১৪ মাইল হেঁটে গ্রামে ফেরা

[১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেই আমাদের মানসপটে নানা রকম ছবি ফুটে ওঠে। সব ছবি যুদ্ধের নয়। মুক্তিযুদ্ধ বললেই মনের কোঠায় ভিড় করে যুদ্ধকে ঘিরে নানা রকম চিত্রকল্প। গ্রামের সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এদিক-ওদিক ছুটে চলেছে, তাদের কারও মাথায় বোঁচকা, কারও কোলে নবজাতক, কেউ নিয়ে চলেছে প্রিয় গবাদিপশুকে, কেউ কেউ দিশেহারা হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে ছুটছেন—এমন অনেক ছবি আমরা কল্পনার চোখে দেখতে পাই। আশরাফ আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘ ১৪ মাইল পায়ে হেঁটে তাঁর গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। এ কি চাট্টিখানি কথা! শুধু যুদ্ধের সময়ই এমন ঘটনা সম্ভব।
লেখক, অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ সেই স্মৃতিটি বলছেন এই মুক্তিযুদ্ধের গল্পমালায়। আশরাফ আহমেদ বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকেন। চলুন শুনি তাঁর কথা]

গল্প-৮
মুক্তিযুদ্ধের সময়, মে বা জুন মাসে গ্রাম থেকে আমাকে একদিন ১৪ মাইল হেঁটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক রাতের জন্য আসতে হয়েছিল। দেখলাম, চায়ের দাগ লেগে থাকা খালি কাপটি তেমনি পড়ে আছে আম্মার পালঙ্কের পাশে। মাস দেড়েক আগে আরেকবার খালি বাড়িতে এসে বিছানায় অপরিচিত এক ভদ্রমহিলাকে দেখে অবাক হয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম, তিনি সংসদ সদস্য সাজেদা চৌধুরী। এক রাত্রি এ বাড়িতে কাটিয়েছিলেন ভারত যাওয়ার পথে; সকালে আমি চা বানিয়ে দিয়েছিলাম তাঁকে। আজ কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই, বড় একা লাগল।
পরদিন সকালে পাকিস্তানি সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার গ্রামে ফিরে চললাম। কোমরে লুঙ্গি, গালে দাড়ি, হাতে স্যান্ডেল, মাথায় কিস্তি টুপি ও ছাতা নিয়ে হেঁটে চলেছি তিতাস নদীর পাড়ে উঁচুনিচু পথ বেয়ে। সীমানা পেরিয়ে গেলেই একটি কোলাহল কানে এল, যা শহরের ভেতরে থাকতে কখনো শুনতে পাইনি। দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একসময় তা মিলিয়েও গেল। পাকসেনার বদলে তখন একাকিত্বের ভয় এসে ভর করে। এটি বুঝেই যেন সূর্য আমাকে পাহারা দিতে এগিয়ে আসে চারদিকে প্রখর দৃষ্টি রেখে। বাংলা তার অপরূপ সৌন্দর্য আমার সামনে মেলে ধরে। আর আসে বাতাস; শো শো শব্দে সে আমার কানে অনবরত বাজিয়ে যায় সাহসের বাণী। আর এইভাবে বেড়ে চলে শুধু ভালোবাসার ঋণ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারটি দূরে সরে গেলে একাকিত্ব আমাকে পেয়ে বসে প্রকটভাবে। দেখতে দেখতে মেড্ডার শ্মশান ঘাট এসে যায়। আগে অনেকবার দেখা এই ঘাটটিকে আপন মনে হয় খুব। কেউ কোথাও নেই। হয়তো মৃতেরা এখানে আসতেও ভয় পায় আজ। আমি আবার ফিরে আসি পানির ধারে। তিতাস গ্যাসফিল্ডের আকাশচুম্বী নল দিয়ে বেরোনো আগুনের শিখা দেখি মনোযোগ দিয়ে। মাতৃগর্ভরূপী পৃথিবীর নিরাপদ জঠরে আর থাকতে চায় না গ্যাস। বাঙালির মতো সেও যেন স্বাধীনতা চায়। তার বিদ্রোহ আজ আগুনের রূপ নিয়ে আকাশের কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে!
সঙ্গীর আশায় আমি গুণ (দড়ি) টানা মাঝির সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার চেষ্টা করি। মাঝি বার কয়েক আমার দিকে তাকাতে তাকাতে আপন মনে সামনে এগিয়ে যায়। আমি পিছিয়ে যাই। কখনো একটি নেড়ি কুকুর আমার পেছনে পেছনে চলে, কিসের আশায় কে জানে? সে কি বুঝতে পারে আমার একাকিত্ব? আমার মনের কথা? এভাবে কিছুক্ষণ। আমার কাছ থেকে কোনো আশ্বাসবাণী না পেয়ে সে আবার ফিরে যায় নিজ পথে। সূর্যের আলো প্রকট হয়। ছাতা খুলে মাথায় ধরি। নদী বুকের নির্মল বায়ু ঘাম শুকিয়ে দিয়ে যায়।
সময়টি বৈশাখের শেষ বা জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি। বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ। কিন্তু এখনো ক্ষেতে ছিটিয়ে রয়েছে অযুত-নিযুত শস্যকণা, যেগুলো কুড়িয়ে নেওয়ার সময় নেই কৃষকের। আর তাই শুরু হয়েছে ছোট ছোট শালিক জাতীয় পাখিদের নবান্ন উৎসব। কিচিরমিচির আনন্দে নেচে নেচে ধান খেয়ে খেয়ে একঝাঁক পাখি উড়াল দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে আরেক ঝাঁক পাখি এসে নামে ক্ষেতে। এই খেলা চলে অবিরত। উড়ে যাওয়া দলটিকে অনুসরণ করে আমার দৃষ্টি যায় আকাশে, মাথার অনেক ওপরে। সেখানে আছে লক্ষ পাখির সমাবেশ। কিসের আনন্দে একদিক থেকে আরেক দিকে উড়ে চলেছে তারা একই ছন্দে। তালটি ঠিক রেখে হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে ছুটছে অন্যদিকে। এত পাখি একসঙ্গে একই লয়ে বাতাসে নাচার কৌশলটি রপ্ত করেছে কোন নটবরের পরিচালনায়?
এই আমার দেশ; এই আমার জন্মভূমি! জীবনে অনেকবার দেখা এসব দৃশ্য কি এভাবে একান্ত আপন করে উপভোগ করেছি কখনো? না উপলব্ধি করার সুযোগ হয়েছে? কিন্তু এত সুন্দর আমার জন্মভূমি আজ লন্ডভন্ড। ধর্মের অজুহাতে পাকিস্তানিরা শুধু শোষণই নয়, শাসনের নামে মত্ত হয়েছে অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞে!
দেখতে দেখতে মজলিশপুর এসে যায়। এই গ্রামের দক্ষিণে কিছুটা উঁচুতে মৈন্দ নামের গ্রাম। সেখানে মামাদের অনেক জমিজমা আছে। দূর থেকে কাউকে মজলিশপুর নদীর ঘাটে বসে থাকতে দেখলাম। চোখে সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কাছে আসতেই বলল, আশরাফ না? আমিও চিনতে পারলাম, মজিদ (আসল নাম নয়); স্কুলে একসঙ্গে পড়েছি। পাঁচ বছর আগে ক্লাস টেনের পর আজ প্রথম দেখা। মজিদ তার গরুকে নদীর পাড়ে ঘাস খাওয়াচ্ছিল। সামাজিক দূরত্বের কারণে কখনো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু একা চলার ক্লান্তিতে আজ মনে হলো সে আমার কত যুগ যুগান্তরের বন্ধু! ধপাস করে পাশে বসে পড়লাম। বলল, নদীপথে না-পাকিস্তানি বাহিনী অভ্যস্ত নয় বলেই হয়তো ওদের গ্রামটি এখনো অক্ষত আছে। সড়ক পথে এসে তাদের আরও উজানে শাহবাজপুর গ্রামের বাজারটি হানাদাররা বেশ আগেই পুড়িয়ে দিয়েছে।
কুশল বিনিময়ের পর ওর বাড়িতে দুটো খেয়ে যেতে বলল। এর মাঝে খিদে পেয়েছিল বেশ। কাল থেকে আমার খাওয়া হচ্ছে খুবই অল্প অল্প। এখন রুমালে বাঁধা তিন চারটা আলুই সারা দিনের ভরসা। কখন গুণ্যক পৌঁছে ভালো কিছু খেতে পারব, তার ঠিক নেই। ভদ্রতার মাথা খেয়ে আমি তাই সঙ্গে সঙ্গে সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম। তার বাড়ির অন্দরমহলটি পাটখড়ির বেড়া দিয়ে আড়াল করা। ফিরে আসতে ওর অনেক দেরি হচ্ছে দেখে ভাবছিলাম ভদ্রতা করে দেওয়া ওর নিমন্ত্রণটি অভদ্রভাবে গ্রহণ করে আমি বিপদে ফেললাম কিনা! আমার অনুমান আংশিক ঠিক। একটি বালিশ আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘রান্না বসানো হয়েছে; দুদিন থেকে অনেক পথ হেঁটে তুমি পরিশ্রান্ত। রান্না শেষ হওয়ার ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে নাও।’ নদীপাড় থেকে প্রায় পোয়া মাইল দূরে পাটখড়ির একটি ছোট ঘরে বসতে বলে খাবার আনতে চলে গেল সে। আসবাব বলতে ঘরের একপাশে মাটিতে প্রোথিত বাঁশের চৌকি। খানিকক্ষণ পর চারকোনা একটি জিনিস আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘রান্না হতে হতে তুমি শুয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নাও।’ বলে সে আবার উধাও হয়ে গেল।
মার্চের মাঝামাঝি কর্নেল রেজার নির্দেশে ভেঙে দেওয়া ব্রিজটি দেখা যাচ্ছে। পুরোপুরি ভাঙেনি। দুই স্তম্ভের মাঝের একটি স্ল্যাব তেছরা হয়ে পানিতে পড়ে আছে অন্য একটি স্তম্ভের গায়ে হেলান দিয়ে। নদীতীরের লোকজন জানাল, সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটি আছে। তারা তল্লাশি চালাচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলেই ধরে নিয়ে যায় বা মেরে ফেলে। আমি তাই নদী থেকে অনেক পূর্বে দিয়ে দক্ষিণমুখো হাঁটতে থাকি। ব্রিজ থেকে অনেক দূরে গিয়ে চারদিকে তাকিয়ে শাহবাজপুর-মাধবপুর রাস্তাটি পার হয়ে আবার নদীতীরে ফিরে আসি।
এখান থেকে গুণ্যকের রাস্তা আমার জানা নেই। লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘উদুরে, ওই বাকাইলটা পার হইলেই একটা বটগাছ আছে। সেখান থেকে বাঁয়ে গেলেই গুণ্যক।’ এই এলাকায় ‘উদুরে’ কথার অর্থ হচ্ছে ‘ওই যে’, মানে খুবই কাছে। কিন্তু ‘উদুরে’ আমার কাছে সুদূর হয়ে থাকে। বটগাছের দেখা আমি পাই না। গুণটানা আরেক মাঝিকে জিজ্ঞেস করি। সেও হাত উঁচু করে বলে ‘উদুরে’। একসময় উদুরের সেই বটগাছ আমার দৃষ্টিগোচর হয়।
নদীটি হঠাৎ করেই যেন বাঁয়ে, মানে পশ্চিমে যাওয়া শুরু করেছে। সেই বাঁক ঘেঁষে পরপর দুটো গ্রামের নাম শশই ও বুধন্তী। পশ্চিমে কিছুটা গিয়ে সোজা উত্তরে গেলেই গুণ্যক পৌঁছা যায়। কিন্তু যেহেতু আমি এক পথিকের কাছ থেকে জেনেছিলাম যে গোকর্ণ পার হয়ে গুণ্যক যেতে হয়, তাই গুণ্যকের বদলে আমি গোকর্ণের দিকে হাঁটতে থাকি।
অনেক দূরে গাছগাছালি দেখে উঁচু ঢিবির ওপর এক বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হই। কয়েকটি শণের ঘর, একপাশে গোয়ালঘরে একটি গরু বাঁধা। দুই রমণী লেপা উঠোনে ধান শুকাচ্ছিল। দূর থেকে আমাকে দেখেই ঘোমটা টেনে আড়াল হয়ে গেল। ‘কেউ আছেন বাড়িতে?’, কয়েকবার হাঁক দিলে বারো-তেরো বছরের এক কিশোরী বেরিয়ে এল। লম্বা গামছা জাতীয় কাপড় দিয়ে শরীরটি শাড়ির মতো করে প্যাঁচানো। অবাক চোখে তাকিয়ে আমাকে দেখে ভেতরে চলে গেল। বুঝলাম সে বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে কথা বলছে। ফিরে এসে বলল, ‘বাড়ির পরুষেরা ক্ষেত থেকে ফিরে আসেনি।’ বললাম, ‘এক গ্লাস পানি পেলে এখানে কোথাও বসে খাবারটি খেয়েই চলে যাব।’ মেয়েটি বড় একটি গ্লাসভর্তি পানি আনল। গোয়াল ঘরের সামনে গাছের একটি কাটা গুঁড়িতে বসে খেতে বলে সে ভেতরে চলে গেল। আমি সঙ্গে আনা খবরের কাগজটি গাছের গুঁড়িতে বিছিয়ে তার ওপর বসলাম। মাছি তাড়াতে তাড়াতে শেষ সম্বল আলু কয়েকটি ও পানি খেয়ে আবার পথে নামলাম। মনকে শক্ত করে শাসন
