সেইন্টস অ্যান্ড সিনারস

ম্যানহাটনের পানশালাগুলোর চেহারা আর মেজাজ মোটামুটি একই রকম। রাস্তায় যখন সন্ধ্যা নামে তখন সেখানে আলো-আঁধারিতে ফুটে ওঠে উৎসবের নৃত্য। ধীরে ধীরে খেলা জমে উঠে। পানশালায় আগত অতিথিদের গুঞ্জনে তখন চারপাশের বাতাস পারদের মতো ভারী হতে শুরু করে। ঠিক সময় মওকামতো গলা ভেজানোর স্বাদই আলাদা। তবে কুইন্সের উডসাইডের এই ‘সেইন্টস অ্যান্ড সিনারস’ পানশালাটির ভাব চক্করই আলাদা। বুঝতেই পারছেন, নামটাতেই একটা দার্শনিক দার্শনিক গন্ধ পাওয়া যায়। কে যে সেইন্ট আর কে যে সিনার কে জানে? তবে এই পানশালাটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে পানের পাশাপাশি ধর্মীয় আলোচনা থেকে শুরু করে দর্শন, সুফিবাদ, রাজনীতি সবকিছুই চলে। এখানে সবাই বক্তা আবার সবাই শ্রোতা। সে কারণেই এই পানশালাটি আমার এত পছন্দ! শুধু পছন্দ আমার একার নয়। সেও জায়গাটি দারুণ ভালোবাসে। অতএব আমাদের মিলিত পছন্দের ফসল হলো এই ‘সেইন্টস অ্যান্ড সিনারস’ নামের পানশালা। জ্যাকসন হাইটস থেকে হাঁটার দূরত্বে এমন অসাধারণ পানশালা আপনি কোথায় পাবেন?
কথাটা আগেই পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। আমাদের সম্পর্কটা অনেকটাই বলা যেতে পারে নির্বাচিত সম্পর্ক। নির্বাচিত সম্পর্কের একটা আলাদা সংজ্ঞা আছে। কিন্তু আমি এই সংজ্ঞায় আপাতত যাচ্ছি না। বেশ বুঝতে পারছি, আপনি হয়তো ভাবছেন লং আইল্যান্ড আইস টি পেটে চালান দিয়ে আমি এখন বকা শুরু করেছি। না মোটেও তা নয়। আমরা দুজনেই দুজনকে ভালোবাসি বলেই দাবি করি। কথাটা ভালো করে শুনে রাখুন। বলছি, দাবি করি। ভালোবাসি সে কথা বলছি না কিন্তু। কারণ সেটির প্রমাণ এখনো আমরা কেউ দিতে পারিনি। আমরা দাবি করি আমরা ভালোবাসি কিন্তু তারপরও কোথায় যেন একটা বড় রকমের ‘কিন্তু’ আছে। এই ‘কিন্তুটাই’ হলো যত ঝামেলা। এটিই শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটাকে অনেকটা ‘কন্ডিশনাল ভালোবাসা’ বানিয়ে ফেলেছে। তবে সে মানুষ হিসেবে মন্দ না। বাঙালি মেয়ে হিসেবে চমৎকার। গুছিয়ে, একটু ন্যাকামো করে কথা বলে, আবার শিল্প-সংস্কৃতির যথাযথ সমঝদার সে। কিন্তু তারপরও কেন জানি কথাটা এত তাড়াতাড়ি তাকে বলতেও বিবেকে বাঁধছিল। হাজার হলেও ঘরে আমার বিয়ে করা বউ আছে। বউটা স্বভাব-চিন্তায় অনেকটাই সেকেলে। কিন্তু তারপরও বউতো? জয়া কিন্তু ঠিক তার বিপরীত। ওর চোখে কী যেন দেখতে পাই। জাদু নাকি অন্য কিছু? চোখ দুটো যেন দুটো চুম্বকের পাহাড়। টেনে–হিঁচড়ে একেবারে ওর সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও পাকা কথা দেওয়ার সময় এখনো হয়নি। হয়তো সময়ই সব জট খুলে দেবে। বাই দা ওয়ে, আমার নাম আশফাক।
জয়ার বয়স খুব একটা বেশি নয়, ২৭। এক সময় স্বামী, সংসার সবই ছিল। কিন্তু এখন নেই। স্বামী সংসার জয়ার ভাগ্যে টেকেনি। গত বছর জয়া বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়ে নিউইয়র্কে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে এসেই আবিষ্কার করে তার স্বামীর সঙ্গে অন্য কোন রমণীর সম্পর্ক। মেয়েটা প্রথম প্রথম বাসায় বন্ধু সেজে খুব আসত। জয়া বিষয়টা খুব একটা গায়ে মাখেনি। কারণ সে তার স্বামীকে বিশ্বাস করেছিল। স্বামী বেচারাও স্ত্রীর এই সরলতার সুযোগ নিতে ছাড়েনি। কিন্তু কিছুদিন পরই জয়ার মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে এবং অল্প কদিনের মধ্যেই কঠিন সত্যটি বের হয়ে পড়ে। তার স্বামীর সঙ্গে একটি মেয়ের দীর্ঘদিনের পরকীয়া সম্পর্ক। বিষয়টা গোপন করে দেশে গিয়ে সে বিয়ে করে। তারপর যা হওয়ার তাই হয়। কিন্তু জয়া এই সম্পর্ককে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তারা দুজনেই পরস্পর থেকে ছিটকে পড়ে এবং একসময় জয়ার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এখন এসব পুরোনো জং ধরা অন্ধকার অতীত ছাড়া আর কিছুই নয়। জয়ার সঙ্গে আশফাকের পরিচয় কর্মসূত্রে। জয়া জানত আশফাক বিবাহিত। কিন্তু সবকিছু জেনেশুনেই সে আশফাকের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে জয়া সম্পর্কটাকে কীভাবে নিয়েছিল? আশফাকের প্রতি শুধুই দুর্বলতা? তবে এই সম্পর্ক নিয়ে জয়া অনেক ভেবেছে। জেনেশুনে সে এমন একটা সম্পর্কে সত্যি কি জড়াবে? কিসের জন্য এই সম্পর্ক? শুধুই কি আশফাককে ভালোবাসা? নাকি পুরুষদের প্রতি প্রতিশোধ? অতীতের তিক্ততার প্রতি প্রতিশোধ? তবে ইদানীং আশফাককে নিয়েও জয়ার ভীষণ ভয়। এই অজানা ভয়টা যে কী, তা অবশ্য সে নিজেই জানে না। পুরুষ মানুষের চরিত্রের ওপর আস্থা রাখা সত্যি কঠিন।
উডসাইডের ‘সেইন্ট অ্যান্ড সিনার’ জায়গাটা একদিকে যেমন খুব নিরিবিলি, অন্যদিকে এটা বাঙালি সমাজের নাগালের বাইরে। আর যাই হোক, বাঙালিরা পানশালায় ঢুকে মদ্যপান করে না। বড়জোর তারা জ্যাকসন হাইটসে চা-সিঙাড়ায় ডুবে থাকে। আশফাক আর জয়া পাশাপাশি দুটো চেয়ার নিয়ে বসে। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই এখানে খদ্দরের ভিড় খুব একটা থাকে না। পাশের চেয়ারে একজন মাঝারি বয়সের ল্যাটিনো মহিলা লং আইল্যান্ড আইস টি অর্ডার দিয়ে টিভির বড় পর্দার দিকে হাঁ করে বোকা রোবটের মতো বসে আছে। জয়া তার ছোট্ট ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করে ঠোঁটে বার কয়েক ঘষে নিল।
‘আশফাক, আমাদের সম্পর্কটার একটা নাম দিলে কেমন হয়? বলত কী নাম দেওয়া যায়? পরকীয়া? আশফাক গানের তালে তালে টেবিলে আঙুল দিয়ে চাঁটি দিতে থাকে।
খুব চিন্তিত অবস্থায় জয়াকে খুব অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। তখন তার সরু চিকন নাক থেমে থেমে কাঁপতে শুরু করে। আশফাক এই সুন্দর দৃশ্যটা তার চোখ দিয়ে আলতো করে চকিতেই চেটে নেয়।
‘আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে? তুমি কি আমাকে সত্যি বিয়ে করতে চাও?’ ঘাড় সোজা করে আশফাকের সামনে এসে দাঁড়ায় জয়া।
জয়ার এ ধরনের প্রশ্নে আশফাক মোটেও প্রস্তুত ছিল না। আজ জয়ার কী হয়েছে? হঠাৎ করে আশফাককে খুব বিচলিত মনে হয়। নিজেই শুধু বিড়বিড় করে ‘বিয়ে?’ আশফাকের নাকের ডগাটি পানশালার লাল নীল আলোয় চক চক করে ওঠে।
জয়া এবার সরাসরি আশফাকের দিকে তাকায়। ‘তা ছাড়া ইদানীং বিষয়টা নিয়ে যতই ভাবছি, কেন জানি নিজের থেকে খুব অপরাধবোধ করছি। সত্যি, আমার জন্য একটা সংসার ভেঙে যাবে এটা আমি মানতেই পারছি না। আর আমারও মন বলছে, তুমি আমার বিষয়ে খুব একটা সিরিয়াস না। তারপরও মনে হলো বিয়ের কথাটা তোমাকে বলি। তুমি বিষয়টা নিয়ে ভাবো।’ কথাগুলো দ্রুত শেষ করে আশফাকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জয়া বের হয়ে গেল।
