এড্গার অ্যালান পো

এড্‌গার অ্যালান পো
এড্‌গার অ্যালান পো

কবি, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক এড্‌গার অ্যালান পো’র জন্ম ১৮০৯ সালে, জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে, আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস স্টেটের বোস্টন শহরে।
তিন বছর বয়সেই, তিনি বাবা-মা উভয়কেই হারান। তখন এই বাপ মা হারা শিশুকে জন অ্যালান আশ্রয় দেন। অ্যালান সাহেব পেশায় ছিলেন একজন বিত্তবান তামাক ব্যবসায়ী। পালিত ছেলেকে তিনি ইংল্যান্ডের ডাকসাইটে এক স্কুলে পড়াতে পাঠিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের পর, ১৮২৬ সালে পো ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া) পড়তে আসেন। জুয়া খেলায় তিনি ভারী নেশাগ্রস্ত ছিলেন। জুয়ায় হেরে হেরে তিনি ভীষণভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এতে তাঁর পালিত বাবা অ্যালানের সঙ্গে বেশ জব্বর লড়াই হয়। ফলে তিনি মাত্র আট মাসের মাথায় ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পো এরপর দু’বছর মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করেন এবং ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে একটি চাকরি জোগাড় করতে সমর্থ হন। সেখানে আরও একটি বিপর্যয় ঘটালে তাঁর সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন অ্যালান বন্ধ করে দেন। ওই আইনভঙ্গের জন্য তিনি অ্যাকাডেমি থেকে বহিষ্কৃত হন।
অপেক্ষাকৃত কালো, সুদর্শন এবং ওই বয়সেই চিন্তাশীল, পো এর মধ্যেই তিনটি কবিতা প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। অবশ্য তার একটিও তেমন মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়নি। ১৮৩৬ সালে, ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড শহরে ‘সাদার্ন লিটারেরি ম্যাসেঞ্জার’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময় পো তাঁর ১৩ বছর বয়সী কাজিন, ভার্জিনিয়া ক্লেমকে বিয়ে করেন। এরপর ১৮৩৮ সালে, তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য কল্পকাহিনী, ‘আর্থার গর্ডন পিম’-এর কাজ সম্পন্ন করেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে পো তাঁর ম্যাসেঞ্জার পত্রিকার চাকরিটা হারান। তখন এই দম্পতি রিচমন্ড ভার্জিনিয়া থেকে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহরে চলে আসেন এবং ‘বার্টন’স জেন্টেলম্যান’ ও ‘গ্রাহাম’স ম্যাগাজিন’-এই দুই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এখানে তিনি তাঁর প্রত্যক্ষ ও মর্মভেদী সমালোচনার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। একই সঙ্গে, ‘দি ফল অব দি হাউস অব আশার’ ও ‘দি টেল টেল হার্ট’ ভয়-জাগানো গল্প দুটি লিখে বেশ নাম করে ফেলেন। এই সময় অ্যালান পো, ‘দি মার্ডার্স ইন দি রু মর্গ’ এবং ‘দি পারলয়েন্‌ড লেটার’ নামে দুটি রহস্যোপন্যাস লেখেন; যা তাঁকে আধুনিক গোয়েন্দা গল্পের পিতা হিসেবে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা এনে দেয়।
১৮৪৪ সালে পো দম্পতি নিউইয়র্ক শহরে বাস করার জন্য চলে আসেন। পরের বছর তাঁর কবিতা “দি র‍্যাভেন” সাহিত্য জগতে একটি অভাবনীয় সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। এই সময় পো “ব্রডওয়ে জার্নাল” নামে একটি পত্রিকা চালু করার জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করছিলেন। কিন্তু তা শিগগিরই ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৮৪৭ সালের প্রথমদিকে তাঁর স্ত্রী ভার্জিনিয়া যক্ষ্মা রোগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর, পো আরও গভীরভাবে মদ্যপান ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে নিজের ওপর নির্যাতনে ডুবে যেতে থাকেন। এ সময় বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর পো ১৮৪৯ সালে রিচমন্ডে ফিরে আসেন এবং এক পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে যুক্ত হন। দুঃখের বিষয়, বিয়ের আগে হঠাৎ পো মারা যান। যদিও কারণ কিছুটা অস্পষ্ট, তবে মনে হয় তিনি বাল্টিমোরে একটি পার্টিতে মদ্যপান করতে করতে সহসা রহস্যজনকভাবে অন্তর্ধান করেন। তিন দিন পরে তাঁকে অসংলগ্ন অবস্থায় পাওয়া যায় ও সেই অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই, ৭ অক্টোবর ১৮৪৯ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪০ বছর।