আমাদের সমাজে নারীরা

আমাদের সমাজে নারীদের সুযোগ-সুবিধা, ন্যায্য অধিকার বা নিরাপত্তা নিয়ে কোনো পুরুষ কথা বললেই দেখি মুহূর্তের মধ্যে সমাজ তাকে নারীবাদী উপাধিতে ভূষিত করে। কেউ কেউ আবার এটাও বলেন যে নারীরা সম অধিকারের আন্দোলন করবেন কেন? তাঁরা তো বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। চলুন, দেখা যাক নারীরা আজ আমাদের সমাজে কেমন আছেন:
• সব পুরুষেরাই বিয়ে করার সময় সতী নারী খোঁজেন। অথচ, সেই নারীরা কখনোই তাঁদের সতীত্বের দাম পান না।
• পুরুষেরা নারীর সতীত্ব খোঁজেন নারীর শরীরে, মনে নয়। তা না হলে সমাজে ধর্ষণের শিকার নারীরা আজও অস্পৃশ্য থাকত না।
• নারীকে সব পরিশ্রমের মধ্যে রান্না-বান্না করে নিজে খেতে হয় সবাইকে খাওয়ানোর পরে। খাবার কিছু থাকল কি না কেউই দেখেন না।
• নারীদের সব সময়ই একটা বাঁধা-নিষেধ মেনে চলে থাকতে হয় । ভ্রু-প্লাক করতে বাঁধা, ঘর থেকে একা বের হতে বাঁধা, ফেসবুকে কোনো কিছুতে লাইক দিতে বাঁধা বা এমনকি ছবি আপলোড করতে বাঁধা।
• নারীদের যেকোনো কিছু করতেই পুরুষদের অনুমতি নিতে হয়। মনে হয় নারীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা পূরণের বস হচ্ছেন পুরুষেরা।
• নারীদের সবকিছুতেই অযোগ্য হিসেবে দায়ী করা হয়। তা না হলে এমনকি বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটকে দোষারোপ না করে নারীকে দোষারোপ করা হতো না।
• মা-বাবা তুলে কথা, যৌতুক ও নির্যাতনের বলি আজও শত–সহস্র নারীরা।
• বাচ্চা না হলে নারীদের দোষ দেওয়া, মেয়ে বাচ্চা হলে আজও নারীদের ছোট করে দেখা হয়।
• নারীরা তাঁদের স্বামীকে ভালোবাসলে তাঁদের ‘পতিব্রতা স্ত্রী’ বলে সম্মানিত করা হয় আর পুরুষেরা তাঁদের স্ত্রীকে ভালোবাসলে ‘বউ পাগলা’ বলে ব্যঙ্গ করা হয়।
• আমাদের সমাজে তাই পুরুষদের জন্য ‘জামাই-আদর’ আছে। কিন্তু নারীদের জন্য কোনো বউ আদর নেই।

এ রকম লেখতে গেলে মনে হয় এই তালিকা শেষ করা যাবে না। কিন্তু, নারীরা কীভাবে পারবেন তাঁদের অধিকার আদায় করতে? কীভাবে পারবেন এসব দায় থেকে মুক্তি পেতে? তাঁরা যে যুগ যুগ ধরে পুরুষ শাসিত সমাজের কাছে খুবই অসহায়! কারণ
• স্ত্রীরা গৃহিণী হলে স্বামীরা বলেন সেকেলে আর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললে স্বামীরা বলেন আধুনিকতার ছোঁয়ায় নষ্ট।
• স্ত্রীরা শিক্ষিত হলে স্বামীরা থাকেন হীনমন্যতায় আর অশিক্ষিত হলে স্বামীরা রাখেন অবহেলায়।
• স্ত্রীর বাপের বাড়ি গরিব থাকলে স্বামীরা দেখেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের চোখে আর ধনী থাকলে স্বামীরা রাখেন কোণঠাসায়।
• স্ত্রীরা সুন্দরী হলে স্বামীরা দেখেন সন্দেহের চোখে আর কুৎসিত হলে স্বামীরা মাতেন পরকীয়ায়।

