বাংলাদেশি ব্র্যান্ড

মুক্তবাজার অর্থনীতির এ যুগে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সুনামকে। এ সুনাম অর্জনের বহু পন্থা ও কৌশল রয়েছে, যাকে উপজীব্য করে একটি আলাদা ক্ষেত্রই তৈরি হয়েছে ‘নেশন ব্র্যান্ডিং’ নামে। মূলত গণতান্ত্রিক পরিবেশ, বিনিয়োগবান্ধব অর্থনৈতিক কৌশল ইত্যাদির মাধ্যমে এই ব্র্যান্ডিং করা হয়। হাল আমলে এ ধরনের ব্র্যান্ডিংয়ের সবচেয়ে বড় উদাহরণ নিশ্চিতভাবে চীন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই দেশ ও জাতিগত ব্র্যান্ডিংয়ের ধারণা এসেছে পণ্যের ব্র্যান্ডিং ধারণা থেকেই। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন যথাযথ বিপণন কৌশল, যার অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে উৎপাদিত পণ্যের মান ও সেই সূত্রে অর্জিত সুনাম। কিন্তু এই সুনাম অর্জনের জন্য শুধু মানের দিকে লক্ষ্য রাখলেই হয় না, সঙ্গে চাই পর্যাপ্ত প্রচার কৌশল।
তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। ওয়ালমার্টের মতো বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শোভা পাচ্ছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বিশ্ববাজারে এখন বড় আস্থার স্থল। সারা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু এত অর্জনের পরও বাংলাদেশ এখনো পাদপ্রদীপের আলোয় আসেনি। মূলত নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ যে মাত্রার আস্থা অর্জন করেছে, তাতে করে বিশ্ববাজারে সামনের সারিতেই থাকার কথা ছিল বাংলাদেশি কোনো ব্র্যান্ডের। তেমনটা হয়নি;
কারণ বাংলাদেশ এ বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। তবে আশার কথা এই যে,
সম্প্রতি নিউইয়র্কে শেষ হওয়া বাংলাদেশ বাণিজ্যমেলায় এই ব্র্যান্ডিংয়ের ওপরই
সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ও প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের
কর্তারা। একই সময়ে নিউইয়র্ক সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিনিয়োগবান্ধব দেশ আখ্যা দিয়ে, আমেরিকান ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু শুধু আহ্বান বা আশ্বাসেই হবে না। বাংলাদেশে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা, সহজলভ্য ও সস্তা শ্রম, নিম্ন উৎপাদন ব্যয়, উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের বাজার সম্ভাবনা ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি
সংস্থাগুলোকে এক জোট করে দেশীয় ব্র্যান্ড তৈরি ও সম্প্রসারণে কাজ করতে হবে। এ জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে শুরুতেই দেশের ব্র্যান্ডিং করা প্রয়োজন। এই পুরো কাজে সর্বাত্মক সহায়তা করতে সদাপ্রস্তুত রয়েছেন আমাদের প্রবাসীরা, শুধু প্রয়োজন একটু আহ্বান ও উদ্যোগের।