কাঙ্ক্ষিত কাঁপন

চলতে চলতে কোথাও একটু ছায়া পেলে মনে হয় একটু জিরিয়ে নিই। আর ছায়াটি যদি নিবিড় ও শীতলতায় ভরা থাকে, তা হলে তো কথা–ই নেই। স্নিগ্ধ ছায়াতলে আটকে থাকে ক্লান্ত শরীর মন। আজ যেমনটি আটকে গেল সজল। আটকে গেল এক বিদেশিনীর ছায়ায় মায়ায়। যে মায়া ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না, শুধু অনুভব করা যায় ।
সজলের আকাশে আজ রঙিন প্রজাপতি। ফিটনেস ক্লাব থেকে বেরিয়েই নীল আকাশটা আরও একবার দেখে নিল। ম্যানহাটন আজ যেন অন্যরকম এক মায়াবী শহর! সবই যেন নয়নকাড়া! মনকাড়া মায়া! মিস জুলিয়ার্ডের দেওয়া ক্ষতচিহ্ন মুছতে না মুছতে আবার এ কোন আগমনী গান ওর জীবনে।
ভেবেছিল এই গ্রীষ্মে মন দিয়ে কাজ করবে। দেশে এখন ওর অনেক টাকা দরকার। ছোট ভাই-বোনদের পড়ার পাঠ মাত্র শেষ। কষ্টের জমানো টাকা দিয়ে ঢাকার মিরপুরে একখণ্ড জায়গায় বাসার কাজটি তার শেষ করতে হবে । পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দেওয়া বাসাটির মাত্র একতলার কাজ শেষ হয়েছে, এখনো অনেক কাজ বাকি। মাকে ফোন করলেই দেশে ফেরার তাগাদা আসে। বিয়ে করে সংসারী হওয়ার কথা বলেন সব সময়। সে বাড়িটার কাজের কথা বলে মায়ের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেয় বারবার।
জুলিয়ার্ডকে নিয়েও সে একসময় কত স্বপ্নজাল বুনেছিল! এই প্রবাসে জুলিয়ার্ডই প্রথম বন্ধু ওর জীবনে। দারুণ এক খরস্রোতা নদীর মতো ওকে ভাসিয়ে নিয়েছিল গভীর সাগরে। সাঁতার পটু সজল অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জুলিয়ার্ডের সেই সাগর সাঁতরে পার হয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল। আজ সজলের চোখের সামনে দুটি মায়াবী মুখ। জুলিয়ার্ড আর শার্লিন! জুলিয়ার্ড ছিল এক দুর্দান্ত নাগিনী যেন। ভরা যৌবনের আগুনের উথালপাতাল ঢেউয়ে পুড়ে যায় পতঙ্গ। আর শার্লিন! সেও এক পূর্ণ যৌবনা নদী! তবে সারা শরীরে পূর্ণিমার আলোর মতো খুব শান্ত-সৌম্য-স্নিগ্ধ সৌরভ! অনেকটাই ধীর স্থির। চমৎকার ব্যক্তিত্ব। মায়াবী ওই মুখে বুদ্ধিদীপ্ত চোখের তারায় এক ভালোবাসার নদী দেখতে পায় সে। দারুণ মেধাবী। তাই তো আমেরিকার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে জায়গা করে নিয়েছে।
হাঁটতে হাঁটতে একেবারে ইস্ট রিভারের কাছাকাছি চলে আসে সে। প্রচণ্ড ব্যস্ততায় নদীর তীরে আসা হয় না। আজ কেন যেন নদীর কাছে যেতে মন চায় ওর। কিছুটা উদাস, কিছুটা প্রেমিক মন নিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে সে। রোদ পড়েছে নদীর জলে। চিকমিক করছে জল। একটা হিমেল হাওয়া এসে লাগল ওর চোখে মুখে। হাওয়ার ভেতরে অবিন্যস্ত চুলগুলো আঙুল দিয়ে চিরুনি করতে করতে মনের ভেতরে তাকাল সে। মনের দেখা পেল না, আজ কোথায় যেন হারিয়েছে ওর মন! শার্লিনের ভেতরে যে আলোর দ্যুতি, রঙিন প্রজাপতির মতো উড়ে চলা আর সুন্দর অপরূপ মুখশ্রী তার ভেতরে হারিয়েছে সে।
হঠাৎ ফোনের আওয়াজ! তাড়াতাড়ি মুঠোফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখে শার্লিন!
খুব খুশি হলো সে।
বলল, ‘হ্যালো শার্লিন!’
-‘ব্যস্ত?’
- ‘না, তেমন কিছু না’
-‘কোথায় তুমি ?’
-‘তোমার ওখান থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে একেবারে ইস্ট রিভারের তীরে!’
-‘এত দূর হেঁটে নদীর পাড়ে!’
-‘নদীকে ছুঁতে হলে তোমাকে তো কষ্ট করতেই হবে শার্লিন!’
-‘তুমি কী নদী খুব বেশি ভালোবাসো?’
-‘হ্যাঁ বাসি’
আবারও সেই জাদুমাখা হাসি! হাসতে হাসতে
-‘আর কী কী ভালোবাসো?’
একটু ভেবে নিয়ে সজল বলল,
-‘ভালোবাসি নদীর জলে রোদের ঝিকিমিকি খেলা। ভালোবাসি সমুদ্র সৈকতে হেঁটে চলা। নীলাকাশ ভালোবাসি। সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে অসীমের পানে ছুটে চলা ভালোবাসি। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে প্রজাপতির সঙ্গে খেলা করা ভালোবাসি, সবুজ বনাঞ্চল পলিমাটির সোঁদা গন্ধ ভালোবাসি, আর ভালোবাসি এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন...’
-‘আমাকে ভালোবাসো না?’
-‘হ্যাঁ, খুব!’
-‘আর কী কী ভালোবাসো তুমি সে সব কথা শুনি।’
-‘আমার আর কী কথা শার্লিন?’
-‘তোমার ছেলেবেলা, তোমার দেশের কথা, দেশের মাটির কথা, মা–বাবা, ভাই–বোনের কথা না জানলে তোমাকে আমি কীভাবে জানব বল? আমি যে তোমাকে জানতে চাই বন্ধু! আমার মনের মতো করে!’
সম আবেগ নিয়ে সজল বলল,
- ‘আমিও তোমাকে আমার মনের মতো করে জানতে চাই বন্ধু!’
এরপর নিশ্চুপ দুজনে দীর্ঘক্ষণ। নীরবতারও একটি ভাষা বোধ হয় আছে। আজ ওরা তা উপলব্ধি করল। নীরবতা ভেঙে সজল বলল,
-‘আমার ফোনের ব্যাটারি লো সাইন দেখাচ্ছে, যেকোনো সময় ডিসকন্টিনিউ হতে পারে।’
-‘তাহলে আমি রাখলাম। তুমি নদীকে রেখে এখন ঘরে যাও। শনিবারে আমাদের সাঁতার শেখার কথা মনে থাকে যেন!’
-‘মনে থাকবে বন্ধু! আমার থাকবে মনে!’
শার্লিনের ফোন নেই কিন্তু ওর হাসির রেশটা তখনো ওর মনে রঙিন প্রজাপতি হয়ে ইস্ট রিভারের জলে খেলা করে। এরপরও একা একা অনেকক্ষণ নদী তীরে বসে সে ভাবল ফেলে আসা জীবনের কথা। সংসারের গরিবানাটা ঘোচাবার জন্যই এ কী স্বেচ্ছা নির্বাসন!
সাঁতারের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটার কথা মনে হওয়ায় নদীর জলকে আপাতত গুডবাই জানিয়ে সে পা বাড়াল শপিং মলের দিকে। দুই জোড়া সুইমিং কাস্ট, বড় দুটি তোয়ালে, একটি লাল রঙের ট্রাভেল ব্যাগ, ডজনখানেক মোজা, কয়েকটা টি-শার্ট আরও কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা সেরে আনন্দে ঘরে ফিরল সে। আজ ওর মন দারুণ খুশি! পৃথিবীটাকে এতটা সুন্দর ওর আর কখনো মনে হয়নি। আজ মাত্র রোববার, শনিবার আসতে আরও ছয় দিন বাকি ! অস্থির সে। ভাবছে কীভাবে যাবে এই ছয় বছর!
সোমবার অফিসের কথা মনে হলো ওর। অনেক কাজ জমা হয়ে আছে, নতুন কিছু লেখাও তাকে জমা দিতে হবে। শার্লিনকে নিয়ে ওর একটা কিছু লিখতে মন চায়। কী লিখবে সে। কবিতা? নাকি প্রেমের গল্প। মনে মনে সে বলল, প্রেম! আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে বলে জঠল, কোথায় প্রেম সজল !