নিউইয়র্কের রাস্তায় তখন সন্ধ্যাবাতি জ্বলতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝেই সেভেন ট্রেনের বিকট কান ফাটানো শব্দ। রুজভেল্ট অ্যাভিনিউয়ের মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি কানে আসছে। আশফাক স্থির চোখে জয়ার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে। সত্যি কতই না বিচিত্র এই জীবন! জয়ার প্রতি যে তার দুর্বলতা আছে, আশফাক সেটা ঠিকই টের পায়। কিন্তু এই দুর্বলতা কি ভালোবাসা? নাকি জয়া শুধুই একটা মোহ! আশফাক হিসাব-নিকাশ করে বুঝতে চায়। খুব গভীরভাবে আশফাক এই প্রশ্নটা নিজেকেই বারবার করে। তখন তার বউ, বাচ্চার চেহারা তার কাছে অনেক বড় মনে হয়। আবার পাশাপাশি মনে হয়, ওদের ত্যাগ করলেই জয়াকে পাওয়া যাবে। কিন্তু ত্যাগ করা এতই সোজা? হাজার চিন্তা-ভাবনা মাথায় নিয়ে আশফাক আরও এক পেগের অর্ডার দেয়।

২.
গভীর রাত। জানালার গ্রিল ভেদ করে পর্দার সঙ্গে লুকোচুরি খেলে ঘরের ভেতর একরাশ জ্যোৎস্নার আলো পড়েছে। সেই বেহেশ্‌তি আলোয় আশফাক তার বউয়ের সরল মুখটাকে একবার দেখে নেয়। আহা! কী পরম নির্ভর আর ভালোবাসা নিয়ে তার বউ ঘুমিয়ে আছে। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হয় যেন দেবশিশু। মনে হয় পৃথিবীর এই সুন্দরতম উপহারকে আশফাক কত অবহেলার সঙ্গেই না দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তার চোখে ঘুম নেই। জয়াকে যে এ মুহূর্তে বিয়ে করা সম্ভব নয়, তা সে মোটামুটি বুঝে ফেলেছে। আশফাক মনে মনে এর আশু ফলাফল নিয়ে কল্পনায় একটি ছবি আঁকার চেষ্টা করে। সব কথা জানার পর জয়া কি তাকে ছেড়ে চলে যাবে? নাকি জয়া সব শুনেও তার জীবনের সঙ্গে ছায়ার মতো ভালোবাসা হয়ে থেকে যাবে? আবার কে জানে, জয়ার সঙ্গে হয়তো কালই শেষ দেখা হবে। তখন ‘সেইন্ট অ্যান্ড সিনারে’ শেষ সন্ধ্যাটা কেমন হবে?
বেঁধে দেওয়া সময়ের পনেরো মিনিট আগেই জয়া সেইন্ট অ্যান্ড সিনারে এল। আজ জয়াকে দারুণ সুন্দর লাগছে। কপালে লাল টিপ। পরনে টাঙ্গাইলের ডোরাকাটা সুতির শাড়ি। ঠোঁটে কড়া করে লাল লিপস্টিক। ‘আজ একটু আগেই চলে এলাম।’ জয়া কথাগুলো বলতে বলতে আশফাকের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসল।
না, তুমি ঠিক সময়ই এসেছ। চল, আগে গলা ভিজাই, তারপর কথা বলি। এই সামান্য কটা কথাও আশফাককে বলতে যেন অনেক কষ্ট হয়।
বেশ, তাই ভালো। বলেই ঠোঁটের বাম পাশে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে জয়া আশফাকের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।
কী ব্যাপারে গম্ভীর হয়ে এত কী ভাবছ? জয়ার চোখে আবার রহস্যের হাসির ঝিলিক।
এবার আশফাক সোজা হয়ে বসল। ভাবে, সত্যি কথাটা বলে ফেলাই ভালো। তাতে টেনশনটা হয়তো কমে যাবে।
জয়া, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তারপরও অনেক ভেবেচিন্তে এ মুহূর্তে ....আশফাক মনে জমিয়ে রাখা কতগুলো প্রাণপণে বলতে চায়, কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয় না।
আশফাকের কাণ্ড দেখে জয়া শব্দ করে হাসে। একজন নারী হওয়ার কারণেই সে আশফাকের মনের কথা যেন ঠিক শুনতে পায়। সম্ভবত সব নারীই পুরুষের মনের কথা ঠিক টের পায়।
