জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলেই একজন জাদুকর, যিনি আমেরিকার বিপুলসংখ্যক মানুষকে তাদের অতীত ভুলিয়ে ভবিষ্যতের সুখস্বপ্ন দেখাচ্ছেন। শুধু দেখাচ্ছেন বললে ভুল হবে, বিভোর রেখেছেন। না হলে সর্বশেষ মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফল আরও অন্য রকম হতে পারত। সিনেটে রিপাবলিকানদের গরিষ্ঠতা পাওয়ার কথাও নয়। ফলে ট্রাম্প–জাদু এখনো বেশ কার্যকর, এ কথা বলতেই হয়। আরও দুই বছর পরে তাঁর জনপ্রিয়তার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হবে কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু তিনি যে আমেরিকানদের একাংশের নাড়ির স্পন্দন ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন, তা মানতেই হবে।
বৈধ অভিবাসী না হলে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না, এই ঘোষণা দিয়ে ভোটের বাজারে নতুন বিতর্ক ছেড়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অথচ দেড় শ বছর আগে, ১৮৬৮ সালে আমেরিকার আইনপ্রণেতারা ঠিক করেছিলেন, যেকোনো শিশু আমেরিকার মাটিতে জন্মগ্রহণ করলে সে এ দেশের নাগরিক বলে গণ্য হবে। এই আইন এখন বিশ্বের বহু দেশে স্বীকৃত। অথচ যাঁরা এর প্রথম প্রণেতা, তাঁরাই পিছু হটতে শুরু করেছেন। ফলে এ প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমরা এগোচ্ছি না পেছাচ্ছি?
নাগরিকত্বের ধারণা প্রথম স্থান পেয়েছিল প্রাচীন গ্রিসে। নগরকেন্দ্রিক ওই গ্রিসে দাস বা স্লেভদের সঙ্গে মান্যগণ্য ব্যক্তিদের পার্থক্য করেছিল ‘নাগরিক’ শব্দটি। এরপর নানা পরিক্রমায় গত কয়েক শ বছরে আধুনিক নাগরিকত্বের ধারণা গড়ে উঠেছে। যদিও এটাকে মূলত পশ্চিমা দুনিয়ার একটি ধারণা বলে সবাই বিশ্বাস করে। সেই পশ্চিমা জগৎ উল্টো পথে চলতে শুরু করেছে!
আমেরিকায় প্রতিবছর যে শিশু জন্ম নেয়, তার মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ অবৈধ অভিবাসীদের সন্তান, সংখ্যায় যা প্রায় ৩ লাখ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিষয়টিকে উসকে দিয়ে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ভোটে তার ফলও পেয়েছেন। তবু ভরসা যে তাঁর দলের মধ্যেই বিরুদ্ধ মত জোরালো হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকার ইতিহাস-ঐতিহ্য মনে রাখবেন, এটুকু অন্তত আশা করা যায়।