ঘরে ফিরে দরজায় আটকানো বড় আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে নিজে কাটল অনেকক্ষণ। আয়নার চোখে চোখ রেখে কত কথা যে বলল সে। প্রবাস জীবনের যন্ত্রণার ছাপটা ওর চোখে–মুখে খুব স্পষ্ট। হাসির উজ্জ্বলতাও আর আগের মতো নেই। উদাস মনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে পরখ করছে সে। এভাবে আয়নার সামনে কবে দাঁড়িয়েছিল ওর মনে নেই। পনডস্ ক্রিমটা হাতের কাছেই তবুও ব্যবহার হয়নি, আজ ক্রিমটা ভালো করে মুখে মাখতে মাখতে ভাবল কাপড়গুলোও কতদিন আয়রন করা হয় না। বেছে বেছে কয়েকটা শার্ট-প্যান্ট আয়রন করল। রাতে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলল। বাসার কাজের জন্য আরও রড-সিমেন্ট কিনতে হবে, আরও টাকার দরকার। দেশে ফোন করলে মুহূর্তেই অন্য এক মানুষ হয়ে যায় সজল। অনেক দায়িত্বের, কর্তব্যের মানুষ। বাসার কাজটি যত দ্রুত শেষ করা যায়, এমনি এক তাগিদ অনুভব করল সে। কাল টাকা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনটা কাটল।
ওর মন পড়ে থাকে শনিবারের দিকে। মনটা মাঝে মাঝেই গুনগুন করে গায়, কবিতা পড়ে রাত জেগে জেগে।
শুক্রবার রাত। ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ। মনে বিদেশিনী। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে ফোনটা হাতে নিল সে। যা ভেবেছে তাই। বলল,
-‘হ্যালো শার্লিন!’
-‘কী করছিলে?’
-‘শুয়ে শুয়ে তোমার কথা ভাবছিলাম।’
-‘সত্যি!’
-‘তোমার কী মনে হয় মিথ্যে!’
-‘নিশ্চুপ।’
-‘তুমি কী করছ শার্লিন?’
-‘সোমবারে একটা পরীক্ষা আছে। পরীক্ষার পড়া তৈরি করছি। হঠাৎ তোমার কথা মনে হলো। কাল সকালে আমাদের সুইমিং ক্লাসের কথা তোমার মনে আছে?’
-‘হ্যাঁ আছে ‘
-‘গুড বয়! ‘
- ‘বয়!’
-হাসি ..
-‘হাসতে হাসতে শার্লিন তোমাকে একটা কথা বলি, মন দিয়ে শোন, হেলথ ক্লাবে তুমি কোনো কিছু বলবে না। ওখানকার রেজিস্ট্রেশনের আলাদা কিছু নিয়মকানুন আছে, যার সবই আমি জানি। কাজেই সব ফর্মালিটিজ আমিই সম্পন্ন করব। ট্রেনার আমার পরিচিত, তাকেও আমি সব বলব। তুমি শুধু আমাকে ফলো করবে।’
-‘আমি বুঝতে পেয়েছি ।’
কাল দেখা হবে এ প্রত্যাশা করে শুভরাত্রি বলে ফোন রাখল শার্লিন।
শনিবার সকাল। সজল ঘুম থেকে জেগে দেখে বেলা হয়ে গেছে। জানালার পাশের গাছটায় রোদ এসে লেগেছে। কয়দিন আগেও গাছে পাতা ছিল না। গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে সবুজবর্ণ কচি কচি পাতা যেন বেড়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সকালের মিষ্টি সোনারোদ লুটোপুটি খাচ্ছে পাশের বাসার ছাদে জানালার কার্নিশে। সেই সবুজ, সেই মিষ্টি স্নিগ্ধ আলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে সে ছুটল ম্যানহাটনের পথে। হেলথ ক্লাবের সামনে এসে সে ফোন করল শার্লিনকে। জানাল ৪-৫ মিনিট পথের দূরত্বে সে।
হাসছে শার্লিন! হাসছে ম্যানহাটন! হাসতে হাসতে দুজনে একসঙ্গে হেলথ ক্লাবে! আগের কথামতো কাউন্টারে রেজিস্ট্রেশনের সব ফর্মালিটিজ সম্পন্ন করল সে। ৭৯ ডলারের মাসিক ফি সেটাও ক্রেডিট কার্ডে পরিশোধ করল শার্লিন।
এই প্রথম কোন হেলথ ক্লাবের ভেতরে ঢুকল সজল। ক্লাবের ভেতরটা এত সুন্দর আর পরিপাটি করে সাজানো–গোছানো বাইরে থেকে তা বোঝা যায় না। মেঝেতে দামি টাইলস। অপূর্ব লাইটিং! সামনের ঝাড়বাতিটা দারুণ দৃষ্টিনন্দন! করিডরে বিভিন্ন রকমের পাতাবাহারের গাছ। করিডরের শেষের মাথায় বিশাল সুইমিং পুল। পুলের চারদিকে সাজানো চেয়ার টেবিল। পুলের ভেতরে নীল জল। পুলের ডানপাশে উঁচুতে বসে আছেন এক ট্রেনার। এক পাশে ছোট ছেলে–মেয়েরা সাঁতার শিখেছে। অন্য পাশে কয়েক তরুণ-তরুণী সাঁতার শেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