তবে, নারীদের নিয়ে আমাদের সবার চিন্তা-ধারণা কেমন হওয়া উচিত তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আমাদের সব মহান ব্যক্তিদের ধ্যানধারণায়। যেমন:
• যে স্বামী সকালে ঘুম থেকে উঠে স্ত্রীকে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট জড়িয়ে ধরে রাখে তাঁর কর্মক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা থাকে কম। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
• বউয়েরা ঘরের লক্ষ্মী হয়। এঁদেরকে যত বেশি ভালোবাসা দেওয়া হয়, তত বেশি সংসারে শান্তি আসে। - হুমায়ুন আহমেদ
• স্ত্রীকে যথেষ্ট পরিমাণে সময় দিন, না হলে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্বাস করুন। সংসার আর যুদ্ধক্ষেত্র মনে হবে না। - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
• সেই পুরুষই কাপুরুষ যে স্ত্রীর কাছে প্রেমিক হতে পারেনি।- কাজী নজরুল ইসলাম
• প্রতিদিন একবার স্ত্রীকে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বললে মাথার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়।- সত্যজিৎ রায়
• স্ত্রীকে সপ্তাহে একদিন ফুচকা খাওয়াতে এবং মাসে একদিন ঘুরতে নিয়ে গেলে স্বামীর শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।- সমরেশ মজুমদার
• অন্য নারীর সঙ্গে পরকীয়া করার চেয়ে স্ত্রীকে একবেলা পেটানো ভালো। তবে পেটানোর পরে তিনগুণ বেশি ভালোবাসা আবশ্যক।- জহির রায়হান
• মন ভালো রাখতে বউকে ফেসবুক, ফোনবুক, নোটবুকসহ সব ধরনের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দিয়ে দিন।- মার্ক জাকারবার্গ
• মেয়েদের মনে ভালোবাসা ও অভিমান দুটোই থাকে বেশি। তাই অভিমানটাকে ভালোবাসার চেয়ে বড় করে দেখা যাবে না। তাই স্বামীদের উচিত স্ত্রীর সব অভিমান ভালোবেসে ভাঙানো!- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
• একটা শিশুকে দুনিয়ার মুখ দেখাতে মা যে কষ্ট সহ্য করে তা বাবা সারা জীবন ভালোবেসেও শোধ করতে পারে না। তাই প্রত্যেকটা স্বামীর উচিত তাঁর সন্তানের মাকে কোনোরকম কষ্ট না দেওয়া।-জীবনানন্দ দাশ
• যুদ্ধে বিজয়ী হলেই বিপ্লবী হওয়া যায় না৷ প্রকৃত বিপ্লবী তো সেই যে স্ত্রীর মনের একমাত্র বীরপুরুষ।- চে গুয়েভারা
• স্ত্রীর সঙ্গে হাসি ঠাট্টা মজা করা স্বামীর কর্তব্য।-হজরত মোহাম্মদ (সঃ)

এত কিছু জানার পরও যাঁরা নারীদের যথেষ্ট সম্মান দিতে নারাজ, তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই:
• আমাদের সমাজের বিচারে এত অযোগ্য নারীরাও কিন্তু ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে, খেয়ে না খেয়ে ১৮-২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন তাঁদের দুটি নরম কোমল হাতে।
• সেই নারীরা এত অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও নিজের শরীর ও চেহারার যত্ন নিতে পারেন নিখুঁতভাবে এবং
• মনের সব কষ্ট, যন্ত্রণা ও একাকিত্বের প্রকাশ
করেন নীরবে নিভৃতে চোখের জলে। কারণ নারীরা শান্তিকামী। তাঁরা চান না এটা নিয়ে আন্দোলন হোক গণমাধ্যমে।