শরণার্থী গ্রহণ ৪০ বছরে সর্বনিম্ন

নিজ ঘর ছেড়ে সহজে কোনো মানুষ অন্যের দরজায় কড়া নাড়ে না। দুর্যোগে-বিপাকে যখন অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হয়, তখনই কেবল এই আশ্রয় প্রার্থনার মুহূর্ত আসে। এই একই কথা খাটে দেশের ক্ষেত্রে। কোনো মা যখন তাঁর সন্তানকে নিরুদ্দেশ সমুদ্রযাত্রার জন্য ছোট নৌকায় তুলে দেন, তখন বুঝতে হয়, ওই ভূমির চেয়ে এই অনিশ্চিত জলযাত্রাই তাঁর কাছে নিরাপদ মনে হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। লাখো শরণার্থী বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে যাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে। এই শরণার্থী স্রোতের অভিমুখ স্বাভাবিকভাবেই ধনী দেশগুলোর দিকেই। শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে আমেরিকার সুনাম ছিল একসময়। বিশ্বনেতা হিসেবে এটিকে দায়িত্ব হিসেবেই মনে করেছে আমেরিকা। কিন্তু এ অবস্থার বদল ঘটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। ওভাল অফিসে বসার পর থেকেই তিনি শরণার্থী গ্রহণ সাময়িক বন্ধের পদক্ষেপ নেন। শুরুতেই তিনি যেকোনো দেশ থেকে শরণার্থী গ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। আর সিরিয়া, ইয়েমেনসহ সবচেয়ে সংকটাপন্ন এলাকাগুলো থেকে শরণার্থী গ্রহণ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সময়ে শরণার্থী গ্রহণ সীমিতকরণে বছরওয়ারি লক্ষ্য স্থির করা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ অর্থবছরে অনধিক ৪৫ হাজার শরণার্থী গ্রহণের কথা বললেও কার্যত আমেরিকা গ্রহণ করেছে মাত্র ২২ হাজার ৪৯১ জন শরণার্থীকে। এ সংখ্যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নতুন অর্থবছরে শরণার্থী গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার। ট্রাম্প প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যে তৎপরতা দেখাচ্ছেন, তাতে আগামী বছর আমেরিকায় শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতা হিসেবে আমেরিকার এ অবস্থান কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশেষত ‘বিদেশি সন্ত্রাসীদের প্রবেশ থেকে আমেরিকাকে রক্ষা’ শীর্ষক যে নির্বাহী আদেশের বলে শরণার্থী সীমিতকরণে ব্যাপক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ এটা কে না জানে যে শরণার্থীরা সন্ত্রাসী নয়, বরং সন্ত্রাসের ভুক্তভোগী। বিশ্বে ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে তার মৌল কারণ সন্ত্রাস ও সহিংসতা মোকাবিলার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভোগা আশ্রয়প্রার্থী মানুষদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়াটা কোনোভাবেই আমেরিকার ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।