করি, আজই পথে এই আমার শেষ খাওয়া। আর খিদে পেলে চলবে না।
প্রশ্নের উত্তরে ‘উদুরে’ শুনতে শুনতে একসময় গোকর্ণ গ্রামের পাশে এসে পড়লাম। সূর্য ডুবে গেছে কখন; সাঁঝের আবছা আলোয় হাঁটছি। খোলা মাঠের মতো স্থানটি মোটামুটি উঁচু। বাঁ পাশে রাখা গ্রামটির দিকে তাকাই। গোকর্ণ আমার দাদার বাড়ি। তাঁর কোনো এক পূর্বপুরুষ কুমিল্লার আন্ধিকোট থেকে পাখি শিকার করতে করতে এখানে এসে স্থায়ী হয়েছিলেন। গ্রামের লোকেরা তাঁর ‘সৈয়দ’ বংশ জানতে পেরে এখানকার কাজি বানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বাড়িটির নাম হয় কাজি বাড়ি। সংসার বড় হলে এক বংশধর অন্যত্র সরে গেলে নতুনটি সৈয়দ বাড়ি নামে পরিচিত হয়। ওই বাড়িতে আমি কখনো যাইনি; আমার ভাইবোনদের কেউই যায়নি। আব্বা কদাচিৎ গেছেন হয়তো। তারপরও পূর্বপুরুষের অদেখা সেই বাড়ির প্রতি এক আকর্ষণ বোধ করি।
আমার বাঁয়ে সেই গোকর্ণ গ্রামের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই। পায়ে জখম হয়েছে। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে অন্ধকারে বিজাতীয় কিছু দেখে ভয় পাই। এবারের ভয় অশরীরী কিছুর। এই গ্রামে কখনো না থাকলেও সংসারের প্রয়োজনে সেজ চাচা ও ছোট চাচা এসেছেন দাদার ভাগের উৎপাদিত শস্যের হিস্যা নিয়ে যেতে। ছোট চাচির মুখে শুনেছি দুর্গম সেই পথে চলার সময় মানুষের রূপ ধরে খারাপ খারাপ জিন এসে হাজির হতো; বিপথে নিয়ে পথিককে মাঠে-ময়দানে মেরে ফেলে রেখে যেত। শুনেছি, দেখতে মানুষের মতো হলেও জ্বিনদের পায়ের পাতা থাকে পেছনের দিকে তাক করে। আর চন্দ্রালোকে মাটিতে ওদের দেহের ছায়া পড়ে না। ছোট চাচা তেমন জ্বিনের দেখা পেয়েছেন অনেকবার। কিন্তু আমাদের দাদির বাবা জ্বিন চালানো পির ছিলেন বলে সেই সব জিন আমাদের পরিবারের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে না।
হারিকেনের আবছা আলোয় সন্ধ্যায় গোল হয়ে বসে ছোট চাচির এসব ভীতিপূর্ণ বর্ণনার চিত্র এই রাতে হঠাৎই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। কিন্তু আধুনিক জিন কি আব্বার নানার প্রাচীনকালের কেরামতির খবর রাখে বা তোয়াক্কা করবে? একটু জোরে বাতাস লাগলেই ভয়ে চারদিকে তাকাই। গাঢ় অন্ধকারে কাউকেই দেখতে পাই না। ছড়ে যাওয়া পা দুটোকে রক্ষা করতে বগলে রাখা স্যান্ডেল জোড়া মাটিতে রাখি। কিন্তু পা স্যান্ডেলে ঢোকে না। পা আমার ফুলে গেছে। শরীরে শক্তি নেই এতটুকু। পা দুটো কোমরের ওপরের অংশের ভর আর সইতে পারছে না আর। আমি কি গুণ্যক পর্যন্ত যেতে পারব? নাকি অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পড়ে থাকব? উঠে দাঁড়াতে না পারলে আমার কী হবে? প্রথমে এসে জড়ো হবে পোকামাকড়, পিঁপড়ার দর। এদের কামড়ে দুর্বল হয়ে পড়লে আসবে ইঁদুর, ভোদড়, শেয়ালেরা। সকালে কোনো পথচারী হয়তো দেখতে পাবে গলা তুলে এদিক-সেদিক তাকানো কয়েকটি শকুণি। অনেক পরে সেই কাহিনি শুনে কেউ মন্তব্য করবে খুব খারাপ একটি জিনের পাল্লায় পড়েছিল এই লোক। জিনটি ছিল পাকিস্তানি।
নাহ আমার মনের জোর বাড়াতে হবে। এভাবে পরাজিত হলে চলবে না। আমার শত্রু, পাকিস্তানিরা অনেক বেশি শক্তিশালী। একদিন কতক্ষণ না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করব কীভাবে? আবার উঠে দাঁড়াই। দূরে, অনেক দূরে, মিটমিট আলো দেখা যাচ্ছে, জোনাকির মতো আলো। আমি এগিয়ে যাই।