আমেরিকার সমুদ্র সৈকতে সজল বহুবার গেছে। দেশি-বিদেশি মানুষের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ সাঁতার কেটেছে। একসময় ক্লান্ত শরীর নিয়ে রোদে গা শুকিয়েছে। প্রথম প্রথম এত খোলা-মেলা শরীর দেখে ভীষণ লজ্জা পেয়েছিল সে। সৈকতের দিকে না তাকিয়ে সাগরের জলের দিকে তাকিয়ে থাকত সে। ধীরে ধীরে সমুদ্র সৈকতের ধবধবে ফরসা রমণীর সেই খোলা শরীরগুলো একসময় সহজ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ওর কাছে। অশ্লীলতার কথাটি মন থেকে মুছে ফেলে সে সমুদ্রের ঢেউকে আলিঙ্গন করেছে ।
তখনো কী সে ভেবেছিল, এমনি এক অপরূপ পরিকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশের এক বিলাসবহুল সুইমিং পুলে সাঁতার শেখাতে আসবে। ততক্ষণে পাশের ড্রেসিং রুম থেকে সুইমিং কাস্ট পরে বেরিয়ে এসেছে শার্লিন! সজলের দৃষ্টি আটকে গেল এক মায়াবী জ্যোৎস্না শরীরে! কতক্ষণ আটকে আছে সে জানে না। শার্লিনের কথায় সংবিৎ ফিরল ওর। বলল, এখনো তৈরি হয়নি! এমনি আজ আমাদের দেরি হয়ে গেছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি যাও তৈরি হয়ে আসো।
সজল ড্রেসিং রুম থেকে তাড়াতাড়ি হাফপ্যান্ট ও টি-শার্ট পরে বেরিয়ে এসে দেখে শার্লিন ততক্ষণে পুলের ভেতরে ট্রেনারের সঙ্গে কথা বলছে। কাছে যেতেই শার্লিন পরিচয় করিয়ে দিল। সজল ‘হ্যালো’ বলে হ্যান্ডশেক করল ট্রেনারের সঙ্গে । ট্রেনার বলল,
‘আমি ফ্লোরা।’ ফ্লোরা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, শার্লিন থামিয়ে দিয়ে ফ্লোরার কানে ফিসফিস করে কী যেন বলল! শুনে হাসল ফ্লোরা। সজলের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি তো সাঁতার জানো তাই না?’
সজল সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।
ফ্লোরা বলল, ‘আজ থেকে আমার কাজ একটু হালকা হলো। এখন থেকে তুমি শার্লিনকে সাঁতার শেখাবে। আমি মাঝে মাঝে এসে দেখিয়ে দেব।’ আবারও সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল সে।
হাসছে শার্লিন! হাসছে সুইমিং পুলের নীল জল! সজল সেই জলে খুব দ্রুত এক সাঁতার দিয়ে ফিরে এল শার্লিনের কাছে। মুগ্ধ হয়ে শার্লিন বলল, ‘তুমি এত দ্রুত সাঁতরাতে পারো সজল!’ নীল জলপরির চোখে চোখ রেখে সে বলল, ‘তুমিও একদিন আমারই মতো পারবে। নাও শুরু করো।’
শার্লিন সাঁতারের অনেকটাই রপ্ত করেছে। আর অল্প কয়দিন হলেই সে পুরোপুরি সাঁতরাতে পারবে। সাঁতারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে সজল। কখনো শার্লিনের হাত ধরে, কখনোবা তাকে পানির ভেতরে সম্পূর্ণ লিফট করে সাঁতার শেখানোর গভীর চেষ্টা করছে সে। ওর সিরিয়াস হয়ে ওঠা দেখে হাসছে শার্লিন।
হাসতে হাসতে কখনো লাল হচ্ছে বিদেশিনীর মুখ! মনে হয় যেন জলপদ্ম! বিদেশিনীর সেই লাল হয়ে যাওয়া শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে হাসছে সুইমিং পুলের নীল জল! সেই নীল জলে সজলও শিহরিত হচ্ছে! হচ্ছে রোমাঞ্চিত বারবার!
সাঁতার শিখতে শিখতে একসময় একবুক জলে এসে দাঁড়িয়ে যায় ওরা। মুখোমুখি শার্লিন-সজল! পলকহীন প্রসন্ন দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে দুজন দুজনার দিকে! তখনো হাঁপাচ্ছে ওরা। দ্রুত নিশ্বাসের ওঠানামা। শার্লিন আরও একটু কাছে সরে এসে শক্ত করে হাত ধরল সজলের। সজলও হাত ধরে পলকহীন তাকিয়ে আছে জলপরির দিকে।
সুইমিং পুলের নীল জলে তখন আগুন জ্বলে! সেই আগুনে পুড়ে যায় দুটি মানব-মানবী! পুড়তে পুড়তে হঠাৎ কেঁপে কেঁপে ওঠে ম্যাগনেটিক ম্যানহাটন!
এ যেন ওদের বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত কাঁপন!!