জয়া এবার পরিবেশটাকে হালকা করার জন্য আশফাকের সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। ‘তুমি বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবছ, তাই না? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, গত রাতে চিন্তায় তোমার ভালো ঘুম হয়নি। কী ঠিক বলেছি? শোন, তুমি আমাকে যা বলতে চাইছিলে, আমার মনে হচ্ছে আমি তার সবকিছু ঠিকঠাক বুঝতে পারছি।’ জয়া খুব ধীরে ধীর কথা গুলো বলে।
‘একটা গুড নিউজ আমি তোমাকে দিতে চাই। আমি আগামী মাসেই বিয়ে করতে যাচ্ছি। জয়া সাবলীলভাবেই বলে কথাটা। হ্যাঁ, আমি বিয়ে করার সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছি। না, আমার হবু বর নিউইয়র্কে থাকে না। ও থাকে আর্লিংটন, টেক্সাসে। আমার সঙ্গে হালকা একটু জানাশোনা আগে থেকেই ছিল। ভাবলাম, ওকেই বেছে নিই। মানুষ হিসেবে অসাধারণ ভালো মানুষ। আর আমার কথা সে সবই জানে। মজার ব্যাপার কী জানো, আমি কীভাবে যেন জানতাম, তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবে না বা এমন একটা সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারবে না।’
জয় বলে চলে, ‘আরেকটা বিষয়ও গভীরভাবে আবিষ্কার করি, তোমার সঙ্গে আমি আমার জীবনকে জড়াতে চেয়েছিলাম মনে হয় শুধু আমার স্বামীর প্রতি প্রতিশোধ নিতে। আমি জয়া, আমিও পারি ঠিক এমন একটা ভাবনা থেকে তোমার সঙ্গে জীবনটাকে জড়াতে চেয়েছিলাম। আমার একটা সুন্দর সংসার যদি কেউ ভেঙে দিতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না? কিন্তু ভেবে দেখলাম, তুমি মানুষটা খারাপ না। আর তোমার সেই সাহসও নেই। এ কারণে খামাখা তোমার বউ তোমার ফুটফুটে বাচ্চাটাকে এই শাস্তি দিয়ে কী লাভ?’
বাহ! তাহলে তুমিও আমার মতোই ভালোবাসাবাসির দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলে? কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারো নি? খুব নিচু স্বরে কথাগুলো বলে আশফাক।
না, আশফাক। তা ঠিক নয়। তোমার দ্বিধা-দ্বন্দ্বই আমাকে আরও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলেছে। এ কারণে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমরা হয়তো কেউ কাউকেই ভালোবাসি নি। ঐ যে, আমাদের ভালোবাসাটা ছিল ‘কন্ডিশনাল’? যদি ভালোবাসতাম তাহলে দুজনেই একসঙ্গে খুব খারাপ মানুষ হতেও অসুবিধা ছিল না।’ জয়া বিদায়ের ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়, ‘আমার হাতে অনেক কাজ। উঠতে হবে।’
হুম, ঠিক কথাই বলেছ জয়া। আশফাক কাঁধ ঝাঁকায়। আচ্ছা চল, তোমাকে তোমার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিই।
না আশফাক। আমি সেভেন ট্রেন ধরে ঠিকই চলে যাব। তুমি বরং তোমার বাড়িতে যাও। তোমার বউ–বাচ্চা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। কথাগুলো বলেই জয়া ধীরে ধীরে রুজভেল্ট অ্যাভিনিউয়ের রাস্তাটা পার হয়ে সেভেন ট্রেন ধরতে দ্রুত পা চালাল এবং ধীরে ধীরে তার ডোরাকাটা শাড়িটা অন্ধকারে হারিয়ে গেল। আশফাক সে দৃশ্যটি সেইন্ট অ্যান্ড সিনারে বসে আনমনে দেখতে থাকে। আশফাক তখন ভাবছে অন্য কথা। সত্যি এই পৃথিবীতে কে সেইন্ট আর কেইবা সিনার? এর মানদণ্ড নির্ধারণ করবে কে? ভালোবাসা কি পাপ? ক্লাবে ততক্ষণে লোকে লোকারণ্য। আলো অন্ধকার মেশানো সন্ধ্যায় হঠাৎ সেইন্টস অ্যান্ড সিনারস পানশালা থেকে একটা গান ভেসে এল..
‘You broke my heart
cause I could not dance
You didn’t even want me around
And now I am back to let you know
I can really shake ‘em down.
আশফাকের চোখের তারায় তখন নতুন আলোর নাচন।