নিকি হ্যালির পদত্যাগ

যোগীন্দ্রনাথ সরকার অনেক দিন আগে শিশুদের জন্য হারাধনের দশটি ছেলে শীর্ষক ছড়া লিখেছিলেন। তাতে এমনই কাণ্ড ছিল যে শেষমেশ জীবন রক্ষার যুদ্ধে জয়ী হারাধনের একমাত্র ছেলেটি মনের দুঃখে বনে চলে যায়। শিশুকালে হয়তো অনেকেই এ ছড়া পড়েছেন। না পড়লেও ক্ষতি নেই। আধুনিক হারাধনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। মাত্র দুই বছরও হয়নি তিনি গদিনশিন হয়েছেন। এরই মধ্যে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ও হোয়াইট হাউসে তাঁর ঘনিষ্ঠ এত কর্মকর্তা বিদায় নিয়েছেন যে কে কোথায় কখন আছেন তা নিশ্চিত করা গুগলেরও সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক খুঁজে সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান নেত্রী নিকিকে পছন্দ করেছিলেন এই গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান প্রাইমারিতে নিকি হ্যালি কিন্তু ট্রাম্পকে সমর্থন করেননি। বোঝাই যায়, তখনই ট্রাম্পের অনেক কিছুর সঙ্গে তিনি একমত ছিলেন না। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর কখনই তিনি ট্রাম্প-নির্দেশিত নীতির বিরোধিতা করেননি। বরং সব বিষয়ে জোরালো ভাষায় কথা বলেছেন যা ছিল দীর্ঘদিনের আমেরিকার অনুসৃত নীতির বিপরীত। পরিবেশ-বিষয়ক প্যারিস চুক্তি প্রত্যাখ্যান, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধংদেহী মনোভাব—সব বিষয়ে তিনি ছিলেন ট্রাম্পের মতের জোরালো অনুসারী। নিকি হ্যালি এই পরিষদ থেকে এমন কথাও বলেছেন যে যারা যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করবে না, তারা কোনো সাহায্য পাবে না। তিনি হুমকি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সেসব রাষ্ট্রের তালিকা তৈরি করছে।
আর তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে এমন কোনো ইঙ্গিত গণমাধ্যম যেমন দেয়নি তেমনি দেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা নিকি নিজে। জল্পনার কারণও সেটাই। বিশেষ করে পদত্যাগের ঘোষণার পর গণমাধ্যমের সামনে দুজনের হাস্যোজ্জ্বল প্রশংসা, অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উৎসাহী করে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকার সময় হঠাৎ কেউ তাতে ইতি টানলে অবশ্যই তাঁকে বিষয়টি খোলাসা করতে হবে। আমেরিকার জনগণ তা জানার অধিকার রাখে। আর বর্তমান প্রশাসন থেকে এত জন বিদায় নিয়েছেন বা নিতে বাধ্য হয়েছেন যে কেউ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ালেও তা জনমনে বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয় না।
নিকি হ্যালি অনেক কম বয়েসে সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হয়েছিলেন। এবং তাঁকে কেউ অসফল বলতে পারবে না। এখন তাঁর মনে ভবিষ্যতে রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জাগলে তা একেবারেই অবান্তর নয়, বরং অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। হিলারি ক্লিনটন সে পথ আমেরিকার নারী রাজনীতিকদের দেখিয়ে গেছেন। অবশ্যই এ একুশ শতকে আমেরিকা অপেক্ষায় থাকবে একজন নারী প্রেসিডেন্টের জন্য।
তারপরও নিকি হ্যালির পদত্যাগ এই প্রশ্ন আবার তুলে দিয়ে গেল যে আমেরিকার মতো দেশের জন্য একটি স্থিতিশীল প্রশাসন দেওয়া কী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব?