রাজনীতি নয় জননীতি মন্ত্রী নয় জনসেবক

বাংলাদেশ জনগণের দেশ। আমাদের কোনো রাজা নেই । তথাপি আমাদের দেশের সরকারি নাম প্রজাতন্ত্র। এটা একটা ভুল। প্রজাবিহীন দেশ প্রজাতান্ত্রিক এটা হতে পারে না। তাই ক্ষমতাসীনরা আমাদের প্রজা ভেবে নিজেদের রাজা ভাবেন। আর তাই পরিবারতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং পরিবারের সবাই মানুষের শোষণ বঞ্চনা ও অধিকার হরণে মেতে ওঠেন ।
রিপাবলিকের বাংলা প্রতি শব্দ প্রজাতন্ত্র হওয়া উচিত না। গণতান্ত্রিক বা জনতান্ত্রিক হওয়াই উচিত। আর বিদেশি ব্যবস্থা থেকে নিতেই হবে তাও নয়। তাই বাংলাদেশের সরকারি নাম গণতান্ত্রিক বা জনতান্ত্রিক বাংলাদেশ হওয়া একান্ত দরকার।
রাজা বিহীন দেশ বাংলাদেশ, তাই রাজনীতি শব্দ ব্যবহারেও আমার আপত্তি। রাজতন্ত্রের নীতি রাজনীতি, গণতান্ত্রিক দেশের নীতি রাজনীতি অনেকটা “ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল,” এর মতো। মনস্তাত্ত্বিক ভাবে এখানেও একজন তথাকথিত রাজনীতিবিদ নিজকে রাজা ভাবেন এবং পরিবারতন্ত্রের প্রয়োগ আশঙ্কা বাড়ে।
পলিটিকস এর বাংলা প্রতিশব্দ রাজনীতি একটি ভুল। আদি গ্রিক শব্দ পলিটিকা এর মূল অর্থ হলো শহর বিষয়ক ব্যাপার বা নীতি। ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার ফলে এটা আমাদের কাছে রাজনীতি হিসেবেই থেকে যায়। এখন রাজা নেই, নেই রাজতন্ত্র তাই আমাদের দেশের নীতি রাজনীতির পরিবর্তে গণনীতি, জননীতি, গণ নৈতিক ব্যবস্থা বা জন নৈতিক ব্যবস্থা হওয়াই বাঞ্ছনীয় ।
এবার আসি মন্ত্রী শব্দ নিয়ে। রাজাকে মন্ত্রণা দিবার তরে রাজা তার খেয়াল খুশিমতো শিরদাঁড়াহীন চ্যালাকে নিয়োগ দান করেন, তাঁদেরকেই মন্ত্রী বলা হয়ে থাকে। মন্ত্রীদের কার্যালয় বা থাকার জায়গাকে মন্ত্রণালয় বলা হতো। আমাদের বাংলাদেশে আগেই বলেছি যে কোনো রাজা নেই বা এটা রাজতন্ত্র না তাই মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় শব্দ প্রয়োগ একেবারেই ভুল। এ সব শব্দ প্রয়োগের মনস্তাত্ত্বিক কুফল হলো একজনকে মন্ত্রী শব্দে ডাকলে সেও রাজার অংশ মনে করে ও সে জনগণকে প্রজা ভাবে অবহেলা অন্যায় করে থাকে। সরকার প্রধানের সামনে থাকেন শিরদাঁড়াহীন। তার পরিবারের সদস্যদের মাঝেও তা সংক্রমণ করে।
বিলেত দেশে এখনো রাজতন্ত্র বিদ্যমান। আর তাই সেখানে জনপ্রতিনিধিদের মাঝ থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয় । বাকিরা সবাই সেক্রেটারি/ সম্পাদক নামে কাজ করেন। তাদের কর্মক্ষেত্রকে সেক্রেটারিয়েট বলা হয়, মন্ত্রণালয় না। আমেরিকাতেও তাই। তাই মন্ত্রী শব্দ বাদ দিয়ে জনসেবক বা গণ সেবক শব্দ ব্যবহার করা উচিত।