ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি

শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় মিলত আট মণ চাল; এ ধরনের কথা চারপাশে অনেককেই বলতে শোনা যায়। সঙ্গে একটা দীর্ঘশ্বাস। সময়ের সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে। এটি উচ্চবিত্তদের জন্য তেমন চিন্তার কারণ না হলেও সমীকরণ উল্টেপাল্টে দেয় সাধারণ মানুষের। সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে পড়েন নিম্নবিত্তরা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে রীতিমতো জেরবার হতে হয় তাঁদের। ফলে প্রয়োজন হয়ে পড়ে নতুন বেতনকাঠামোর।
বিনিয়োগের বিপরীতে উচ্চ মুনাফার দিকে ব্যবসায়ীমাত্রেরই চোখ থাকে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন উপকরণ বাবদ ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্য থাকে তাঁদের। কর্মীর শ্রমটুকুও এই উৎপাদন উপকরণের আওতায় পড়ে। ফলে যতটা সম্ভব মজুরি কম দেওয়ার একটা চেষ্টা থাকে। অন্যদিকে শ্রমিকের লক্ষ্য থাকে আরও বেশি মজুরি আদায় করা। অবধারিতভাবেই এই দুই লক্ষ্যের অবস্থান পরস্পরের বিপরীতে। এই বিপরীত অবস্থানের মধ্যে সমঝোতা সাধনের দায়িত্বটি থাকে রাষ্ট্র তথা প্রশাসনের হাতে। প্রশাসনকে এ ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে সব পক্ষের স্বার্থের একটি সমন্বয় করতে হয়।
পুঁজিবাদী কাঠামোয় রাষ্ট্র তথা প্রশাসনের ওপর অবধারিতভাবেই বড় প্রভাব থাকে পুঁজিপতিদের। এই প্রভাব কাটিয়ে নিম্নবিত্তদের মৌলিক চাহিদা অর্জনে সহায়তা করার নৈতিক দায়িত্বটি পালনে অনেক সময়ই প্রশাসন ব্যর্থ হয়। কিন্তু নিউইয়র্ক প্রশাসন ঠিক এই কাজটি সফলভাবে করতে পেরেছে। ১১ জনের বেশি কর্মী রয়েছেন এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি ১৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫ ডলার করেছে অঙ্গরাজ্যটির কর্তৃপক্ষ। নতুন বছরের শুরু থেকেই এটি চালু হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ। শুরুতে অবশ্য সব প্রতিষ্ঠানে এ হার কার্যকর হচ্ছে না। নতুন এ কাঠামোর সঙ্গে বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে খাপ খাওয়ানোর জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে।
শুরুতে ডানকিন ডোনাটের মতো জনপ্রিয় ফুড চেইনগুলোসহ কয়েকটি খাতে মজুরির এ হার কার্যকর হচ্ছে। এ ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন আয়ের সব মানুষ উচ্ছ্বসিত। এই উচ্ছ্বাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটু বেশিই যেন। কারণ কে না জানে যে ‘ডানকিন রানস অন বাংলাদেশিজ’। নিউইয়র্কে ডানকিনসহ জনপ্রিয় ফুড চেইনগুলোয় অভিবাসীরাই সবচেয়ে বেশি কাজ করেন। ফলে নতুন এই মজুরির হার অভিবাসীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। অনেক অভিবাসী হয়তো এখন নিজের জন্য একটু উন্নত থাকার জায়গার সংস্থান করতে পারবেন। যাঁরা কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন, এখন তাঁদের পক্ষে কম সময় কাজ করে পড়াশোনায় বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হবে।
মজুরি হার বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অনেকে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। একইভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নিলে এ ক্ষেত্রে আশঙ্কার তেমন কিছু থাকবে না। প্রশাসন দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টির মোকাবিলা করবে—এটাই প্রত্যাশা। একই সঙ্গে সব খাতের শ্রমজীবীরা যাতে বর্ধিত এ মজুরি দ্রুততম সময়ে পান, তার ব্যবস্থাও প্রশাসন নেবে বলে আশা করছেন সবাই। তা না হলে, নিত্যপণ্যের মূল্য যত অল্পই বৃদ্ধি পাক না কেন, তাতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভুক্তভোগী হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে, যা এই মজুরি বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য অর্জনকেই ব্যাহত করবে।