আমেরিকাকে ব্যবস্থা নিতেই হবে

ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ও সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি
ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ও সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি

ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ও সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি দুই সপ্তাহের বেশি নিখোঁজ। তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে নিজের কাগজপত্র ঠিক করার জন্য ঢুকেছিলেন, কিন্তু আর বের হননি। এই সময়কালে এটা মোটামুটি পরিষ্কার যে, জামাল খাসোগি আর বেঁচে নেই। সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাঁকে হত্যা করেছে। তিনি রাষ্ট্রীয় হত্যার বলি হয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ আর থাকছে না।
সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তুরস্কের পত্রপত্রিকায় নানা ধরনের খবর বেরোচ্ছে। আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের গণমাধ্যম এই ঘটনার দিকে নজর রাখছে। আর তাদের অনুসন্ধান থেকে যা বেরিয়ে আসছে, তা এক কথায় লোমহর্ষক। একটু দেখা যাক কে কী লিখেছে। মিডল ইস্ট আই লিখেছে, খাসোগিকে হত্যা করতে মাত্র সাত মিনিট সময় লেগেছে। পরে একজন সৌদি ফরেনসিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে খাসোগির মৃতদেহ টুকরো টুকরো করা হয়। এ সময় তিনি তাঁর সহকর্মীদের গান শুনতে বলেন। তুরস্কের দৈনিক ‘ইয়েনি সাফাক’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যার আগে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছিল খাসোগিকে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর আঙুল কেটে ফেলা হয়। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ লিখেছে, খাসোগিকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়।
এখনো নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে খাসোগি হত্যার রহস্য ভেদ হয়নি। এর জন্য হয়তো আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মদদে যে নৃশংসতা সারা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করল, তা নজিরবিহীন। এখন দেখার, বিশ্ব নেতৃত্ব কে কী করে। এ বিষয়ে সবাই আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘটনায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুর ততই ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা অসহায় সুরে ইতিমধ্যে বলে ফেলেছেন, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমাদের ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির কী হবে? সুযোগ বুঝে সৌদি যুবরাজ সালমান, যার দিকে সন্দেহের তীর তোপ দাগছেন। তিনি ট্রাম্পের ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকিকে থোড়াই কেয়ার করে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বুঝে গেছেন, স্বার্থের কাছে সবই বন্দী। ন্যায় বিচার সেখানে অসহায়। তাহলে মানবাধিকারসহ বিভিন্ন অধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে আমেরিকা ও পশ্চিমা বন্ধুরা যে ব্যবস্থা নেয়, তা হয় লোক দেখানো না হয় স্বার্থের নিগড়ে বাধা।
সাংবাদিক খাসোগির ব্যাপারে আমেরিকা কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে, তা হবে চরম লজ্জার।