জেবিবিএর দ্বন্দ্ব

বিতর্ক ভালো, বিবাদ নয়। এই তত্ত্ব সর্বজনবিদিত। কারণ কিছুই নয়, বিবাদের অবশ্যম্ভাবী ফল বিচ্ছিন্নতা; খর্বশক্তি। আর বিতর্ক কোনো কিছুর সমাধানের প্রয়াসেই করা হয়।
ব্যক্তি কিংবা সমষ্টি, যে জীবনের কথাই বলা হোক না কেন, বিতর্ককে স্বাগত জানানোর অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে বিতর্কের মাধ্যমে কোনো একটি কাজের বা কাজের উদ্দেশ্যের সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলো উঠে আসে, যা কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক। অন্যদিকে বিবাদ কাজটিকেই সংকটে ফেলে দেয়। সামষ্টিক ক্ষেত্রে বিবাদের ফল হয় সুদূরপ্রসারী। সংগঠন বা যৌথায়ন ভাবনাকেই অনেক সময় এই বিবাদের কাছে হার মেনে গুটিয়ে যেতে হয়। এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে ভূরি ভূরি।
বিবাদ ও বিতর্কের প্রসঙ্গটি সামনে এল আমেরিকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিবিএ) নেতৃত্ব পর্যায়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে। সম্প্রতি এ সংগঠনের কমিটি পাল্টা-কমিটি গঠন নিয়ে দুটি পক্ষ বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এক পক্ষ যখন কমিটি গঠন করে সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সভার ডাক দিয়েছে, অন্য পক্ষ তখন জানাচ্ছে, তারাই নির্বাচিত কমিটি; সুতরাং অন্য কারও সাধারণ সভা আহ্বানের এখতিয়ার নেই। এমনকি এই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে দুই পক্ষ থেকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি তথা দক্ষিণ এশীয়দের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক নগর। এখানকার সংগঠন জেবিবিএকে ধরা হয় আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ‘আমব্রেলা’ সংগঠন হিসেবে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের একযোগে এগিয়ে যাওয়ায় এ সংগঠন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করবে—এটাই প্রত্যাশা। একেক মানুষের প্রবাস বেছে নেওয়া এবং সেই বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে তৈরি করার পেছনের গল্পটা হয়তো একেক রকম। এই ভিন্ন ভিন্ন গল্পগুলোর মালা গেঁথেই প্রবাসে একটি একক বাংলাদেশ তৈরি হয়, যা আর সবার কাছে একক সত্তা হিসেবেই বিবেচিত হয়। এই সত্তায় চিড় ধরলে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবাই। পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা।
‘শত ভাগ মোর শত দিকে ধায়,/ আপনা-আপনি বিবাদ বাধায়,/ কারে সামালিব এ কী হলো দায়/ একা যে অনেকগুলি হে।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিবাদে পর্যুদস্ত যে সত্তার কথা বলেছেন, তা প্রবাসে থাকা মানুষের জন্য খুবই সত্য। একা একটি সত্তা বিবাদের তোড়ে শতভাগে দীর্ণ হওয়াটা অস্তিত্বের জন্যই বড় সংকট হয়ে দাঁড়ায়। জেবিবিএর নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ যে বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে, তা আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্যই বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সংগঠনে বহুমত থাকবে, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থাও তৈরি হতে পারে। নেতৃত্ব থেকে শুরু করে এমন যেকোনো সাংগঠনিক সমস্যার মীমাংসা অভ্যন্তরীণ বিতর্কের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হতে পারে; এটা স্বাস্থ্যকরও। এ ক্ষেত্রে বিবাদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।