিকে ফারুকের মুঠোফোনও বন্ধ। শায়লার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা! কী করবে কিছুই সে ভাবতে পারছে না। চিৎকার করে কান্না আসছে। ফারুকের কিছু হয়নিতো! দুর্ঘটনা! কত বাজে কথাই মনে আসছে। শুধু অস্পষ্ট স্বরে বলল, ফারুক তুমি ভালো আছতো! সুস্থ আছতো! হঠাৎ কি জানি মনে হলো শায়লার। সে জন্মদিনের কার্ডটা খুলল। সেখানে ফারুকের হাতে লেখা কয়েকটা অক্ষর। শায়লা কার্ডটা পড়তে শুরু করল।
‘শায়লা, আমাকে ক্ষমা করো। আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না। কারণ পুরো ঘটনার জন্য আমিই দায়ী। তুমি মিথ্যা একটি সম্পর্ককে আঁকড়ে ধরে যেন না বাঁচ, সে কারণে তোমাকে সত্য কথাটিই আমি বলতে চাই। আমি গত সপ্তাহে আমার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুকে বিয়ে করেছি। বিয়ের মূল কারণ গ্রিন কার্ড। এই কাগজটা আমার জীবনের জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। আমি জানি, ভালোবাসার কাছে এটি খুব হাস্যকর একটি যুক্তি। কিন্তু এটাও জানি, কখনো কখনো বাস্তবতার কাছে আমাদের শখ, আহ্লাদ এমনকি প্রেম ভালোবাসাকেও বিসর্জন দিতে হয়। আমি তোমার...কাছে...।’ ঝাপসা চোখে শায়লা আর কোনো শব্দই পড়তে পারল না।
শায়লার ঘরের সিডি প্লেয়ারে তখন ‘শিরোনামহীন’–এর একটি গান অবিরাম বৃষ্টির তালে তালে বেজেই চলেছে—

‘হয় না আর এমন তো হয় না
নদীর বুকে বৃষ্টি ঝড়ে, পাহাড় তারে সয় না।
সূর্য লাল বৃক্ষ সবুজ
আমি কান্দি ঘরের কোনায়, তুমি অবুঝ
বৃক্ষ আকাশ সূর্য মিলে
ঝরনার কথা কয় না...’